ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চা বিক্রেতা থেকে ইউপি সদস্য

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩০, ২৯ নভেম্বর ২০২২  
চা বিক্রেতা থেকে ইউপি সদস্য

শাহনাজ পারভীন। বয়স প্রায় ৫০ বছর। জীবনে বহু চড়াই-উতরাই পার করেছেন তিনি। বর্তমানে শাহনাজ একজন পেশাদার চা বিক্রেতা। দোকানের গ্রাহকদের অনুরোধে তিনি ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য শাহনাজ পারভীন। নির্বাচনী এলাকার শাহাপাড়া বাজারে রয়েছে তার নিজের চা স্টল। অফিসের সময় না খুললেও, বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিয়মিত দোকানে বসেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুরের ঘোনটোলা এলাকার সেরাজুল ইসলামের সঙ্গে প্রায় ৩০ বছর আগে বিয়ে হয় শাহনাজ পারভীনের। তাদের রয়েছে পাঁচ সন্তান। সাংসারিক নানা কাজে বনিবনা না হওয়ায় পারভীনকে রেখে তার স্বামী দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ২২ বছর ধরে সংসার করছেন। বাড়ি-ঘর না থাকায় তিনি স্বামীর বড় ভাইয়ের বাড়িতে ঠাঁই নেন। ঝালমুড়ির ব্যবসা দিয়েই তার জীবনের সংগ্রাম শুরু। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ঝালমুড়ি, বাদাম বিক্রি করে কিছু টাকা জমানো হয়। সেই টাকায় পাইকারি দরে কাপড় বিক্রি শুরু করেন। কাপড় বেচেই ভালোই দিন কাটছিল পারভীনের।

কাপড় বিক্রির লাভের টাকায় ৪ সন্তানের বিয়ে দেন। পরে এই ব্যবসাগুলো ইতি টানেন। মানুষের অনুপ্রেরণায় তিনি শাহাপাড়া বাজারে চায়ের দোকান দেন। সেই দোকানেই ব্যস্ত সময় পার হচ্ছিল। দম ফেলার যেন সময়ই নেই তার হাতে। অতঃপর গ্রাহকদের অনুরোধে ভোটে দাঁড়ান। বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সংরক্ষিত ইউপি মহিলা সদস্য নির্বাচিত হন।

শাহনাজ পারভিন বলেন, বাজারে দোকানে অনেক লোকজন চা পান করতে আসেন। সেই সুবাদে অনেকের সাথে চলাফেরা। তারাই আমাকে ভোটে দাঁড়াতে উৎসাহ দেন। ওই মানুষজনই আমার পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা চালান এবং খরচ বহন করেছেন। পাঁচ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পরাজিত করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করি।’

শাহনাজ পারভীন আরও বলেন, ‘চায়ের দোকানই ছোট একটি অফিসের মত। সেখানেই থাকে চারিত্রিক সনদপত্রসহ জরুরি কাগজপত্র। লোকজন আসে, চা বিক্রির পাশাপাশি তাদেরও সমস্যার সমাধান করতে হয়। পরিষদে যেদিন কাজ থাকে সেদিন সকালে দোকান খোলা হয় না। বিকেলে ঠিকই খুলি। এক বেলা দোকান না খুললে ঘুরে যেতে হয় মানুষকে। মানুষ কষ্ট পায়। জনগণ যে প্রত্যাশা নিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন, তাদের জন্য কাজ করতে চাই।’

পারিবারিক জীবন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শাহনাজ বলেন, ‘পাঁচ সন্তানের মধ্যে চার জনকেই বিয়ে দিয়েছি। সবাই ভালো আছে। তারা যতটুক পারে, প্রাণপণ দিয়ে আমার খেয়াল রাখার চেষ্টা করে। ছোট ছেলে সিয়াম আমার সাথেই থাকে। কিন্তু এতদিনে একটা ঘরও বানাতে পারিনি। এখনও অন্যের ভিটামাটিতে বসবাস করছি।’

মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা শাহাদাৎ হোসেন খুররম বলেন, ‘শাহনাজ পারভীন একজন দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধি। তিনি সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে খুব সহজেই মিশে যেতে পারেন। সবার কথা মন দিয়ে শুনেন। এ ছাড়াও তিনি তার সব দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করেন।’

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত বলেন, ‘একজন অসহায় নারীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এলাকার মানুষ। তিনি অন্যের বাড়িতে বসবাস করলেও কোনোদিন নিজের জন্য কিছু চাননি। বিষয়টি ইতিবাচক। তার সঙ্গে কথা বলে নিয়মানুযায়ী সাহায্য করা হবে।’

মেহেদী/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়