ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

শ্রম কূটনীতিতে জোর দিচ্ছে সরকার

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১০, ২০ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শ্রম কূটনীতিতে জোর দিচ্ছে সরকার

জনশক্তি রপ্তানি এবং এ খাত থেকে আয় বাড়াতে শ্রম কূটনীতিতে জোর দিচ্ছে সরকার।  সরকারের আন্তরিকতা এবং বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে নতুন কিছু শ্রমবাজার তৈরি হয়েছে। তবে পুরনো কিছু শ্রমবাজার সংকুচিতও হচ্ছে বিভিন্ন কারণে। এ সমস্যা সমাধানে শ্রম কূটনীতিতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

এরইমধ্যে শ্রম কূটনীতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য গত এক বছরে নেয়া বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নতুন করে কর্মপরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এখন থেকে শ্রম কূটনীতিতে জোর দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি শ্রমকল্যাণ উইংগুলোকে দেয়া হচ্ছে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা এবং গাইডলাইন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার শুরু থেকেই অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর দিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে ‌বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার তৈরি এবং পুরনো শ্রমবাজারগুলোতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সর্বোচ্চ সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিতেও কাজ করছে সরকার। শ্রম-সুবিধা নিশ্চিতে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বিভিন্ন দূতাবাসে নিয়ো‌জিত শ্রমকল্যাণ উইংগুলো।

মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এসব উইংয়ের কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি করা হয়। পাশাপাশি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ও এসব উইংয়ে‌র সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে এবং দিকনির্দেশনা দেয়।

এছাড়া, যেসব বিষয় বিদেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধানেরও কাজ করছে সরকার। বিশেষ করে, বিদেশ থেকে ভিসা সংগ্রহে অনৈতিক প্রতিযোগিতা, ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে অদক্ষ শ্রমিককে বিদেশ পাঠানো, রাজনৈতিক নেতাদের স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি রোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

শ্রম কূটনীতির অংশ হিসেবে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে একক ভিসা সত্যায়ন ও ছাড়পত্র দেয়ার নিয়ম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মূলত বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতারণা ঠেকাতেই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগটি কয়েক বছর আগেও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কয়েকটি পক্ষের বিরোধিতার কারণে এর তখন অগ্রগতি হয়নি। এবার আবারো এই বিষয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি জনশক্তি রপ্তানিতে প্রতারণা ঠেকাতে শ্রমিক আমদানিকারক দেশগুলোতে ভিসা সত্যায়নের জন্য এজেন্সি নিয়োগের বিষয়টিও বিবেচনা করছে সরকার।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও বিদেশে শ্রমবাজারের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- মালিক ও কর্মীদের মধ্যে চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা, ট্রেডভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরি এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত লেবার উইং পরিদর্শন করা প্রভৃতি। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ বিষয়ের দায়িত্ব পালন করবে শ্রমকল্যাণ উইংগুলো।

সং‌শ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিশ্বের শ্রমবাজার পরিবর্তন হচ্ছে। কিছু কিছু শ্রমবাজার যেমন সংকুচিত হচ্ছে, আবার নতুন নতুন শ্রমবাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। এসব পরিস্থিতিতে শ্রমকল্যাণ উইংয়ের কর্মকর্তাদের জন্য কৌশল নির্ধারণে ধারণা দেয়ার পাশাপাশি এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে শ্রমবাজারগুলোতে গতি আসবে বলে মনে করেন তারা।

এসব বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা রাইজিংবিডিকে বলেন, শ্রম কূটনীতির অংশ হিসেবে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেহেতু এর সাথে দেশের ভাবমূর্তি জড়িত এবং বিভিন্ন পক্ষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, তাই এখনই আমরা সব বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দি‌চ্ছি না। তবে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রায় ৯০ শতাংশ এমন সব দেশে যান যেগুলোতে শ্রম আইন দুর্বল ও বিদেশি শ্রমিকদের ওপর নিপীড়ন সাধারণ ঘটনা। আমরা এই বিষয়গুলোর সমাধানে জোর দিচ্ছি।

তিনি বলেন, জনশক্তি রপ্তানিতে অনেক বিষয় জড়িত। যেমন: দক্ষতার ঘাটতি থাকায় পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশে বাংলাদেশ কর্মী পাঠাতে পারি না। এক্ষেত্রে শ্রম কূটনীতির চেয়ে বেশি জোর দিতে হয় দক্ষ প্রশিক্ষণের ওপর। সব বিষয় মিলিয়ে আমরা পরিকল্পনামাফিক কাজ করছি।

সচিব বলেন, ১ কোটির অধিক অভিবাসী বাংলাদেশি কর্মী এবং তাদের পরিবারভুক্ত আরো প্রায় ৫ কোটি মানুষের কল্যাণের স্বার্থ আমাদের কাছে সবসময়ই প্রাধান্য পায়।


ঢাকা/হাসান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়