ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনার ডিএনএ টিকা কতটা কার্যকর?

আহমেদ শরীফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৫, ২৩ আগস্ট ২০২১  
করোনার ডিএনএ টিকা কতটা কার্যকর?

জরুরিভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য বিশ্বে সর্বপ্রথম ডিএনএ ভিত্তিক করোনাভাইরাসের টিকার অনুমোদন দিয়েছে ভারত। ‘জাইকোভ-ডি’ নামক এই টিকা তৈরি করেছে ভারতের মাল্টিন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ক্যাডিলা হেলথকেয়ার।

তিন ডোজের এই টিকা যাদের দেয়া হয়েছে তাদের করোনা উপসর্গ ৬৬ শতাংশ দূর হয়েছে বলে দাবি করছে কোম্পানিটি। প্রতি বছর ১২০ মিলিয়ন জাইকোভ-ডি টিকা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এই কোম্পানি। ভারতে এ পর্যন্ত অনুমোদিত তিনটি টিকা - কোভিশিল্ড, কোভ্যাকসিন ও স্পুটনিক ভি দেয়া হয়েছে ৫৭০ মিলিয়ন ডোজ। প্রাপ্ত বয়স্কদের ১৩ শতাংশকে দুই ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।

ক্যাডিলা হেলকেয়ার জানিয়েছে, তারা টিকার জন্য ভারতে সবচেয়ে বড় ট্রায়ালের ব্যবস্থা করেছে। মোট ৫০টি সেন্টারে ২৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবী এই ট্রায়ালের আওতায় এসেছে। কোম্পানিটি আরো দাবি করেছে, প্রথমবারের মতো তাদের টিকা কম বয়সীদের শরীরে পরীক্ষামূলভাবে দেয়া হয়েছে। ১২-১৮ বছর বয়সী ১ হাজার জনকে এই টিকা দেওয়া হয়। আর তাদের শরীরে তা বেশ ভালোভাবে কাজ করেছে বলেও জানায় কোম্পানিটি। ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে এই টিকার তৃতীয় ডোজ দেয়া হয়, যা ফলপ্রসূ হয়েছে উল্লেখ করে কোম্পানিটি জানিয়েছে, এই টিকা করোনার মিউট্যান্ট স্ট্রেইন বিশেষ করে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে কার্যকর। 

এই টিকা কীভাবে কাজ করে? 

মানব শরীরের ভিত্তি গড়ে দেহকোষের ডিএনএ, আরএনএ। জাইকোভ-ডি টিকা প্লাজমিডস অর্থাৎ ডিএনএ’র ক্ষুদ্র অংশ ব্যবহার করে, যাতে জেনেটিক ইনফরমেশন থাকে। এটি দেহকোষে তথ্য পৌঁছে দেয় স্পাইক প্রোটিন তৈরি করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য। করোনার বেশিরভাগ টিকা শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে তাকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে শেখায়। 

এটি কোনদিক থেকে আলাদা? 

জাইকোভ-ডি করোনার জন্য বিশ্বের প্রথম ডিএনএ টিকা। আমেরিকায় অনেক ডিএনএ টিকা আছে, যেমন- ঘোড়ার রোগের জন্য, কুকুরের ত্বকের ক্যানসারের জন্য ডিএনএ টিকা ব্যবহার করা হয়। এছাড়া আমেরিকায় ক্যানসার সহ বিভিন্ন রোগ সারাতে ১৬০টিরও বেশি ডিএনএ টিকা মানুষের শরীরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেয়ার অপেক্ষায় আছে। জাইকোভ-ডি টিকা ডিজপোজেবল নিডল ফ্রি ইনজেক্টরের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। 

জাইকোভ-ডি টিকার সুবিধা 

বিজ্ঞানীরা বলছেন ডিএনএ টিকা তুলনামূলকভাবে সস্তা, নিরাপদ ও স্থায়ী। এই টিকা বেশি তাপমাত্রায় (-২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) মজুদ রাখা যায়। ক্যাডিলা হেলথকেয়ার জানিয়েছে, তাদের টিকা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও তিন মাস ভালো থাকে, তাই এটি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো বা মজুদ করা সহজ। 

জাইকোভ-ডি টিকার অসুবিধা 

গবেষকরা বলছেন, মানবদেহে আগে ব্যবহৃত ডিএনএ টিকা খুব একটা সফল হয়নি। সেসব টিকা পশুদের ক্ষেত্রে ভালো কাজে দিলেও মানুষের শরীরে আশানুরূপ ফল দিতে পারেনি। লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটি হেলথ সায়েন্সেস সেন্টারের গবেষক ড. জেরেমি কেমেল বলেছেন- ‘বয়স্কদের দেহকোষের নিউক্লিয়াসে প্লাজমিড ডিএনএ প্রবেশ করানো বেশ কঠিন।’ তাই ডিএনএ টিকা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কতোটা লড়তে পারবে তা একটি প্রশ্ন। এছাড়া এই টিকা অন্য টিকার মতো দুই ডোজ না বরং তিন ডোজ। এসব বিবেচনায় জাইকোভ-ডি টিকা এখনো গবেষণার মধ্যে আছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়