ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জাল নিবন্ধনে ধরা ৯ শিক্ষক, ফাঁসছেন মাউশির কর্মকর্তারা

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৯, ২১ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জাল নিবন্ধনে ধরা ৯ শিক্ষক, ফাঁসছেন মাউশির কর্মকর্তারা

এম এ রহমান মাসুম : জাল সার্টিফিকেটে চাকুরি ও এমপিওভুক্ত হয়ে মামলায় ফেঁসেছেন রাজধানীর চার স্কুল ও মাদ্রাসার ৯ জন শিক্ষক। এবারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার চার্জশিটভুক্ত হতে যাচ্ছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে জেলা শিক্ষা অফিসের কয়েক জনের। ফলে চার্জশিটে বাড়ছে আসামির সংখ‌্যা। এখন চলছে তথ‌্য-প্রমাণ সংগ্রহের কাজ। এরই মধ‌্যে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জব্দ করা শুরু করেছে।

দুদক সূত্র জানায়, শিক্ষক নিবন্ধনের জাল সার্টিফিকেট দাখিল করে এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারি টাকা উত্তোলনের অপরাধে শিক্ষকরা আসামি হলেও কেন জেলা শিক্ষা অফিস কিংবা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা আসামি হয়নি এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কারণ, শিক্ষক নিবন্ধনের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে তাদের নিজস্ব সার্ভারে সার্চ দিলেই সার্টিফিকেট সঠিক আছে কিনা যাচাই করা সম্ভব ছিল। এত সহজ পদ্ধতিতে যাচাই করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে এতদিন সরকারি বেতন ও চাকুরি নিয়ে সুবিধা পেয়ে আসছিল সেটাই বড় প্রশ্ন বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে দুদক সচিব ড. শামসুল আরেফিনের কাছে জানতে চাইলে রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘অভিযোগটি দুদকের ঢাকা বিভাগীয় অফিস থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ওই অফিস ভালো বলতে পারবে। তাছাড়া অনুসন্ধান শেষ হলে সত‌্য বেরিয়ে আসবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ বিষয়ে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শিক্ষকরা জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরি নেওয়া ও এমপিওভুক্ত হয়ে যেমন অপরাধ করেছেন ঠিক তেমনি জেলা শিক্ষা অফিস ও শিক্ষা অধিদপ্তর দায় এড়াতে পারে না। কারণ, যাচাই-বাচাই করা তাদের দায়িত্ব। যদিও অনুসন্ধান পর্যায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে যেখানে নিয়ন্ত্রণ অফিসের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে আসামি করা হয়নি। আশা করছি তদন্ত পর্যায়ে অবশ্যই এ বিষয়টি আসবে। এখানে কারো না কারো সংশ্লিষ্টতা অবশ্যই রয়েছে।’

দুদক সূত্রে জানা যায়, জাল নিবন্ধনের মাধ‌্যমে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত হয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন- এমন অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করার পর দুদক উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করা হয়। আর ওই টিম থেকে ঢাকা জেলার অধীন অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধ অভিযোগ অনুসন্ধান করে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়ের করা হয়। রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় দুদকের সহকারি পরিচালক মো. নুর-ই-আলম বাদি হয়ে রাজধানীর চার স্কুলের ৯ শিক্ষককে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

আসামিরা হলেন- খিলগাঁও মডেল হাই স্কুলের সহকারি শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) ইয়াছমিন বেগম, আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তাহমিনা পারভীন (জীববিজ্ঞান ও বিজ্ঞান), আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (ব্যবসায় শিক্ষা) সায়মা খান, উত্তরখান চানপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার জুনিয়র মৌলভী জাকিয়া সুলতানা, ওই মাদ্রাসার মোজাব্বিদ মাহির ক্কারী কবির হোসেন, এবতেদায়ী প্রধান মনোয়ারা বেগম, জুনিয়র শিক্ষক পারুল বেগম, ঢাকা সবুজবাগের ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের সহকারি শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) ইলোরা আলম এবং ঢাকা উত্তরখানের উজামপুর দাখিল মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক শাহনাজ পারভীন।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া শিক্ষক নিবন্ধন সনদ তৈরীপূর্বক তা ব্যবহার করে উল্লিখিত পদে চাকুরি গ্রহণ করার অপরাধে দন্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিদের মধ্যে খিলগাঁও মডেল হাই স্কুলের সহকারি শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) ইয়াছমিন বেগম ২০১১ সালের ২৫ মার্চ লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপত্র পান। পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেন। সে অনুযায়ী এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারি অংশ ও বিদ্যালয়ের অংশের বেতন গ্রহণ করেছেন। ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শনে নিবন্ধন সঠিক নয় এবং ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নেওয়া ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৯৫ টাকা ফেরৎযোগ্য- এমন মন্তব‌্য করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

অন্যদিকে আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তাহমিনা পারভীন (জীববিজ্ঞান ও বিজ্ঞান) ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে অস্থায়ী নিয়োগ পাওয়ার পর ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি নিবন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট সনদপত্র দাখিলের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে নিয়োগ পান। একইভাবে আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (ব্যবসায় শিক্ষা) সায়মা খান একইভাবে নিয়োগ পান। ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শনেও তাদের নিবন্ধন যাচাইকালে তা সঠিক নয় ও নিয়োগ বিধিসম্মত হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়।

উত্তরখান চানপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার জুনিয়র মৌলভী জাকিয়া সুলতানা, ওই মাদ্রাসার মোজাব্বিদ মাহির ক্কারী কবির হোসেন, এবতেদায়ী প্রধান মনোয়ারা বেগম ও জুনিয়র শিক্ষক পারুল বেগম ২০০৩ ও ২০০৪ সালের মার্চ মাসের বিভিন্ন সময় সকল সনদপত্র ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২০১১ সালে তারা নিবন্ধন সার্টিফিকেটের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হন। ২০১৫ সালের ২৩মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিপ্তরের পরিদর্শনে তাদের নিবন্ধন সনদ জাল বলে প্রমাণিত হয়।

একইভাবে ২০১৫ সালের মার্চ ও মে মাসে ওই টিমের পরিদর্শনে এমপিওভুক্ত ঢাকা সবুজবাগের ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের সহকারি শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) ইলোরা আলম এবং ঢাকা উত্তরখানের উজামপুর দাখিল মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক শাহনাজ পারভীনের নিবন্ধন সনদ জাল বলে প্রমাণিত হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নাসিম আনোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তদন্তাধীন বিষয়ে কোনে মন্তব‌্য করতে অস্বীকার করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জুলাই ২০১৮/এম এ রহমান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়