ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

৩৮ ভাগ তদন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৮, ১৬ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৩৮ ভাগ তদন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ

এম এ রহমান মাসুম : বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি। ডাকযোগে আসা অভিযোগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয় ২০১২ সালে। ২০১২ থেকে ২০১৯। সময় পার প্রায় ৭ বছর। অগ্রগতি শুধু ২০১৫ সালে ৫৬টি মামলা দায়ের ও উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ। তদন্ত শুরুর তারিখ থেকে হিসেব করলেও পেরিয়েছে ৪ বছর।

বেসিক ব্যাংক ইস্যুর মতো দুর্নীতি দমন কমিশনের ৩৭.৬৫ শতাংশ অনুসন্ধান ও তদন্ত পেরিয়েছে নির্দিষ্ট মেয়াদ। শুধু কি তাই, ঘড়ির কাঁটা আরো উল্টো ঘোরালে দেখা যাবে, ২০০৪ সালের আগে বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরো আমলের অনুসন্ধান ও তদন্তও এখনো শেষ হয়নি। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ব্যুরো আমলের ১৭টি অনুসন্ধান ও ২৯টি মামলার তদন্ত এখনো চলছে। পেরিয়েছে অন্তত ১৪ বছর। যদিও সংস্থাটির দাবি, বিভিন্ন সময়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে এত সময় পেরিয়ে গেছে।

দুদক সকল বিভাগীয় কার্যালয়সহ মোট ১০টি অনুবিভাগ থেকে সারা দেশে দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত করে থাকে। দুদকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এসব অনুবিভাগে ৪ হাজার ৫টি অনুসন্ধান ও মামলার তদন্ত চলমান। এর মধ্যে ১ হাজার ৫০৮টি অনুসন্ধান ও তদন্তের নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেছে। অর্থাৎ, ৩৭.৬৫ ভাগ অনুসন্ধান ও তদন্ত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা যায়নি।

দুদক বিধিমালায় বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময় অতিক্রম করার কথা স্বীকার করে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদান করার পরপরই আমি বিষয়টি উপলব্ধি করেছি। বিভিন্ন সময়ে নির্দিষ্ট মেয়াদে অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজ শেষ করার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। সর্বশেষ বিধি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি।

লোকবল সীমিত। নির্দিষ্ট সময়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ করার বাধ্যবাধকতা সব মিলিয়ে অনেক কাজের চাপে থাকেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মাত্র ৮৭১ জনবল নিয়ে সারা দেশের দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধের কাজে নিয়োজিত দুদক। যেখানে মাত্র ২৪০ থেকে ২৪৫ কর্মকর্তা সরাসরি অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্ব নিয়োজিত। ফলে কাজের চাপে অনেকটা দিশেহারা দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

লোকবল সংকট প্রসঙ্গে দুদকের চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের লোকবলের অভাব রয়েছে। এজন্য কোনো কোনো কর্মকর্তার ওপর দায়িত্ব একটু বেশি পড়ে। সবাইকে দিয়ে সব কাজ হয় না। সব কর্মকর্তাও সমান দক্ষ নয়। ইতিমধ্যে আমাদের নতুন অর্গানোগ্রাম অনুমোদন হয়েছে, যা বাস্তবায়নাধীন। নতুন লোকবল নিয়োগ হলে কাজের গতি কিছুটা বাড়বে বলে আমাদের বিশ্বাস।

দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে অনুবিভাগ বিশেষ অনুসন্ধান-তদন্ত-১ ও ২ এবং মানিলন্ডারিং ইউনিটে ৯৯৯টি অভিযোগ অনুসন্ধান পর্যায়ে এবং ২৮১টি মামলা তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। যার মধ্যে ৪৩৯টি অনুসন্ধানের নির্ধারিত মেয়াদ পেরিয়েছে। ১১২টি মামলার তদন্তের সময়সীমা পার হয়েছে। প্রায় একই চিত্র অন্য ৮ বিভাগীয় কার্যালয়ের অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষেত্রেও।

দুদক থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ঢাকা বিভাগের অধীনে মোট ৭১৬টি অনুসন্ধান ও ২৭০টি মামলার তদন্ত চলছে। সময়সীমা পেরিয়ে গেছে ২৮৭টি অনুসন্ধান ও ৭৪টির তদন্তকাজের। প্রায় একই চিত্র ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কার্যালয়গুলোতে। সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগের অধীনে ১ হাজার ৩৪৫টি অনুসন্ধানের মধ্যে ৮৫২টি এবং ৫১০টি মামলার তদন্তের মধ্যে ৩১৬টির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। সদ্য প্রতিষ্ঠিত ময়মনসিংহ বিভাগীয় অফিসে ১৪৩ অনুসন্ধান ও ৭৫টি মামলার তদন্তের বিপরীতে ১২টির অনুসন্ধান মেয়াদোত্তীর্ণ। এছাড়া, রাজশাহী বিভাগে ৩৪০টি, রংপুর বিভাগে ৩৬১টি, সিলেট বিভাগে ৩০৮টি, খুলনা বিভাগে ৫০৫টি ও বরিশাল বিভাগের অধীন ৩২৫টি অনুসন্ধান ও তদন্তের মধ্যে যথাক্রমে ৭৬টি, ৯টি, ৪৩টি, ৫২টি ও ৬৬টির নির্দিষ্ট মেয়াদ অতিক্রম হয়েছে।

এদিকে, পুঞ্জীভূত অনুসন্ধান ও তদন্তের জটলা কমাতে কমিশন থেকে কয়েক দফা সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। তবে সাফল্যের পরিমাণ খুবই কম। সর্বশেষ ডেডলাইন অনুসারে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে সব অনুসন্ধান-তদন্ত শেষ করার নির্দেশনা দেয় কমিশন। এমনকি ডেডলাইন অনুসারে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে গত শুক্রবার ও শনিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়সহ বিভাগীয় ও ২২টি সমন্বিত জেলা কার্যালয় খোলা রাখা হয়।

এর আগে অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজের সুবিধার্থে দুদকের সুপারিশে গত ২০ জুনের প্রজ্ঞাপনে দুদকের সংশোধিত বিধিমালায় অনুসন্ধানের মেয়াদ ১৫ থেকে বৃদ্ধি করে ৪৫ কার্যদিবস ও তদন্তের ক্ষেত্রে ৪৫ থেকে ১২০ কার্যদিবস করা হয়েছে। মূলত এরপরই দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান এ বিষয়ে আরো গুরুত্ব দেন।

কমিশনের এক বিশেষ সভায় সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার করে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের সংশোধিত বিধিমালা অনুসারে কমিশনের প্রতিটি অনুসন্ধান ও তদন্ত ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারো গাফিলতি কিংবা দায়িত্ব পালনে শৈথিল্য কমিশন সহ্য করবে না।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জুলাই ২০১৯/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়