ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতিপূরণে ভবন বিমা হচ্ছে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০০, ১৯ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতিপূরণে ভবন বিমা হচ্ছে

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতিপূরণে দেশের সব ভবন অগ্নি বিমার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত কয়েক বছর দেশের বেশকটি বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ফলে ব্যাপক জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার পাশাপাশি ভুক্তভোগীরা যাতে সহজে ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ২২ হাজার ২৮৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় মারা গেছেন ২ হাজার ১৩৮ জন। দগ্ধ হন ১৪ হাজার ৯৩২ জন। এ বছর আগুনের ঘটনায় ২০৩ কোটি ৯২ লাখ ৭৪ হাজার ৩১৫ টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে।

সম্পদ ও প্রাণহানি কমিয়ে আনতে সরকারি-বেসরকারি সব ভবনকে বিমার আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

এ বিষয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন যুগ্ম সচিবের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও এ মাসেই বাংলাদেশ বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডিআরএ) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে করে একটি নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করবে বলে বিডা সূত্রে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে এটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু করা যায় কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

সূচনা বৈঠকে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পরিচালক কামরুল হক জানান, দেশে প্রচুর বহুতল ভবন রয়েছে, যেগুলো কখনও বিমার আওতায় আনা হয় না। ট্যারিফ বেশি হওয়ায় মূলত অনেকে বিমা করেন না। এটি বাস্তবায়নে আইনগতভাবে তাদের বাধ্য করতে হবে।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রতিনিধি মো. ইমাম শাহীন জানান, দেশের বহুতল ভবনগুলো বিমার আওতায় আনতে হলে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। দেশে বর্তমানে প্রিমিয়ামের হার প্রতি বর্গফুট শূন্য দশমিক ৭৫ টাকা। এটি দেশব্যাপী চালু করতে হলে প্রিমিয়াম রেট কমাতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম মিলে বাস্তবায়নযোগ‌্য একটি প্রিমিয়াম হার নির্ধারণ করতে পারে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের বার্ষিক নিবন্ধন ফি নবায়নের সময় ভবনগুলোর বিমা আছে কি-না, তা সিটি করপোরেশন দেখভাল করতে পারে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিনিধি জানান, দেশে সাধারণত ষষ্ঠ থেকে ১০ তলা পর্যন্ত অনেক ভবন রয়েছে। ১৮ তলার ওপরে ভবন করতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে অতিরিক্ত ফি জমা দিতে হয়। ভবনগুলো বিমার আওতায় আনতে রাজউক ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে এবং এক্ষেত্রে যদি আইন করার প্রয়োজন হয়, তাহলে অবশ্যই তা করতে হবে। এ বিষয়ে বিআইডিআরএ-সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে একটি ওয়ার্কশপ বা সেমিনারের আয়োজন করতে পারে।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের প্রতিনিধি জানান, শুরুতেই বহুতল ভবনগুলো অগ্নি-বিমা পলিসির মধ্যে আনতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হলে তা কতটা বাস্তবসম্মত, তা বিবেচনায় আনতে হবে। তবে প্রাথমিকভাবে পাইলটিং ব্যবস্থায় ভবনগুলো বিমার আওতায় আনলে ভালো হয়। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে যে আইনগুলো আছে সেগুলো যাতে বাস্তবায়ন করা যায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। এলাকাভিত্তিক আলোচনা করে পাইলটিং কাজ শুরু করা যেতে পারে।

তিনি জানান, রাস্তা প্রশস্ত না হওয়ায় অনেক সময় বহুতল ভবনের আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের বেগ পেতে হয়, গাড়িগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে না। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক পরিসরে আলোচনা হতে পারে। প্রয়োজনে সচিব কমিটিতে আলোচনার উদ্যোগও নেয়া যেতে পারে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, বিদ্যমান আইনগুলো পর্যালোচনা করা উচিত। সার্বিকভাবে বিবেচনা করে তা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে পাইলটিং ভিত্তিতে কাজ শুরু করা যেতে পারে। সরকারি-বেসরকারি সব ভবন বিমার আওতায় আনতে চায় সরকার। কীভাবে এটি বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়েও কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগুনের ঘটনা বাড়ছে কিন্তু তারপরও জনসচেতনতা বাড়েনি। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, যেমন- ফায়ার সার্ভিস, রাজউক, সিটি করপোরেশন আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবনসহ কল-কারখানাগুলোতে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিতে সঠিক নজরদারি করতে পারছে না, বা করছে না। এ কারণে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েই চলছে।

জানা গেছে, দেশের বহুতল ভবন ও কল-কারখানাসহ বাণিজ্যিক ভবনগুলোর প্রায় ৯০ ভাগেই অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। বেশির ভাগ ভবন পুরনো, তাই বর্তমানে সেগুলোতে প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সংযোজন করাও কঠিন। তাছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলেও আগুনের ঘটনা বাড়ছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে দেশে দেড় লাখ আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় এক হাজার ৪৯০ জনের মৃত্যু এবং ৬ হাজার ৯৪১ জন দগ্ধ হয়েছেন। এ অবস্থায় ভবনগুলোকে বিমার আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে।


ঢাকা/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়