ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বেনাপোলে রেকর্ড আমদানি, রাজস্ব ঘাটতিতেও রেকর্ড

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৫, ৭ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বেনাপোলে রেকর্ড আমদানি, রাজস্ব ঘাটতিতেও রেকর্ড

এম এ রহমান মাসুম : সদ্য সমাপ্ত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টম হাউসে পণ্য আমদানি বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ। তারপরও রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতির মুখে পড়তে হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শুল্ক স্টেশনটিকে।

শূন্য ও কম শুল্কের পণ্যের অধিক আমদানি এবং ভারতের নীতিগত কিছু সিদ্ধান্তকে রাজস্ব কম হওয়ার জন্য দায়ী করছে বেনাপোল কাস্টম কর্তৃপক্ষ।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে প্রায় ২০ লাখ ১ হাজার ৪৬৩ টন বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা হয়েছে। যা তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৩ হাজার ৬৫ টন বেশি।  ১০ বছরের মধ্যে তা সর্বোচ্চ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছিল ১৯ লাখ  ৮৮ হাজার ৩৯৭ টন।

তবে বিপরীত চিত্র রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বাড়লেও তা ছিল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২২.০৯ শতাংশ কম। ঘাটতি ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ- প্রায় ৮৯২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে ৪ হাজার ৯৩১ কোটি ৯০ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে  ৪ হাজার ৩৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৭ কোটি ১ লাখ টাকা বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয় ৪ হাজার ২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ আমদানি বৃদ্ধি পেলেও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হয়নি।

এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, বেনাপোলে নিম্ন শুল্কহারের এবং কম দামের পণ্য আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কম শুল্কের পণ্য আমদানিসহ বেশকিছু কারণে আমদানি বাড়লেও রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে এনবিআরকে ব্যাখ্যা দিয়েছি।

গত ২৪ জুলাই এনবিআরকে আমদানি ও রাজস্ব  ঘাটতির বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বেনাপোল কাস্টম কর্তৃপক্ষ। বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী চিঠিতে বলেন, ভারতীয় পেট্রাপোলে কর্মরত ভারতীয় সংস্থাগুলো শুল্কযুক্ত পণ্যের পরিবর্তে বাংলাদেশে চলমান রামপালসহ তাদের অন্যান্য প্রকল্পের পণ্য যেমন : ব্রোকেন স্টোন, বোল্ডার, যন্ত্রপাতি ও লৌহ সামগ্রী ইত্যাদি পাঠাতে বেশি আগ্রহী। এর ফলে বাণিজ্যিক ও শুল্কযুক্ত পণ্য প্রেরণে বেশ বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। কম শুল্কহারের পণ্য ব্রোকেন স্টোন ও বোল্ডার আমদানি গত অর্থবছরের তুলনায় ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমদানি বেশি হলেও শুল্ক কম এসেছে। অন্যদিকে, স্থান সংকুলান না হওয়ায় বন্দরে বাণিজ্যিক পণ্য সংরক্ষণের জায়গার স্বল্পতা দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে, শূন্য শুল্ক ও কম শুল্কহারের পণ্য যথা-  তুলা, মসুর ডাল ইত্যাদির আমদানি বেড়েছে ৮.২৯ থেকে প্রায় ৩৯৬ শতাংশ। ৫ শতাংশের শুল্কহারের পণ্য আমদানি বেড়েছে ১৯২ শতাংশ পর্যন্ত। বিপরীতে আমদানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে প্রধান রাজস্ব সংশ্লিষ্ট পণ্য যথা- পাথর, সিমেন্ট, এসবেস্টসহ সমজাতীয় পণ্য, প্লাস্টিক, সিরামিক, ইলেকট্রিক্যাল মেশিনারি ও ইকুইপমেন্ট এবং লোহা ও স্টিলের তৈরি পণ্য। এসব পণ্য আমদানি হ্রাস পেয়েছে ৬ শতাংশ থেকে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত। 

চিঠিতে আরো বলা হয়, চাল ব্যতীত ২৫ শতাংশ শুল্কহারের পণ্যের আমদানি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে ১৩.৫৩ শতাংশ। যা অব্যাহত থাকলে ২৮২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতো। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পণ্যের আমদানি হ্রাস পেয়েছে যেমন: ফুটওয়্যার, পারফিউম, কসমেটিক্স, শাড়ি, থ্রি-পিস ও মোটরসাইকেল।

এছাড়া, বেনাপোলের ওপারে ভারতীয় দিকে অধিক যানজট ও পর্যাপ্ত ট্রাক না পাওয়া, স্থলবন্দরের সীমাবদ্ধতা, নির্বাচনের প্রভাব, সাফটা (SAFTA) কার্যকর থাকায় বাণিজ্যিক পণ্য চালানসমূহে রেয়াতি সুবিধার আওতায় শুল্ককর হ্রাস পাওয়া, বেনাপোলে বিএসটিআই ও বিসিএসআইএর শাখা অফিস না থাকায় পণ্যের মান নির্ধারণে কালক্ষেপণ ও  নতুনভাবে ভারতীয় মূদ্রানীতির সংস্কার এবং ব্যাপকভাবে জিএসটি আরোপিত হওয়ার ফলে স্বাভাবিক আমদানির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।

বেনাপোল কাস্টম হাউসে ব্যবসায়ীদের পক্ষে কাজ করেন ছোট-বড় সাত শতাধিক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের বেশ কয়েকজন দাবি করেন, বন্দরে পণ্য দীর্ঘদিন আটকে রেখে কাস্টম হাউস ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করছে। মানুষ এখন বিকল্প হিসেবে চট্টগ্রাম পোর্টকে বেছে নিচ্ছে। যারা যেতে পারছে তারা সেখানে গিয়ে ব্যবসা করছে, আর যারা যেতে পারছে না তারা আস্তে আস্তে ব্যবসা থেকে সরে যাচ্ছে।

বিগত ১০ অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বেনাপোল স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশন ১০ অর্থবছরের মধ্যে চারবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে। এ সময় ১৫৭ কোটি ২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল। প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.০৯ শতাংশ। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪.০৬ প্রবৃদ্ধিতে ১০৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছিল। অন্যদিকে, চলতি অর্থবছর বাদ দিলে সবচেয়ে ঘাটতির বছর ছিল ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর। ওই অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪১৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছিল।

বেনাপোল কাস্টম হাউসে পণ্য আমদানি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বন্দরটি দিয়ে পণ্য আমদানি হয় ১২ লাখ ৭১ হাজার ২৪ টন। ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৩ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪২, ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭৫, ১৫ লাখ ১৯ হাজার ২২০ ও ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯৭ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে প্রায় ২০ লাখ ১ হাজার ৪৬৩ টন।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ আগস্ট ২০১৯/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়