ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পোশাক খাতে প্রযুক্তিসক্ষমতা বাড়ানোর চিন্তা

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৪, ১৫ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পোশাক খাতে প্রযুক্তিসক্ষমতা বাড়ানোর চিন্তা

হাসান মাহামুদ: শ্রমনির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থায় তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। তবে প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থায় বাংলাদেশ এখনো প্রতিযোগিতায় যেতে পারেনি। এবার সরকার ও সংশ্লিষ্টরা এই খাতে ডিজিটাল সক্ষমতা বা প্রযুক্তিসক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে।

বিভিন্ন খাত ক্রমেই প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে। পোশাক খাতও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই বাংলাদেশও বিষয়টির প্রতি জোর দিচ্ছে। এরই মধ্যে পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ- এর সাথে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আলাপ হয়েছে। ইতোমধ্যে পোশাক শ্রমিকদের বেতন কাঠামো ডিজিটাল ওয়ালেটের আওতায় আনার কাজ শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে পোশাক কারখানার প্রযুক্তিসক্ষমতা বাড়ানোর প্রতি জোর দিচ্ছে সরকার।

প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে বস্ত্র ও ফ্যাশন শিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যতের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরির লক্ষ্য নিয়ে ঢাকায় গতবছর প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় বাংলাদেশ ফ্যাশনোলজি সামিট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ধরনের আয়োজনের জন্য আরো বেশি উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি এ ধরনের আয়োজনের জন্য আগে অনেক আনুষ্ঠানিকতা ছিলো, যার অনেকগুলোই ইতোমধ্যে বাদ দেয়া হয়েছে এবং আয়োজনের বিষয়টিকে সহজ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরেই এই খাতের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় প্রণোদনা ও সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। এবার বাজেটেও বেশকিছু সুবিধা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এ খাতে ২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা প্রণোদনা বরাদ্দ এবং পোশাক খাতে ছাড় দিয়ে ১২ শতাংশ করপোরেট কর বহাল। এ ছাড়া আগের সুবিধাগুলোও বহাল রাখা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে উৎসে কর কমানো, শতভাগ পোশাক শিল্পের জন্য পরিবহন ব্যয়, তথ্যপ্রযুক্তি সেবা, সিকিউরিটি সার্ভিস, ল্যাবরেটরি টেস্ট ও নানা সেবায় মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট অব্যাহতি; এ খাতে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিলের ওপর ভ্যাট পরিশোধের নিয়ম শিথিল ও সহজ রাখা প্রভৃতি।

পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে খাত সংশ্লিষ্টদেরকে প্রযুক্তিঘন উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জনে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়নের কথা ও সুবিধা দেয়ার কথা ভাবছে সরকার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (বস্ত্র) তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের গঠিত বস্ত্র সেল বিভিন্ন রুটিন দায়িত্বের পাশাপাশি তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এবং জিএসপি সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করে। এ খাতের প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদনের বিষয়ে সরকারের আগ্রহ রয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা, প্রভাব এবং করণীয় নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

অভিযোগ রয়েছে, পোশাক খাতে প্রযুক্তি যোগ হওয়ার ফলে শ্রমিকরা কাজ হারাচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) একটি গবেষণায় জানায়, কারখানায় যন্ত্র নির্ভরশীলতা বেড়ে যাওয়ার কারণে পোশাক খাতে নারী শ্রমিক কমছে। এর মধ্যে শ্রম আইনের ৬ ও ৭ গ্রেডের শ্রমিকই বেশি।

তবে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব বলেন, ‘প্রযুক্তির কারণে শ্রমিক সংখ্যা খুব বেশি কমেছে- এমন তথ্য আমাদের হাতে এখনো নেই। স্বাভাবিকভাবে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বা রেশিও থাকতে পারে। তবে তা পুরো বিষয়টিতে প্রভাব ফেলার মতো পর্যায়ে যায়নি।

বিজিএমইএ-এর সিনিয়র ডিপুটি সেক্রেটারি সৈয়দ আহমেদ নাজিরুল্লাহ বলেন, ‘শ্রমিকদের প্রশিক্ষিত করার জন্য শতাধিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র আছে। এগুলোতে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মপোযোগী করে গড়ে তোলা হয়। আর দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছেই।’

তিনি বলেন, ‘অটোমেশনের ফলে কোথাও শ্রমিক কাজ হারালে তারা নতুন কারখানায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ পায়।’

এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে প্রকাশিত পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরেও পোশাক রপ্তানিতে আয় ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় এসেছে ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ২৬৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এছাড়া আগের অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানিতে এ বছর ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পোশাক খাতে রপ্তানি আয় ছিল ৩ হাজার ৬১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জুলাই ২০১৯/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়