ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘রিকশা বন্ধ হলে আমরা চলব কিসে?’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩১, ৬ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘রিকশা বন্ধ হলে আমরা চলব কিসে?’

মামুন খান : রোববার থেকে কেউ রিকশায় করে গাবতলি থেকে আসাদগেট হয়ে আজিমপুর বা সাইন্সল্যাব হয়ে শাহবাগ যেতেন পারবেন না। একইভাবে রিকশায় কুড়িল থেকে রামপুরা কিংবা খিলগাঁও হয়ে সায়েদাবাদ যাওয়াও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।  আর এই তিন রুটে রিকশা চালাতে না দেয়ার ৩ জুলাইয়ের ঘোষণা ৭ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কারণে চিন্তায় পড়েছেন রিক্সা চালক থেকে সাধারণ জনগন।  বিশেষ করে রিক্সা চালকেরা তাদের জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছে। কিভাবে চলবে তাদের সংসার?

গুলিস্তানের দাড়িয়ে থাকা রিকশাচালক রাসুল মিয়া দু:খ প্রকাশ করে বলেন,‘আমাগোর রিকশা না থাকলে বাঁচবো কেমনে? রিকশা চালনো বাদ দিয়ে কি কামডা করে খামু ? পোলাপানডিরে কি খায়ামু? ঘরে অসুস্থ মা, তার চিকিৎসা ও পোলা-মাইয়াডিরে লেখাপড়া কেমনে শিখাইমু? রিকশাডা না থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হইবো। কীভাবে আমাগোর সংসার চলবো? আমরা যারা রিকশা চালিয়ে খেতাম তারা কি করে খাইবো? পড়ালেহা তো করি নাই। কি কইরা খামু আমরা?’

এ নিয়ে শুধু রাসুল মিয়া নয় ,যত রিকশাচালক আছে তাদের সবার একই প্রশ্ন।  বিকল্প কোন ব্যবস্থা না নিয়ে কেন এই সিদ্ধান্ত, জানতে চায় অনেকেই।

সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন জীবনেও এদিক-সেদিক কাছের দূরত্বে যাওয়ার জন্য একমাত্র ভরসা বা বাহন হচ্ছে রিকশা। শুধু তাইও নয় জ্যাম থেকে বাঁচার জন্য কম দৈর্ঘের বিকল্প পথে কম সময়ে গন্তব্যে পৌছানোর জন্য রিকশাকে বেছে নিতে হয় অনেক সময়।  কিন্তু কিছুদিন পরপর একেকটি রাস্তায় রিকশা চলাচল বন্ধ করে যাত্রীদের প্রিয় এই যান চলাচলের আওতা সীমিত করা হচ্ছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন রিক্সাচালক ও সাধারণ জনগন।

এ বিষয়ে রিকশাযাত্রী হেলাল উদ্দিন বলেন, অনেক গরিব মানুষ আয়-রোজগারের জন্য রিকশা চালানোকে পেশা হিসেবে নিয়েছে।  জীবন ধারণে তাদের একমাত্র অবলম্বন রিকশা চালানো।  এখন তাদের কি হবে? এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাদের কথা কেউ ভাবলো না।

রিকশা চালকদের মত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ফলে সাধারণ মানুষদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হবে। রাধানীর সব জায়গায় বাস পাওয়া যায় না।  আর পাওয়া গেলেও অফিসে আসা-যাওয়ার সময়ে যে ভীড় থাকে, তাতে করে সকলে বাসে উঠতে পারে না। বিকল্প হিসেবে অনেকে রিকশায় করে অফিসে-আদালত বা হাসপাতালে আসা-যাওয়া করে যেতে হয়।  এখন তাদের কি হবে? 

সেক্ষেত্রে বিকল্প একটা ব্যবস্থা রাখা উচিত ছিল বলে মনে করেন বেসরকারী কোম্পানির কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন।  তিনি বলেন, যারা রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো তারা কি করবে? সবকিছু পরিকল্পনা করে করতে হবে। আমি মনে করি, তাদের পরিকল্পনায় ঘাটতি আছে। যানজট কমাতে হলে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল কমাতে হবে। যানজটের মূল কারণই হচ্ছে প্রাইভেটকার।

 

এদিকে রাজধানীর নির্দিষ্ট কিছু রুটে রিকশা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণায় সম্প্রতি অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন তালুকদার রিফাত পাশা নামে এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। রিফাত রিকশায় চড়ে ‘রিক্সা বন্ধ হলে, আমি চলবো কিসে’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের দেশের প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো বাস এবং বাস স্টপেজ নেই। যেখানে সাধারণ মানুষই অফিস টাইমে বাসে উঠতে পারে না। সেখানে আমি কীভাবে বাসে উঠবো। আমার মতো আরও অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও ঢাকায় চলাচল করতে একই সমস্যায় পড়তে হয়। রিকশা বন্ধ হয়ে গেলে আমি কীভাবে অফিসে বা অন্য কোথাও যাতায়াত করবো।  তাই আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

এসি ট্রাফিক (মিরপুর জোন) তাহসিনা আরিফ বলেন, যেসব রুটে রিকশা চালানোয় নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই সব জায়গায় আগামীকাল থেকে কোন রিক্সা চলাচল করতে দেয়া হবে না। এর বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

এ সম্পর্কে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা আগামী ৭  জুলাই থেকে কার্যকর হবে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬জুলাই ২০১৯/মামুন খান/ সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়