ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

করোনা ও অক্সিজেন সম্পর্কে পাঁচ প্রশ্নের উত্তর

এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ১২ মে ২০২১   আপডেট: ১১:৫৬, ১২ মে ২০২১
করোনা ও অক্সিজেন সম্পর্কে পাঁচ প্রশ্নের উত্তর

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তথা কোভিড-১৯ এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটি প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো অক্সিজেন। সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ রোগীরা যথাসময়ে অক্সিজেন সাপোর্ট না পেলে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। যা নিয়ে মানুষজনের মনে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা কাজ করছে। 

তবে এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান আমাদের দুশ্চিন্তা কমাতে পারে। ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত হলি ফ্যামিলি হসপিটালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ডিপার্টমেন্টের প্রধান সুমিত রায় কোভিড ও অক্সিজেন সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তা এখানে উপস্থাপন করা হলো।

* অক্সিজেন সাপোর্ট কখন প্রয়োজন?

সাধারণত যেসব রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ শতাংশের নিচে নেমে যায় তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন বা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের অক্সিজেন লাগবে কিনা এটা যাচাই করতে একটি সহজ পরীক্ষা করা যায়- ৬ মিনিটস ওয়াক টেস্ট। এই পরীক্ষা করতে ৬ মিনিট হাঁটতে হবে। হাঁটার আগে ও পরে অক্সিজেনের মাত্রা মাপতে হবে। যদি কারো ছয় মিনিট হাঁটতে শ্বাসকষ্ট হয়, শুয়ে পড়তে হয় অথবা হাঁটা শেষ করতে অসমর্থ হয় তাহলে এটা একটি লক্ষণ যে তার অক্সিজেন সাপোর্ট লাগবে এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এছাড়া ছয় মিনিট হাঁটার ফলে অক্সিজেনের মাত্রা ৩ শতাংশের বেশি কমে গেলে এটা একটি সতর্ককারী লক্ষণ যে ফুসফুসের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই পরীক্ষায় অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৩ শতাংশের নিচে নেমে গেলে বুঝে নিতে পারেন যে সতর্ক হওয়ার সময় চলে এসেছে।

* পেটে ভর দিয়ে শুলে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ে?

শ্বাসকষ্টের সময় অ্যাওয়েক প্রোনিং সুফল বয়ে আনতে পারে। এটা থেকে অনেক রোগীই উপকৃত হয়েছেন। অ্যাওয়েক প্রোনিং করলে, অর্থাৎ উপুড় হয়ে শুলে ফুসফুসে অক্সিজেন ও রক্তের প্রবাহ বাড়ে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট কমে যায়।চিকিৎসকেরা প্রত্যক্ষ করেছেন যে, প্রোনিং করানোতে রোগীর শরীরে কোভিড জনিত হাইপোক্সিয়া প্রশমিত হয়েছে।শরীরের কলাসমূহ অক্সিজেনের অভাবে ভুগলে তাকে হাইপোক্সিয়া বলা হয়। এটা খুবই বিপজ্জনক অবস্থা। হাইপোক্সিয়ার যেসব রোগীকে ভেন্টিলেটর দেয়া হয়েছিল তাদেরকে উপুড় করে শোয়ানোতে বেঁচে যাওয়ার হার বেড়েছে।

*  কোভিড রোগীকে কতটা অক্সিজেন দিতে হবে? 

জীবন রক্ষায় কেউ কেউ ৫ বা ১০ লিটারের অক্সিজেন সিলিন্ডার বাসায় মজুদ করছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে প্রত্যেক কোভিড রোগীই ভিন্ন। একেক জনের অক্সিজনের চাহিদা একেক রকম হতে পারে। তাই অক্সিজেন ফ্লো এর গড় নির্ণয়ের মাধ্যমে কোনো রোগীর চিকিৎসা করাটা ঝুঁকিমুক্ত নয়। কার কতটুকু অক্সিজেন লাগবে সে অনুসারে চিকিৎসা করতে হবে। যদি কোনো রোগীর প্রতি মিনিটে ১ থেকে ২ লিটার অক্সিজেন লাগে, তাহলে তাকে সর্বোচ্চ ৩-৪ লিটারের আওতায় আনতে হবে। যদি বুঝতে পারেন যে অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন আছে, তাহলে ঘরে বসে থাকা উচিত নয়। এসময় চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা জরুরি, কারণ কেবলমাত্র অক্সিজেনই জীবন বাঁচাতে পারবে না। এছাড়া প্রত্যেক রোগীর প্রয়োজন অনুসারেই অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়, যেটা বাসায় চিকিৎসক ছাড়া সম্ভব নয়। রোগীকে আন্দাজে অক্সিজেন দিলে মারাত্মক ক্ষতি আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া রোগীর কখন কোন ওষুধ প্রয়োজন সেটাও পরিবারের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।

* উপসর্গ ছাড়াই অক্সিজনের মাত্রা কমে গেলে তা কি কোভিডের লক্ষণ?

কেবল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নয়, অন্যান্য ফুসফুসীয় সংক্রমণেও শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নামতে পারে। তীব্র ফ্লু সংক্রমণ, তীব্র নিউমোনিয়া ও অন্যান্য ভাইরাস সংক্রমণে অক্সিজেনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে। কিন্তু যেহেতু এখন করোনাভাইরাসের মহামারি চলছে, তাই এসময় শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে কোভিডকেই প্রথমে সন্দেহ করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ শতাংশের নিচে হলে তা একটি সতর্ককারী লক্ষণ।

* অক্সিজেন কনসেনট্রেটর কাদের জন্য উপকারী?

অক্সিজেন কনসেনট্রেটর শুধু সেসব রোগীদের জন্য যাদের সংক্রমণটা মডারেট এবং মাত্র ২-৩ লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। অক্সিজেনের চাহিদা আরো বাড়লে অথবা অক্সিজেন সরবরাহ সত্ত্বেও শ্বাসকষ্টে ভুগলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কেবলমাত্র অক্সিজেন দিলে ও স্যাচুরেশন দেখলেই যথেষ্ট নয়, সুস্থ হওয়ার জন্য আরো কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে।একারণে একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়