ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল’ এখন শুধুই কালের সাক্ষী

রংপুর সংবাদদাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪১, ১৫ জুন ২০২১  
‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল’ এখন শুধুই কালের সাক্ষী

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে তাঁরই নামে গড়া ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল’ ভগ্নপ্রায় দশায় পরিণত হয়েছে। অথচ প্রায় অচল এই হাসপাতালের সুনাম এখনও এলাকার মানুষের মুখে মুখে ফেরে। সব সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও উত্তরাঞ্চলের আদি শহর মাহিগঞ্জে ৩০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতাল এখন শুধুই কালের সাক্ষী!

প্রায় শত বছর পূর্বে রংপুর তাজহাটের জমিদার গোপাল লাল রায় বাহাদুর এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৫ সালে বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি’র নিজস্ব অর্থায়নে হাসপাতালটি আধুনিকায়নের মাধ্যমে ৩০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। একইসঙ্গে এর নতুন নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল।

সোমবার (১৪ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটি অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। সিটি করপোরেশন এবং একটি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের অধীনে হাসপাতালের নিচতলার দুটি ঘরের একটিতে শিশুদের টিকাদান কেন্দ্র, আরেকটিতে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভকালীন পরামর্শ সেবা দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটারে যন্ত্রপাতিগুলো বহুদিন অব্যবহৃত হওয়ায় জীর্ণ হয়ে পড়েছে। ওয়ার্ডগুলো পরিত্যক্ত, উঠে গেছে দেয়ালের আস্তরণ, বেড ছাড়া খোলা রুম ময়লা আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে ভাঙা কাচের টুকরো আর মরিচা ধরা লোহার রডে একটু অসতর্ক হলেই রয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।

স্থানীয়রা বলছেন, হাসপাতালটি পাঁচ বছর আগেও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। আশপাশের উপজেলার মানুষ এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে নিয়মিত আসতো। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য ইঙ্গিতে সেই হাসপাতাল এখন সাইনবোর্ড সর্বস্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সরকার ইচ্ছে করলে বঙ্গবন্ধুর  নামে হাসপাতালটি পুনরায় চালু করা সম্ভব বলেও মনে করেন তারা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা এলাকাবাসী হাসপাতালটি পুনরায় সচল করতে অনেক আন্দোলন করেছি, অনেকে আশ্বাসও দিয়েছেন, কিন্তু কাজ হয়নি।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আন্দোলনে সাড়া দিয়ে রংপুর জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে গত বছরের ২৩ জুলাই মত বিনিমিয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল ট্রাস্ট গঠন করে রংপুর সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যদিও এই সিদ্ধান্ত এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।

এ বিষয়ে রংপু্র সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা হাসপাতালটিতে শিশুদের টিকাদান কেন্দ্র ও গর্ভকালীন মায়েদের চিকিৎসাসেবা চালু রেখেছি স্বল্প পরিসরে। যদিও মাহিগঞ্জবাসী হাসপাতালটিকে পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলেছি। ডাক্তারসহ লোকবলের বিষয়ে সিভিল সার্জন যদি দায়িত্ব নেন তবে আমরা সহযোগিতা করবো। কারণ চিকিৎসাসেবার বিষটি তাদের হাতে।’

এদিকে জেলা প্রশাসক আসিব আহসান রাইজিংবিডিকে জানান, বিষয়টি নিয়ে মিটিং করে প্রাথমিকভাবে একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ট্রাস্ট গঠন করে হাসপাতালটি চালু করার কথা ছিল। তা এখনও সম্ভব হয়নি। সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও বাণিজ্যমন্ত্রীর সহযোগিতা নিয়ে সিআরপিকে কাজে লাগিয়ে হাসপাতালটিতে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা চালু করার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
 

আমিরুল/তারা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়