ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনায় প্রাণঘাতী সাইটোকিন স্টর্ম আসলে কী?

এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২১, ১৯ মে ২০২১   আপডেট: ০৬:১১, ২০ মে ২০২১
করোনায় প্রাণঘাতী সাইটোকিন স্টর্ম আসলে কী?

সাধারণত বেশি বয়স কিংবা শরীরে বিদ্যমান অন্যকোনো রোগ কোভিড রোগীদের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু চিকিৎসকেরা এমনও অল্প বয়সি কোভিড রোগী দেখেছেন যাদের অন্যকোনো রোগ না থাকা সত্ত্বেও সংক্রমণ গুরুতর পর্যায়ে চলে গেছে এবং কারো কারো মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, এই অদ্ভুত বিষয়টির কারণ হতে পারে সাইটোকিন স্টর্ম।

নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তিকৃত প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কোভিড রোগীর ইমিউন সিস্টেম অস্বাভাবিক আচরণ করেছে। কিছুক্ষেত্রে সাইটোকিন স্টর্ম হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি করে মৃত্যু ঘটিয়েছে। টেম্পল ইউনিভার্সিটির সেকশন অব রিউম্যাটলজির প্রধান অধ্যাপক রবার্টো ক্যারিশিও বলেন, ‘আমরা সাইটোকিন স্টর্মকে পূর্বানুমান করতে পারলে দ্রুত চিকিৎসা করতে পারব, যার ফলে মৃত্যুহার কমে যেতে পারে।’

সাইটোকিন স্টর্ম কি?

সাইটোকিন স্টর্মকে বুঝতে হলে আগে আমাদেরকে সাইটোকিন সম্পর্কে জানতে হবে। সাইটোকিন হলো এক ধরনের প্রোটিন (গ্লাইকোপ্রোটিন) যা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কোষ দ্বারা উৎপন্ন হয়। এসব প্রোটিন শরীরের অনেক কাজে সাহায্য করে, যেমন- সংক্রমণ দমন ও প্রদাহমূলক প্রতিক্রিয়া। সাইটোকিনকে ইমিউন সিস্টেমের নীরব নায়ক বলতে পারেন, যেটা প্রায়সময় জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিক্রিয়াকারী হিসেবে কাজ করে। সাইটোকিন শরীরের কোষসমূহকে জানান দেয় যে শত্রু ঢুকে পড়েছে, মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হও।

কিন্তু খুব বেশি সাইটোকিন উৎপন্ন হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এটি এমন একটি প্রতিক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করতে পারে, যা প্রাণঘাতী হতে পারে। যখন শরীর অত্যধিক সাইটোকিন উৎপাদন করে তখন এ ঘটনাকে সাইটোকিন স্টর্ম বলা হয়। গবেষকরা জানান, সাইটোকিন স্টর্মের সময় শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরিবর্তে নিজের কোষ ও টিস্যুকে আক্রমণ করে। অনেক কোভিড রোগীর রক্তপ্রবাহে উচ্চমাত্রায় সাইটোকিন পাওয়া গেছে।

কোষ নিজেকে হত্যা করে কেন?

করোনাভাইরাস মানুষের কোনো কোষকে সংক্রমিত করার পর খুব দ্রুত প্রতিলিপি তৈরি করে, যা অল্পসময়ে শরীরকে বিপর্যস্ত করতে পারে। সংক্রমিত কোষ বুঝতে পারে যে শরীরের ভেতর রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ঢুকে পড়েছে, তাই শরীরের অন্যান্য কোষে জীবাণুর ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে কোষটি নিজেকে হত্যা করে। এভাবে অনেক কোষ একসঙ্গে আত্মোৎসর্গ করলে প্রচুর টিস্যু মারা যেতে পারে- যা ফুসফুসের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এটা নিউমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি ফুসফুস অক্সিজেনের অভাবেও ভুগতে পারে।

আটলান্টায় অবস্থিত জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট ও ইমিউনোলজিস্ট মুকেশ কুমার ‘সাধারণত সাইটোকিন স্টর্মের কারণে রোগীর অধিকাংশ কোষই মারা যায়। এটি ফুসফুসকে এত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে যে আর নিরাময় হতে পারে না, ফলে রোগী মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়।’ এটা ফুসফুসে শুরু হলেও শিগগির অন্যান্য অঙ্গেরও ক্ষতি হয়ে থাকে। এছাড়া প্রাণনাশক থ্রম্বোসিসের (রক্ত জমাট) ঝুঁকিও রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সাইটোকিন স্টর্মের কারণে অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম (এআরডিএস), থ্রম্বোসিস ও মাল্টি অর্গান ফেইলিউরের ঝুঁকি উচ্চ হয়।

সাইটোকিন স্টর্ম প্রতিরোধ করা যায়?

চিকিৎসকেরা রোগীদেরকে এমনকিছু ওষুধ লিখে দেন যা শরীর কর্তৃক নিজেকে আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে। কিছু স্বাস্থ্য সমস্যায় জীবনপ্রদীপ নিভে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এমনক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা এসব ওষুধ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। হয়তো এ ধরনের ওষুধ অনেক কোভিড রোগীর জীবনও বাঁচাতে পারবে। কিন্তু এসব ওষুধের ব্যবহার এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং এগুলো কিভাবে ব্যবহার করা হবে তার সপক্ষে এখনো দৃঢ় বৈজ্ঞানিক সমর্থন পাওয়া যায়নি।

কিছু চিকিৎসক সাইটোকিন স্টর্ম জনিত জটিলতা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগস ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছেন, কিন্তু এটা আসলেই উপকারে আসবে কিনা তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাছাড়া এসব ওষুধ ব্যবহারে কোভিড রোগীর ঝুঁকিও বাড়তে পারে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়