ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দুই কোম্পানির করোনার টিকা কি নেওয়া যাবে?

এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫২, ১ জুন ২০২১   আপডেট: ১২:৫৬, ১ জুন ২০২১
দুই কোম্পানির করোনার টিকা কি নেওয়া যাবে?

করোনাভাইরাস যেমন নিত্যনতুন রূপ নিচ্ছে, তেমনি বাড়ছে এর সংক্রমণ। সুরক্ষিত থাকতে একইসঙ্গে বাড়ছে টিকার চাহিদা। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা হিমশিম খাচ্ছেন। এখন প্রশ্ন হলো- একটি কোম্পানির করোনার টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর নির্ধারিত সময়ে অন্য কোম্পানির টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে কিনা? উদাহরণস্বরূপ, অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ নিয়ে পরে ফাইজারের ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে কি?

এই প্রশ্নের উত্তর জানতে গবেষণা চলমান। সম্প্রতি এ বিষয়ে স্পেন ও যুক্তরাজ্যের গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। ফল আশাপ্রদ এবং ধারণা পাওয়া গেছে, একটি কোম্পানির দুটি ডোজের তুলনায় পৃথক কোম্পানির দুটি ডোজ শরীরে বেশি অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করতে সক্ষম। ইতোমধ্যে কিছু দেশে মিশ্র টিকার (দুটি ভিন্ন কোম্পানির টিকা) প্রয়োগ শুরু হয়েছে। গবেষকরা মনে করছেন, মিশ্র টিকা নিলে ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা বাড়বে। 

মিশ্র টিকার উপকারিতা

একটি টিকার ঘাটতি হলে পরবর্তী যোগানের অপেক্ষা না করে নির্ধারিত সময়ে আরেকটি কোম্পানির টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখা যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা। তারা বলছেন, চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য রক্ষার্থে মিশ্র টিকা বিবেচনায় আনা যেতে পারে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সব টিকার কার্যকারিতা সমান নয় এবং একটি ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে উচ্চ কার্যকর টিকা আরেকটি ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কম কার্যকর হতে পারে। তাই কোনো একটি টিকা করোনাভাইরাসের কোনো ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কম কার্যকর হলে যারা ওই টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন তারা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অন্য কোম্পানির আরো কার্যকর টিকা গ্রহণ করতে পারেন।

টিকার গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতেও মিশ্র টিকা সহায়ক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ একজন একটি টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণে রক্ত জমাটবদ্ধতা বা রক্তক্ষরণের মতো বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগলে তিনি দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অন্য কোম্পানির টিকা নেয়ার কথা ভাবতে পারেন। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের খুব বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রক্ত জমাটবদ্ধতা এড়াতে কিছু দেশে অন্য টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ হচ্ছে। জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন, নরওয়ে এবং ডেনমার্কে মিশ্র টিকার কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

মিশ্র টিকা কি নিরাপদ ও কার্যকর?

যুক্তরাজ্য মিশ্র টিকা নিয়ে যে গবেষণা করেছে কিছুদিন আগে ল্যানসেটে সেটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ৮৩০ জনকে প্রথম ডোজ হিসেবে হয়তো ফাইজার, নয়তো অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তারপর দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে বিকল্প টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। 

দেখা গেছে, যাদের মিশ্র টিকা দেওয়া হয়েছে তাদের দ্বিতীয় ডোজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (যেমন: শীত শীত অনুভূতি, ক্লান্তি, জ্বর, মাথাব্যথা, জয়েন্ট ব্যথা, পেশী ব্যথা বা শরীর ব্যথা ও ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা) মৃদু থেকে মধ্যম মাত্রায় ছিল। এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশিক্ষণ ছিল না এবং উদ্বেগজনক ঝুঁকিও পরিলক্ষিত হয়নি। গবেষকরা পরিমার্জিত গবেষণায় প্যারাসিটামল ব্যবহারে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাত্রা কমানো যায় কিনা দেখছেন।

স্পেনে পরিচালিত অনুরূপ একটি গবেষণায়ও মিশ্র টিকাদানে দ্বিতীয় ডোজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মৃদু থেকে পরিমিত ছিল এবং এর স্থায়িত্ব ছিল দুই থেকে তিন দিন। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার লি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান, অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজের পর ফাইজারের দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ নিরাপদ ও কার্যকর।

স্পেনের গবেষণায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজের পর ফাইজারের দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগের ১৪ দিন পর শরীরে উচ্চসংখ্যক অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। ল্যাব টেস্টে জানা গেছে, এসব অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাসকে শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে পারে। প্রাথমিক গবেষণা উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজের পর ফাইজারের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন তাদের অ্যান্টিবডি রেসপন্স সেসব লোকের তুলনায় শক্তিশালী যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন।

যদিও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মিশ্র টিকা কতটুকু কার্যকর তা সুনিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিক গবেষণার দুটি ফল গবেষকদেরকে আশা যুগিয়েছে। তারা বলছেন, কারো ক্ষেত্রে মিশ্র টিকা একটি টিকার দুটি ডোজের সমান কার্যকর ইমিউন রেসপন্স সৃষ্টি করতে পারে এবং কারো ক্ষেত্রে এই রেসপন্স আরো কার্যকর হতে পারে। অর্থাৎ কোভিড প্রতিরোধে মিশ্র টিকা একক টিকার চেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেই তাদের বিশ্বাস। 

ফিরোজ/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়