ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

করোনার সংক্রমণে বুকব্যথা কি উদ্বেগজনক?

এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫২, ৮ মে ২০২১   আপডেট: ০১:১১, ৯ মে ২০২১
করোনার সংক্রমণে বুকব্যথা কি উদ্বেগজনক?

সময় যতই যাচ্ছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট উপসর্গ বা লক্ষণের তালিকা আরো দীর্ঘ হচ্ছে। করোনাভাইরাসের মূল ধরনে সৃষ্ট সংক্রমণে বুকব্যথার অভিযোগ উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু যারা ভাইরাসটির পরিবর্তিত ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের অনেকেই বুকব্যথারও কথা বলেছেন। ভাইরাসটির নতুন ধরনে সংক্রমিত রোগীদের মধ্যে কিছু উপসর্গের ভয়াবহতা বেড়েছে, যেমন- শ্বাসকষ্ট। তবে কি বুকব্যথাও সেই পথে যেতে পারে? 

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চলমান মহামারিতে যারা মৃদু সংক্রমণে ভুগছেন তাদের একটা অংশও বুকব্যথার অভিযোগ করেছেন। চিকিৎসকেরা নিশ্চিত নন যে, করোনাভাইরাসই প্রত্যক্ষভাবে বুকব্যথা সৃষ্টি করছে, নাকি বহুবিধ ফ্যাক্টর দ্বারা উদ্দীপ্ত হচ্ছে? বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা কি আসলেই খুব দুশ্চিন্তা করার মতো উপসর্গ? করোনার সংক্রমণে বুকব্যথার কারণই বা কী? এখানে সংক্রমণটিতে বুকে ব্যথা হওয়ার সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরা হলো।

* তীব্র কাশি: করোনাভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণ বা কোভিড-১৯ এর একটি অত্যধিক প্রচলিত উপসর্গ হলো শুষ্ক কাশি।কাশির মাত্রা রোগীভেদে ভিন্ন হতে পারে। কেউ কেউ হালকা কাশলেও কারো কারো তীব্র কাশি হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, কোভিডের কাশি বুকেও প্রভাব ফেলতে পারে। কাশির ধারাবাহিকতা, স্থায়িত্ব ও তীব্রতায় বুকব্যথা প্ররোচিত হতে পারে। তীব্র কাশি শুধু শ্বাস-প্রশ্বাসকে কঠিন করে না, এতে পাঁজর বা বুক গহ্বর সংশ্লিষ্ট মাংসপেশিও ছিঁড়ে যেতে পারে। এর ফলে বুকে অসহনীয় অস্বস্তি হতে পারে।

* নিউমোনিয়া: ফ্লু সংক্রমণের মতো করোনার সংক্রমণেও নিউমোনিয়া বিকশিত হতে পারে। কারো কারো কোভিডের নিউমোনিয়া এতটাই মারাত্মক হতে পারে যে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। নিউমোনিয়া এমন একটি জটিলতা, যা ফুসফুসের ভেতরস্থ বায়ুথলিতে প্রদাহ হলে হয়। এই জটিলতায় ফুসফুসে তরল জমে যায়, যা বুকব্যথার মতো উপসর্গকে উদ্দীপ্ত করতে পারে। বুকের ব্যথা বাড়তে থাকলে (বিশেষ করে রাতে তীব্রতর হলে) চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করা উচিত নয়।

* ফুসফুসে প্রদাহ: করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ফুসফুসে সংক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। ৩০ শতাংশেরও বেশি কোভিড রোগীর উপসর্গ বা লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই ফুসফুসে কিছু না কিছু প্রদাহ হয়। চিকিৎসকদের মতে, ফুসফুসে অল্পস্বল্প প্রদাহ হলেও বুক গহ্বরে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে বুকের এক্স রে বা সিটি স্ক্যান করাতে পারেন।

* হার্টে সমস্যা: অনেকের হার্টেই এমন সমস্যা থাকতে পারে যা এখনো শনাক্ত হয়নি। আমরা জানি যে, হার্টে রোগ হলে প্রায়ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। করোনার সংক্রমণে হার্টের অন্তর্নিহিত সমস্যার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। অতএব এটাও বুকে ব্যথার কারণ হতে পারে। গবেষণা বলছে যে, শরীরে দ্রুত ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি হলে কেবল মায়ালজিয়া (শরীর ব্যথা) ও মায়োকার্ডাইটিস (হার্টের পেশিতে প্রদাহ) নয়, হার্টে বিভিন্ন সমস্যাও হতে পারে।

* ফুসফুসে রক্ত জমাট: গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার সংক্রমণে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত জমাট বেধে যায়। ফুসফুসও এর ব্যতিক্রম নয়। চিকিৎসকদের কাছে ফুসফুসে রক্ত জমাট বাধার সমস্যাটি পালমোনারি এমবোলিজম হিসেবে পরিচিত।এই সমস্যাতে রক্ত চলাচল কমে যায় এবং রক্তে অক্সিজেনের অভাব হয়, যার ফলে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যথাসময়ে পালমোনারি এমবোলিজমের চিকিৎসা না করলে মৃত্যুও হতে পারে। এই সমস্যার একটি প্রধান উপসর্গ হলো বুকে ব্যথা। এই ব্যথা বাহু, চোয়াল, কাঁধ ও ঘাড়েও ছড়াতে পারে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়