ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

লিজিং কোম্পানিগুলোর দুরবস্থা, ব‌্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব‌্যাংক

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৬, ১৫ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লিজিং কোম্পানিগুলোর দুরবস্থা, ব‌্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব‌্যাংক

দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কঠিন সময় অতিক্রম করছে। বিশেষ করে, কিছু লিজিং কোম্পানির অবস্থা খুবই শোচনীয়। এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠিন ব‌্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

সূত্র জানায়, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে অনেক অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভালো অবস্থায় নেই। এসবের মধ্যে দুটি লিজিং কোম্পানির অবস্থা খুবই খারাপ। বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো সময় এ কোম্পানিগুলো অবসায়ন করতে পারে। দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান/লিজিং কোম্পানির মালিক প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত আমানত ঋণ হিসেবে নিয়ে গেছেন। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাত্রার খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হয়েছে। এসব অনিয়মের কারণে ইতোমধ্যে পিপলস লিজিং নামের একটি কোম্পানি অবসায়নের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৩৫টি লিজিং কোম্পানি প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করছে। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ শিল্প খাত, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে এবং আবাসন খাতসহ অন্যান‌্য খাতে বিনিয়োগ করে থাকে। লিজিং কোম্পানিগুলো কোনো চেক, ডিমান্ড ড্রাফট বা পে-অর্ডার ইস্যু বা বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসা করতে পারে না।

২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম ধরা পড়ে। এ ছাড়াও পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিআইএফসি, পিপলস লিজিং ও ফার্স্ট ফাইন্যান্সের। বিআইএফসির ঋণের ৯৬ শতাংশ খেলাপি। কোনো পরিচালন আয় না থাকায় প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৬ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির। কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার মূলধন রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বিআইএফসিতে রয়েছে মাত্র ২৩ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ খেলাপি ঋণ রয়েছে পিপলস লিজিংয়ের। গত বছর প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয় ৫০ কোটি টাকা। আর ফার্স্ট ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ রয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। প্রয়োজনের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটির মূলধন কম রয়েছে ২০ কোটি টাকা। প্রভিশন ঘাটতির কারণে জরিমানাও গুনতে হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটিকে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে দেশের সব অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান/লিজিং কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক হয়। এই বৈঠকের রেকর্ড অব নোটসে বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কেন ও কোথায় ব্যর্থ হচ্ছে তা দ্রুত বের করতে হবে। কেন ন্যায়নিষ্ঠভাবে এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ঋণ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না তা দেখতে হবে। যথাযথ জামানত গ্রহণ নিশ্চিত করে সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই ঋণ দিতে হবে, নতুবা নয়। অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্পমেয়াদি আমানত গ্রহণ করে দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগ করছে, ফলে এতে একটি অসঙ্গতি দেখা দিচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী এসব প্রতিষ্ঠানে সুদের উচ্চ হার নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন ওই বৈঠকে।

বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ‌্যেষ্ঠ সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স পাওয়া রাষ্ট্রমালিকানাধীন তিনটি লিজিং কোম্পানিসহ মোট ৩৪টি লিজিং কোম্পানি বর্তমানে দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। লিজিং কোম্পানিগুলো কর্তৃক গ্রাহকদের মেয়াদি আমানতের টাকা যথাসময়ে ফেরত না দেয়া বা ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির করা হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমসহ নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বিভিন্ন সময়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি প্রতিকারের জন্য বারবার আবেদন ও অভিযোগ করছেন। এ প্রেক্ষাপটে গ্রাহকদের মেয়াদোত্তীর্ণ আমানত সুদসহ ফেরত দেয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীর লিজিং কোম্পানির সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে বৈঠকে বলেন, ‘লিজিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পিপলস লিজিং কোম্পানি অবসায়ন করা হয়েছে। বাকি দুটি প্রতিষ্ঠানের অবস্থার উন্নতি না হলে একই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আর্থিক খাত বর্তমানে ক্যান্সারে আক্রান্ত, এ কথা উল্লেখ করে ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, ইনসাইডার লেনডিংয়ের কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে।

প্রিমিয়ার লিজিংয়ের চেয়ারম্যান এ জেড এম আকরামুল হক বলেন, ‘অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান/লিজিং কোম্পানিগুলো তারল্য সঙ্কটে ভুগছে। এর মূল কারণ খেলাপি ঋণের আধিক্য এবং বহিরাগত প্রেশার গ্রুপ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিয়মবহির্ভূত কাজ।

বিআইএফএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এখলাসুর রহমান বলেন, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান/লিজিং কোম্পানির মালিক তাদের প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত আমানত ঋণ হিসেবে নিয়ে চলে গেছেন। এর ফলে উচ্চ মাত্রার খেলাপি ঋণের সৃষ্টি হয়েছে।

এসব মালিকের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের দায়ে অবিলম্বে ফৌজদারি মামলা করার পরামর্শ দেন তিনি।


ঢাকা/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়