ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

স্বজনেরা মানতে নারাজ ‘আত্মহত্যা’

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৬ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বজনেরা মানতে নারাজ ‘আত্মহত্যা’

মাকসুদুর রহমান : বেদনা আক্তার (৩০)। অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে মধ্যপ্রাচ্যে যান শ্রমিক হিসেবে। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস স্বচ্ছলতার আগেই তাকে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হলো। বিদেশ থেকে ফিরে এলেন লাশ হয়ে।

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বোনের লাশ গ্রহণ করতে এসে চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছিল সরোয়ার আলমের।

তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামে। বেদনা তিন বোনের মধ্যে সবার বড়। বাবা নেই। সংসারে অভাব যেন প্রতিনিয়ত আঁকড়ে রেখেছে। সেখান থেকে পরিত্রাণ পেতে ২০১৮ সালের শেষ দিকে নারী শ্রমিক হিসেবে তিনি (বেদনা) সৌদি আরব যান। কিন্তু কয়েক মাসের মাথায় সেখানেই তিনি আত্মহত্যা করেন বলে খবর আসে। তবে আমার বোন আত্মহত্যা করতে পারে না। অবশ্যই তেমন কিছু হয়েছিল। যে কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। নয়তো বা তাকে হত্যা করা হয়েছে। কেননা সেখানে তিনি ভাল নেই অনেকবার টেলিফোনে বলেছেন।

শুধু সরোয়ার নয়, এ রকম তিন নারী শ্রমিকের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় প্রায় একই ধরনের ঘটনা। কিন্তু উপার্জনক্ষম মানুষগুলো পুরো পরিবারকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এটা তারা মেনে নিতে পারছেন না। স্বজনদের প্রশ্ন- তারা আত্মহত্যা করেছেন না কি তাদের হত্যার পর আত্মহত্যার ঘটনা সাজানো হচ্ছে। তাদের দাবি এ জন্য লাশ দেশে আসার পর পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হোক। তাহলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যেতে পারে।

এক হিসাবে দেখা গেছে, বিদেশ থেকে নারী কর্মীদের লাশ আসার সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে অনেকে আত্মহত্যা করেছেন এমনটিই বলা হচ্ছে। ২০১৭ আত্মহত্যা করেন ১২  জন। ২০১৮ সালে বেড়ে হয় ২৩। আর চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ২০ নারী শ্রমিকের লাশ দেশে আসে। তাদের মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা। তবে কোন লাশেরই এদেশে আর ময়না তদন্ত হয়নি।

২০১৮ সালে ৩ হাজার ৩শ’ ৫৩ প্রবাসী কর্মীর লাশ দেশে আসে। এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার লাশ এসেছে। এর মধ্যে নারীদের বেশিরভাগ মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাশগুলো সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে ময়নাতদন্ত হয়ে আসে। এ কারণে পুনরায় ময়নাতদন্ত হওয়ার সুযোগ নেই। তবে মন্ত্রণালয় বা সরকারের উচিত আসলেই তারা আত্মহত্যা করেছেন কি না সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা। 

তারা বলেন, বিদেশে এসে হোম সিক হয়ে পড়া, কাজের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারা, নারী শ্রমিকদের শারীরিক নিপীড়ন আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হতে পারে।

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদ রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, অভিবাসী শ্রমিকের অস্বাভাবিক মৃত্যু অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হোক। নিশ্চয়ই সেখানে এমন ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যে কারণে নারী শ্রমিকরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। তাই দেশে ফেরত আসার পর লাশগুলোর ময়নাতদন্ত হওয়া দরকার। আবার এমনও হতে পারে আত্মহত্যার ঘটনা সাজানোও হতে পারে। এ কারণে স্বজনদের সন্দেহ যেমন থাকছে, তেমনি প্রকৃত কারণও জানা যাচ্ছে না। তাই প্রকৃত কারণ জানতে লাশ দেশে আসার পর অবশ্যই আমাদের মতো করে ময়নাতদন্ত করা দরকার।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার পর্যন্ত ৫৭ বাংলাদেশি নারী শ্রমিকের লাশ দেশে এসেছে। তারা সবাই আত্মহত্যা করেছেন। সব লাশ বিমানবন্দর থেকে স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। যারা মারা গেছেন তাদের বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ আগস্ট ২০১৯/মাকসুদ/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়