ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

টিকা নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত: যা জানা প্রয়োজন

এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ১৫ মে ২০২১   আপডেট: ১২:১৪, ১৫ মে ২০২১
টিকা নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত: যা জানা প্রয়োজন

সম্প্রতি আমেরিকার প্রফেশনাল বেসবল টিম নিউ ইয়র্ক ইয়াঙ্কির আটজন সদস্য সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন নেয়ার পরও করোনা টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন। তারা সকলেই জনসন অ্যান্ড জনসন ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কেবল একজনেরই কোভিড-১৯ এর কিছু উপসর্গ ছিল। নিয়মিত টেস্টে এসব পজিটিভ কেস শনাক্ত হয়েছে।

আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) জানিয়েছে, কোভিড-১৯ এর মতো কোনো রোগ থেকে সুরক্ষা পেতে সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন নেয়ার পরও কেউ ওই রোগে আক্রান্ত হলে তাকে ব্রেকথ্রো কেস বলে। সিডিসির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে ব্রেকথ্রো কেস বিবেচনা করার জন্য কোনো ব্যক্তির শেষ শট নেয়ার পর কমপক্ষে দুই সপ্তাহ পার হতে হবে।

সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন না নিয়ে সংক্রমিত হলে এটাকে ব্রেকথ্রো কেস বলা হয় না। ব্রেকথ্রো কেসের প্রধান শর্ত হলো, সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন নিতে হবে। এমনটা জানান ভেন্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম স্ক্যাফনার।

ব্রেকথ্রো কেস পাওয়া যাচ্ছে কেন?

সিডিসির মতে, পরিবর্তনশীল যেকোনো ভাইরাসের ক্ষেত্রে ব্রেকথ্রো কেস ঘটতে পারে এবং এটাকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখার কিছু নেই। কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী ভাইরাস যেহেতু সময়ের আবর্তনে নিজের রূপ পাল্টাচ্ছে, তাই এসময়ে ব্রেকথ্রো কেস অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সকল ডোজ গ্রহণ করার পরও কেউ কেউ সংক্রমিত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, কোনো ভ্যাকসিনই নিখুঁত নয়।

ডা. স্ক্যাফনার বলেন, ‘করোনার যেসব ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে ওগুলোর সর্বোচ্চ কার্যকারিতা ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত, কোনোটাই ১০০ শতাংশ কার্যকর নয়। তাই চলতি মহামারিতে ব্রেকথ্রো কেস শনাক্তকরণ একটি অনুমিত বিষয়।’ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের উপাত্ত অনুসারে- ফাইজার বায়োএনটেক ভ্যাকসিন উপসর্গযুক্ত কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশ কার্যকর, মডার্না ভ্যাকসিন ৯৪.১ শতাংশ কার্যকর এবং জনসন অ্যান্ড জনসন ভ্যাকসিন ৬৬ শতাংশ কার্যকর।

কার্যকারিতার শতকরা হার দেখে যেকেউ সহজে ধারণা করতে পারেন যে, জনসন অ্যান্ড জনসন ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে ব্রেকথ্রো কেসের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু জনস হপকিনস সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির সিনিয়র স্কলার আমেশ আদলজার মতে,, এটা অবধারিত সত্য নয়। তিনি বলেন, ‘কিছু ভ্যাকসিনের শতকরা হার দেখে কোনো একটা ভ্যাকসিনকে ব্রেকথ্রো কেসের জন্য উচ্চ ঝুঁকিময় বলা কঠিন, কারণ সকল ভ্যাকসিনের গবেষণা একই সময়ে হয়নি অথবা করোনাভাইরাসের একই ভ্যারিয়েন্টের ওপর একযোগে গবেষণা হয়নি।’ সিডিসির মতে, সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন নেয়ার পরও সংক্রমণের আরেকটি কারণ হলো, কিছু ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক পরিবর্তন।

ব্রেকথ্রো কেস কতটা উদ্বেগজনক?

এই বিষয়ে ধারণা পেতে সিডিসির উপাত্ত দেখতে পারেন- ৯৫ মিলিয়ন আমেরিকান সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন গ্রহণের পর চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৯২৪৫ ব্রেকথ্রো কেস শনাক্ত হয়েছে। এসব ব্রেকথ্রো কেসের ২৭ শতাংশ সংক্রমণই ছিল উপসর্গবিহীন, অর্থাৎ রোগীদের লক্ষণ ছিল না। সিডিসির প্রতিবেদনে আরো জানা গেছে, ৯ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে এবং প্রায় ১ শতাংশের (১৩২ জন) মৃত্যু হয়েছে।

ব্রেকথ্রো কেসের চিকিৎসা কী?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ জনিত ব্রেকথ্রো কেসের চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। এ প্রসঙ্গে ডা. স্ক্যাফনার বলেন, ‘যারা সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন নেয়ার পরও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন তাদের অনেকেরই উপসর্গ বা লক্ষণ নেই, আবার অনেকেরই উপসর্গ প্রকাশ পেলেও তা খুবই মৃদু। এর মানে হলো, ভ্যাকসিন কাজ করছে।’ তিনি আরো জানান, ‘যদি কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট ব্রেকথ্রো কেসের কোনো রোগী তীব্র অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে তার চিকিৎসা তেমনই হবে যেমনটা চিকিৎসা করা হয় ভ্যাকসিন না নেয়া রোগীকে।’

তাহলে কি ভ্যাকসিন নেবেন না?

যেহেতু ভ্যাকসিন গ্রহণের পরও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, তাই অনেকেরই মনে এমন প্রশ্ন আসতে পারে- ভ্যাকসিন নিয়েই যখন সুরক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে ভ্যাকসিন নিয়েই বা কী লাভ? কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জানান যে, ভ্যাকসিন নেয়াতে লাভ আছে। ডা. আদলজা বলেন, ‘ভ্যাকসিনের লক্ষ্য তিনটি- মারাত্মক সংক্রমণ প্রতিরোধ করা (অর্থাৎ রোগকে দুর্বল করে রাখা), হাসপাতালে ভর্তি এড়ানো এবং মৃত্যুহার কমানো। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন এসব লক্ষ্য অর্জনে অনেকটা সফল হয়েছে।’ তাই করোনার সংক্রমণকে দুর্বল করতে বা জটিল পরিণতির ঝুঁকি কমাতে ভ্যাকসিন গ্রহণের কথা বিবেচনা করতে পারেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়