ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঢাকা ও আশপাশে অর্ধশত কিশোর গ্যাং

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৯, ১৩ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঢাকা ও আশপাশে অর্ধশত কিশোর গ্যাং

মাকসুদুর রহমান : ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কিশোর-তরুণদের সমন্বয়ে ৫০টির মতো গ্যাং বা গ্রুপ গড়ে উঠেছে। ছোট-বড় এসব গ্যাংয়ের কিশোররা একের পর এক খুন করছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অবৈধ অস্ত্র বহন, মেয়েদের উত্যক্ত করছে তারা। সর্বশেষ গাজীপুরের টঙ্গীতে এই গ্যাং কালচারের বলি হতে হয় নবম শ্রেণির ছাত্র শুভ আহমেদকে (১৪)।

র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘বান্ধবীর সঙ্গে ছবি তোলার জেরে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে শুভ খুন হয়। টঙ্গীতে ভয়াবহ কিশোর গ্যাং সক্রিয় থাকার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। ওই এলাকায় আরো পাঁচ-ছয়টি গ্রুপ সক্রিয় আছে। আগামী পাঁচ-দশ বছরে ওই এলাকায় গ্যাং কালচার ভয়ঙ্কর রূপ নেবে।’

বিভিন্ন সময় এ ধরনের ঘটনার পর পুলিশ, র‌্যাবের সঙ্গে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে নামে। তদন্তে দেথা গেছে কাকরা, জি ইউনিট, ব্ল্যাক রোজ, রনো, কে নাইট, ফিফটিন, ডিসকো বয়েজ, নাইন স্টার, নাইন এমএম বয়েজ, পোটলা বাবু গ্রুপ, সুজন গ্রুপ, আলতাফ গ্রুপ, ক্যাসল বয়েজ, ভাইপার, বিগ বসসহ অনেক গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে। ২০১৫ সালে কয়েকটি গ্যাং সংগঠিত হয়ে বৃহৎ আকারে ‘ফিফটিন গ্রুপ’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে অন্তর্কোন্দলে তিন ভাগ হয় গ্রুপটি।

শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কিশোর অপরাধীদের প্রতিরোধ করতে পুলিশকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কাজ করছে। পাড়া-মহল্লার অপরাধীদের তালিকাও হচ্ছে। গ্রুপগুলোর বিষয়েও নজরদারি চলছে।’

গোয়েন্দারা তদন্তে জেনেছেন, গ্যাং কালচারে আসক্ত বিভিন্ন স্কুলের ছাত্ররা নিজ গ্রুপের লোগো দেয়াল লিখন ও ফেসবুকে ব্যবহারের পাশাপাশি মাদক সেবনের (মদ ও সীসা খাওয়া) ছবিও ফেসবুকে আপলোড করে। ফেসবুকে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে হুমকি দিয়ে স্ট্যাটাস দেয় এবং পরস্পরের আইডি হ্যাক করার চেষ্টা করে। প্রতিটি গ্রুপে ২০ থেকে ২৫ জন কিশোর রয়েছে। তারা পাড়া বা মহল্লার অলিগলি, স্কুল কলেজের সামনে কিংবা একাধিক মোটরসাইকেলে করে এলাকায় ঘুরে ঘুরে নিজেদের জানান দেয়। এদের পেছনে আবার এলাকার বড় সন্ত্রাসী বা রাজনীতিকদের ইন্ধন রয়েছে।

কথা হয় নাইন স্টার গ্রুপের এক সদস্যের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১৫ বছর বয়সী এই কিশোর বলে, ‘উত্তরায় আমাদের কয়েকজন বড় ভাই আছে। মূলত তাদের নির্দেশ মতোই আমাদের গ্রুপ পরিচালিত হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিং, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত এসব গ্রুপ।’

সে জানায়, পশ্চিমা অ্যাকশন বা হরর মুভি, কম্পিউটার গেম দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে এসব গ্রুপ সৃষ্টি হচ্ছে। আগে উত্তরা, বনানীসহ অভিজাত এলাকায় এসব গ্রুপ সীমিত থাকলেও তা এখন রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় গড়ে উঠেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক (প্রক্টর) ড. নূর মোহাম্মদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কিশোর-তরুণদের মধ্যে স্বাভাবিক নিয়মেই নিজের বীরত্ব দেখানোর একটা প্রবণতা থাকে। এর থেকে তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তাদের খারাপ পথ থেকে ফেরাতে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিশোরদের জন্য কাউন্সেলিং জরুরি।’

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুনতাসির মারুফ বলেন, পরিবার থকে শৃঙ্খলা, মূল্যবোধ, নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে সন্তানদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পরিবারকেই এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, সে কোন লোগোর প্রতি আকৃষ্ট কি না তার নজর দিতে হবে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ জুলাই ২০১৯/মাকসুদ/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়