ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

প্রাথমিক চিকিৎসায় মারাত্মক যত ভুল (১ম পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২৩ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৪:৩৮, ২৩ জানুয়ারি ২০২১
প্রাথমিক চিকিৎসায় মারাত্মক যত ভুল (১ম পর্ব)

কিছু সমস্যার ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিঃসন্দেহে মারাত্মক পরিণতি প্রতিরোধে অবদান রাখে। এক্ষেত্রে একটি প্রধান শর্ত হলো, সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসা। কারণ প্রাথমিক চিকিৎসায় ভুল করলে সমস্যা না কমে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে অথবা জীবন সংশয়ে পড়তে পারে। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি এড়াতে প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানার্জনের প্রয়োজন রয়েছে। এখানে কিছু ভুল প্রাথমিক চিকিৎসার সংশোধনী দেয়া হলো।

* নাকের রক্তক্ষরণে মাথাকে পেছনে হেলানো: প্রাথমিক চিকিৎসায় একটি বহুল প্রচলিত ভুল হলো, নাক থেকে রক্ত ঝরলে মাথাকে পেছনে হেলানো। কিন্তু ইউনিভার্সিটি অব মিসৌরি হেলথ কেয়ারের ইমার্জেন্সি ফিজিশিয়ান ক্রিস্টোফার স্যাম্পসনের মতে, কখনোই এমনটা করা উচিত নয়। তিনি জানান, ‘মাথাকে পেছনে হেলালে নাকের রক্ত গলায় চলে আসতে পারে, রক্তের ক্ষরণ বন্ধ করা কঠিন হতে পারে ও এমনকি রক্তবমিও হতে পারে।’ এর পরিবর্তে মাথাকে সামনে ঝুঁকিয়ে আঙুল দিয়ে নাকের ব্রিজ চেপে ধরুন। নাকের অধিকাংশ রক্তক্ষরণই (সাধারণত অ্যালার্জি ও শুষ্ক আবহাওয়া দ্বারা সৃষ্ট রক্তক্ষরণ) ১০ মিনিটের মধ্যে থেমে যায়। এসময়ের মধ্যে রক্তের ক্ষরণ বন্ধ না হলে নাকে তুলা গুঁজে জরুরি বিভাগে যেতে হবে, পরামর্শ দেন কলোরাডোর স্টিমবোট ইমার্জেন্সি সেন্টারের ফাউন্ডার ও ফিজিশিয়ান জেসি সান্ডু।

* পোড়া স্থানে মাখন বা বরফ দেয়া: অনেকে পোড়া স্থানে মাখন বা বরফ ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন। কিন্তু এটা হলো বহুদিন ধরে প্রচলিত একটি ভুল প্রাথমিক চিকিৎসা। আবার কেউ কেউ পোড়া ত্বকে টুথপেস্ট লাগাতে পরামর্শ দেন। কিন্তু ঝুঁকি রয়েছে বলে এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। নিউ ইয়র্কের পিএম পিডিয়াট্রিকসের মেডিক্যাল অ্যাডভাইজার ক্রিস্টিনা জোনস বলেন, ‘মাখন অথবা টুথপেস্ট সঠিকভাবে প্রয়োগ করলেও পোড়া স্থানে তাপ আটকে থাকতে পারে, যা অবস্থাকে আরো খারাপ করতে পারে। বরফ দিয়ে টিস্যুকে হিমায়িত করলেও ক্ষতি বাড়তে পারে, কারণ এটা ত্বককে খুব ঠান্ডা করতে পারে। কিন্তু পোড়া স্থানে প্রাথমিক চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো, তাপমাত্রাকে স্বাভাবিকে নিয়ে আসা।’ তাই তিনি প্রবাহমান ঠান্ডা পানির (বরফ পানি নয়) নিচে পোড়া স্থানকে কিছুসময় রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন। এরপর গজের মতো পরিষ্কার ও শুষ্ক ড্রেসিংয়ে ঢেকে মেডিক্যাল কেয়ার নিতে যেতে হবে।

