ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বদলি-পদায়ন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ, গৃহায়নে অসন্তোষ

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৩ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বদলি-পদায়ন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ, গৃহায়নে অসন্তোষ

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এতে চেইন অব কমাণ্ড ভেঙে পড়েছে। এতদিন যারা সিনিয়র পদে ছিলেন, তারা এখন জুনিয়র হয়ে গেছেন। উল্টো তাদের এখন স্যার বলতে হচ্ছে। আবার যোগ্য কর্মকর্তা থাকা সত্বেও একজনকে একইসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

একবার সকালে, আবার বিকেলে পদায়ন করা হয়েছে। কয়েকদিন পর আবারো পদায়ন করা হয়েছে। অর্থাৎ এক সপ্তাহে তিনবার বদলি বা পদায়নের বিরল ঘটনা ঘটেছে। ফলে প্রমোশনের অপেক্ষায় থাকা যোগ্য ও সিনিয়র কর্মকর্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।  নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে পছন্দের কর্মকর্তা বদলি ও পদায়নের কারণে জাতীয় গৃহায়নের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, গত ৭ অক্টোবর জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ) মো. মুশফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরে একটি অফিস আদেশ হয়। সেখানে সাত কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন করা হয়। তার মধ্যে খুলনার উপ-সহকারী প্রকৌশলী দীপক কুমার সরকারকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে ঢাকায় বদলি করা হয়।  একই আদেশে তাকে এই পদে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ঢাকা সেগুনবাগিচা সার্কেল অফিসের (একধাপ সিনিয়র) সহকারী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়।  একই আদেশে তাকে আবার গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা ডিভিশন-১ মিরপুর ঢাকা উপবিভাগ-১ এর (দুই ধাপ সিনিয়র) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

অর্থাৎ একজন জুনিয়র কর্মকর্তাকে ঢাকা ডিভিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জ্যেষ্ঠতা ডিঙিয়ে দুই ধাপ সিনিয়র পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।  অথচ এই পদে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে প্রায় ১৬ থেকে ১৭ জন যোগ্য ও সিনিয়র কর্মকর্তা রয়েছেন।  তাদের মধ্যে অনেকেই পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য।

এমন অনেক অভিজ্ঞ সিনিয়র কর্মকর্তাদের দেশের কম গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে ফেলে রাখা হয়েছে।  চাইলে তাদেরকে ঢাকা ডিভিশন-১ এর মত জায়গায় বদলি করা যেত।  কিন্তু সিনিয়র কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে দুই ধাপ জুনিয়র দীপক কুমারকে এখানে পদায়ন করা হয়েছে।  যার ফলে প্রতিষ্ঠানের চেইন অব কমাণ্ড ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গৃহায়নের বর্তমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট বদলি ও পদায়ন বাণিজ্যে লিপ্ত।  যখন যা ইচ্ছা করছেন তারা। 

তিনি বলেন, একাধিক সিনিয়র পদে জুনিয়রকে একইসঙ্গে দায়িত্ব দেয়ার কারণে এক ব্যক্তি একসঙ্গে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন।  পদায়নকৃত কর্মস্থলসমূহ একেকটি একেক জায়গায় অবস্থিত হওয়ায় একসঙ্গে একজন জুনিয়র কর্মকর্তার পক্ষে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছে না।  ফলে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে।

অপর এক জুনিয়র কর্মকর্তাকে একসঙ্গে উপ-সহকারী প্রকৌশলী, একধাপ সিনিয়র পদ সহকারী প্রকৌশলী ও আরো একধাপ সিনিয়র পদ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।   আর এ কাজটি করতে কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহে তিন দফা অফিস আদেশে জারি করেছে।   সেই জুনিয়র কর্মকর্তা হলেন কুমিল্লা উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রিদুয়ার হোসেন।

জানা গেছে, ৭ অক্টোবর তাকে প্রথমে কুমিল্লা থেকে একইপদে খুলনা উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়।  ওইদিন বিকেলে তাকে আবার একধাপ সিনিয়র পদে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চলতি দায়িত্ব দিয়ে পদায়নের অফিস আদেশ দেয়া হয়।

এতেই শেষ নয়, উক্ত কর্মকর্তাকে এক সপ্তাহের মাথায় ১৩ অক্টোবর আরো দুই ধাপ সিনিয়র পদে যশোরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে পদায়ন করা হয়।   এভাবে একজন জুনিয়র একসঙ্গে তিনটি পদ দখলে রেখেছেন।  অথচ তার সিনিয়র হিসেবে গৃহায়নে একাধিক সহকারী প্রকৌশলী ও অসংখ্য উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রয়েছেন। এতে বঞ্চিত সিনিয়র কর্মকর্তাদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নির্দেশনার প্রতি বুড়ো আঙ্গুল দেখানো হচ্ছে বলে মনে করেন ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন পদে দায়িত্ব পালন করে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, সিনিয়র বাদ দিয়ে জুনিয়রকে সিনিয়র পদে পদায়ন, ঘন ঘন অফিস আদেশ শুধু দৃষ্টিকটু নয়, অনিয়মের বহিপ্রকাশ।  এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে।  যোগ্য কর্মকর্তাদের মাঝে হতাশা দেখা দেয়। কাজকর্মে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।  প্রতিষ্ঠানে সিনিয়রদের বাদ দিয়ে জুনিয়রদের সিনিয়র পদে পদায়নের কোনো দরকার নেই বলেও মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় গৃহায়নের উপ-পরিচালক মো. মুশফিকুল ইসলাম জানান, কর্তৃপক্ষের ইচ্ছায় নিয়ম মেনে এসব পদায়ন করা হয়েছে।

জুনিয়র কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় একাধিক কর্মস্থলে, একাধিক সিনিয়র পদে পদায়ন বাণিজ‌্যের অভিযোগে উঠেছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না, কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারেন।’

এ বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. রাশিদুল ইসলাম মন্তব্য করতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান।  তিনি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।  অভ্যন্তরীণ পদায়ন ও বদলি গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়