ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কুরিয়ার সেবা নিয়ন্ত্রণে কঠোর হচ্ছে সরকার

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৩, ৮ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কুরিয়ার সেবা নিয়ন্ত্রণে কঠোর হচ্ছে সরকার

বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে অস্ত্র, মাদক, আমদানি নিষিদ্ধ বিভিন্ন পণ্য পার্সেল করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানোর অভিযোগ ছিল বেসরকারি ভাবে পরিচালিত কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর বিরুদ্ধে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধরাও পড়ে।

এরপর গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে আসে কুরিয়ার সেবার আড়ালে কিছু প্রতিষ্ঠানের অপকর্মের চিত্র। এসব রোধের লক্ষ্যে বেসরকারি ভাবে পরিচালিত কুরিয়ার সেবা সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে।

এরই মধ্যে কুরিয়ার সেবা নিয়ন্ত্রণের লক্ষে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের প্রথম চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

দেশে প্রথমবারের মতো তৈরি করা হচ্ছে এ সংক্রান্ত আইন। আইনের খসড়া তৈরি হয়েছে। বর্তমানে চলছে এর পর্যালোচনা ও মতামত গ্রহণ।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের মতামতের জন্য আইনটি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এরপর দ্রুততম সময়ে পর্যালোচনা শেষে খসড়া আইনের চূড়ান্ত করতে চায় সংশ্লিষ্টরা। নভেম্বর মাসের মধ্যে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

জানা গেছে, বাংলাদেশে গত প্রায় ৩০ বছর ধরে কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা চলে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত যুগোপযোগী কোনো আইন নেই। ১৮৯৮ সালে প্রণীত প্রায় একশত বছরের পুরনো পোস্টাল আইন দিয়েই চলছে কুরিয়ার সার্ভিস। তবে ২০১১ সালে সরকার এ বিধিমালার কয়েকটি ধারা সংশোধন করে কুরিয়ার সার্ভিস বিধিমালা- ২০১১ তৈরি করে। কিন্তু কয়েকজন ব্যবসায়ীর রিটের কারণে তা স্থগিত হয়ে আছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান স্ক্যানিং মেশিন ব্যবহার করে না। এমনকি আন্তর্জাতিক যেসব কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করে তারাও এ মেশিন ব্যবহার করে না। সবাই ফিজিক্যালিই চেক করে। এ কারণে বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে যেমন নিষিদ্ধ পণ্য দেয়া সহজ হয়, তেমনি কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে অজুহাত দেয়াও সহজ হয়।

প্রস্তাবিত আইনে তাই কি কি পণ্য এসব প্রতিষ্ঠান বুকিং নিতে পারবে, পরিবহন করতে পারবে তা নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে সরকার। এর ব্যতয় হলে শাস্তি, জরিমানার পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিল হবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস রাইজিংবিডিকে বলেন, ২০১৩ সালে কুরিয়ার সার্ভিস নিয়ে বিধিমালা জারি হয়। কিন্তু শুধু বিধিমালা যথেষ্ট নয়। তাই ‘মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস আইন-২০১৯’ প্রণয়ন করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ‘আইনটির খসড়া নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। এটি এখন সবার দেখার জন্য এবং মতামত দেয়ার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। আশা করছি চলতি মাসের মধ্যে খসড়াটি চূড়ান্ত করা যাবে।’

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, সরকার তিন ধরনের কুরিয়ার সার্ভিসের লাইসেন্স দেবে। লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা, বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ, পরিবহন, বুকিংয়ের সময় বন্ধ প্যাকেট বা পার্সেল গ্রহণ, নিষিদ্ধ পণ্য পরিবহন করলে জেল ও জরিমানা দিতে হবে কুরিয়ার সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানকে।

আইনে আরো বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ দ্রব্য পরিবহন, সংরক্ষণ, গ্রহণ বা পাঠানোর মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে ওই দ্রব্যের সংশ্লিষ্ট আইন প্রযোজ্য হবে।

বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেয়ার ক্ষেত্রে সরকার বেশ কিছু যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ করেছে। বাধ্যতামূলক করা হয়েছে লাইসেন্সপ্রাপ্ত কুরিয়ার সার্ভিসের রাজধানী ঢাকাসহ অন্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক থাকা। পাশাপাশি নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা, গ্রাহকের জিনিসপত্র হারানো বা নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, গ্রাহক অভিযোগ ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয়ভাবে কল সেন্টার স্থাপন।

বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের ক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ থাকবে। এ কর্তৃপক্ষই কুরিয়ার সার্ভিসের লাইসেন্সের জন্য ফি, জামানত, চার্জ, কমিশন ও অন্যান্য ফি আদায় এবং আদায়ের পদ্ধতি ঠিক করবে। একই সাথে এ কর্তৃপক্ষ কুরিয়ার সার্ভিসের সেবা এলাকা এবং অন্যান্য অধিকার নির্ধারণ করবে।

তাছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসের সেবার মান নির্ধারণ, গ্রাহক অধিকার সংরক্ষণ ও বিরোধ মীমাংসার উদ্যোগ নেবে এ কর্তৃপক্ষ। এমনকি বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার ও সার্ভিসের উন্নয়ন গবেষণার দায়িত্বও লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের হাতে থাকবে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় সরকার আরোপিত ক্ষতিপূরণ, চার্জ বা কমিশন আদায়ের ব্যবস্থা করবে কর্তৃপক্ষ।

এরই মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহাদাৎ হোসেনকে মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

আইনে ডাক দ্রব্যাদি বলতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে ডাকযোগে পাঠানো বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক ডাক দ্রব্যাদি অর্থাৎ পোস্ট কার্ড, মুদ্রিত কোনো বার্তা, পাণ্ডুলিপি, ব্যক্তিগত বা দাপ্তরিক বা অন্য যে কোনো ধরনের মোড়ক, সাধারণ চিঠিপত্র, রেজিস্টার্ড চিঠিপত্র, নিউজ পেপার, অভ্যরীণ ও আন্তর্জাতিক পার্সেল, বীমা সার্ভিস, ভ্যালু পেয়েবল সার্ভিসেস, মানি অর্ডার, জিইপি, ইএমএস, লজিস্টিকস সেবা, ডকুমেন্টস সার্ভিস, পার্সেল সার্ভিস, ডেলিভারি সার্ভিস, এক্সপ্রেস সার্ভিস, বিশেষায়িত ও প্রিমিয়ার পোস্ট সার্ভিস এবং সরকার ঘোষিত ডাক বোঝানো হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ডাক ব্যাগ, কূটনৈতিক ডাক ব্যাগ, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ডাক ব্যাগ পরিবহন ও বিতরণের জন্য নিয়োজিত বিশেষ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার ক্ষেত্রে এ আইনের কিছু প্রযোজ্য হবে না।



ঢাকা/হাসান/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়