* যথেষ্ট সময় নিয়ে পোড়া ত্বকের প্রাথমিক চিকিৎসা না করা: ইতোমধ্যে আপনি জেনেছেন যে, দগ্ধ ত্বক প্রশমিত করার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে এটিকে পানির নিচে রাখা। কিন্তু কতক্ষণ রাখবেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সেকেন্ড বা কয়েক মিনিট যথেষ্ট নয়। এ প্রসঙ্গে আমেরিকান রেড ক্রসের চিকিৎসক জেফ্রে পেলেগ্রিনো বলেন, ‘পোড়া ত্বককে কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ মিনিট প্রবাহমান পানির নিচে রাখতে হবে। পোড়ার তাপ ত্বকের গভীরে গিয়ে টিস্যুকে ধ্বংস করতে পারে। তাই পোড়া স্থানকে যথেষ্ট সময় পানির প্রবাহে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।’ সুতরাং দুর্ঘটনাবশত কারো ত্বক পুড়ে গেলে অতিরিক্ত ক্ষতি এড়াতে ১০ থেকে ২০ মিনিট প্রবাহমান পানির নিচে রাখতে পরামর্শ দিতে পারেন।

* গুরুতর আহত ব্যক্তিকে হাঁটানো: আপনার চোখের সামনে কোনো গাড়ি দুর্ঘটনা অথবা স্পোর্টস ইনজুরি ঘটলে দুর্ঘটনায় সংশ্লিষ্ট লোকেরা ঠিক আছে কিনা দেখতে তাদেরকে হাঁটানোর চেষ্টা করানো উচিত নয়। এটা চিকিৎসকদের পরামর্শ। ডা. সান্ডু বলেন, ‘দুর্ঘটনায় কবলিত মানুষদের মেরুদণ্ডে মারাত্মক আঘাত হতে পারে। এ অবস্থায় নড়াচড়া করলে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। অথবা নড়াচড়ার কারণে স্থায়ী স্নায়ুতান্ত্রিক ক্ষতি বা প্যারালাইসিস হতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দুর্ঘটনায় পতিত মানুষদের একমাত্র তখন বের করে আনার কথা ভাবতে পারেন, যদি সেখানে অগ্ন্যুৎপাত বা বিস্ফোরণ অথবা ভবন ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা থাকে।’ কোনো দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করলে জরুরি নম্বরে কল দিন। মেরুদণ্ড বা হাড়ে আঘাতের মতো বিষয়গুলো ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল টেকনিশিয়ানরাই তুলনামূলক নিরাপদে দেখভাল করতে পারবেন।

* ক্ষতস্থানে থুতু লাগানো: আপনি হয়তো শুনেছেন যে ক্ষতস্থানে থুতু/লালা ছিটালে জীবাণু ধ্বংস হয়। কিন্তু এটা হলো সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। শরীরের কোথাও কেটে গেলে ভুলেও সেখানে থুতু লাগাবেন না। নিউ ইয়র্কে অবস্থিত লিনক্স হিল হসপিটালের ইমার্জেন্সি ফিজিশিয়ান রবার্ট গ্লেটার বলেন, ‘মুখে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। তাই ক্ষতে থুতু দিলে সহজেই ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। এছাড়া নদী বা খালের পানিতে ক্ষতস্থান ধুবেন না, কারণ প্যারাসাইটিক বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।’ ঘরে থাকলে ফুটানো ঠান্ডা পানি এবং বাইরে অবস্থানকালে স্টেরাইল স্যালাইন ওয়াটার দিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে পারেন। ডা. গ্লেটার ভ্রমণের সময় ফার্স্ট এইড কিটে স্টেরাইল স্যালাইন রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন, কারণ কখন কোথায় কিভাবে কেটে যায় বলা যায় না।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

 

ঢাকা/ফিরোজ                                    

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়