ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ইএফডি স্থাপনে ১০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইএফডি স্থাপনে ১০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত

ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন স্থাপন সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে ১০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।  

পাইলটিং প্রজেক্ট হিসেবে ঢাকা পশ্চিম ও ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের আওতায় মোট ৮০টি এবং চট্টগ্রামের ২০টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইএফডি স্থাপন করে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করে প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধানেই এ উদ্যোগ।

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ে স্বচ্ছতা আনতেই বসানো হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুপারশপ, রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুড, দেশীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের আউটলেট, মোটরগাড়ির গ্যারেজ-ওয়ার্কশপ, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, কমিউনিটি সেন্টার, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও স্বর্ণকারসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠকে বোর্ড প্রশাসন, মূসক নীতি, মূসক নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা, মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি, ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের পরিচালকসহ ইএফডি প্রজেক্টের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভ্যাট আদায় গতিশীলতা আনতে ইএফডি বসাতে এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

কথা হয় এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, সভায় ইএফডি জটিলতা এড়ানোর জন্য পাইলটিং পর্যায়ে যে ১০০ প্রতিষ্ঠানকে ইএফডি স্থাপনের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে তাদের মতামত গ্রহণ করে কি কি তথ্য সন্নিবেশ করা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  মাঠ পর্যায়ে যে প্রতিষ্ঠানসমূহ ইএফডি স্থাপনের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে তাদের নিকট হতে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদের নানাবিধ বাস্তব সমস্যার সন্মুখীন হয়েছে এনবিআর। বিশেষ করে ইএফডিতে কি ধরনের তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে তা নির্ধারণ করা নিয়ে জটিলতা বেশি। তাই সভায় সিদ্ধান্ত হয় এইচএস কোডভিত্তিক পণ্যের হিসাব আপতত সংরক্ষণ করা না হলেও পণ্য ও সেবার আইটেম কোড ভিত্তিক তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে এইচএস কোড ও সেবা কোডের অপশন থাকবে। যাতে ভবিষ্যৎ প্রয়োজন অনুযায়ী ইনপুট দেওয়া যায়।

এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন) মো. জামাল হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ইএফডি মেশিন চালুর ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এনবিআরের ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের ডাটা সেন্টারের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সময়মতো এটি চালু করা সম্ভব হয়নি। ইএফডি মেশিন বসানো উচ্চতর কারিগরি বিষয় হওয়ায় যথাযথ ট্রায়াল রান সম্পন্ন না করে এর অপারেশনে যাওয়টা ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য আমরা ইএফডির যথাযথ ট্রায়াল রান কার্যক্রম শেষ করে এটি বসানো শুরু করা হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার ড. মইনুল খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ইএফডি ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের জন্য ব্যবহার বান্ধব হবে। এর মাধ্যমে ব্যবসায় স্বচ্ছতার পাশাপাশি ক্রেতারাও সন্তুষ্টি হবেন। কারণ ইএফডি অধিকতর ব্যবসাবান্ধব। রাজস্ব আদায়ে চেইন ইফেক্ট ফেলবে বলে আমি মনে করি।

এনবিআর সূত্র জানায়, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ে স্বচ্ছতা আনতেই বসানো হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল এই ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন। সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১০০টি ইএফডি মেশিন আমদানি করা হয়েছে। ইএফডির প্রথম চালান এরই মধ্যে দেশে এসেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসতে যাওয়া এ ডিভাইস সরাসরি যুক্ত থাকবে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের সঙ্গে। যার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের বিক্রয়ে সার্বিক তথ্যসহ যথাযথ ভ্যাট আদায় সম্ভব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

চীনভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এসজেডজেডটি মেশিন সরবরাহ করছে। গত বছর এনবিআর মোট ১০ হাজার মেশিন কেনার কার্যদেশ প্রদান করে। এর মধ্যে ১০০ মেশিন বেশ আগেই দেশে পৌঁছে গেছে। বাকি মেশিন আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দেশে পৌঁছে যাবে। ভ্যাট ফাঁকি ঠেকাতে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে শুরু করে ২৫ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি চালু করবে এনবিআর। ১০ হাজার ইএফডি মেশিন কেনায় সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৩১৭ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ইএফডি মেশিন স্থাপন করা হলে ভ্যাটে একটা নিয়মশৃঙ্খলা আসবে। ব্যবসায়ের গতি আরো বৃদ্ধি পাবে। রাজস্ব আদায়ের হারও বৃদ্ধি পাবে।

এনবিআর বলছে, প্রথম দফায় দেশে ১০ হাজার ইএফডি বসানো হবে। চীনের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সিনেসিস আইটির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। ২৪ ধরনের প্রতিষ্ঠান পাবে এই ইএফডি। যার মধ্যে আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুড, ডেকোরেটরস ও ক্যাটারার্স, মোটরগাড়ির গ্যারেজ-ওয়ার্কশপ এবং ডকইয়ার্ড, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, ছাপাখানা ও বাঁধাই সংস্থা, কমিউনিটি সেন্টার, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, স্বর্ণকার-রৌপ্যকার ও স্বর্ণ পাইকারি, আসবাবপত্র বিক্রয়কেন্দ্র, কুরিয়ার ও এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিস, বিউটি পার্লার, হেলথ ক্লাব ও ফিটনেস সেন্টার, কোচিং সেন্টার, সামাজিক ও খেলাধুলা বিষয়ক ক্লাব, তৈরি পোশাক বিপণন, ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল গৃহস্থালি সামগ্রীর বিক্রয়কেন্দ্র, শপিং সেন্টার, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, জেনারেল স্টোর/সুপারশপ, বড় ও মাঝারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, যান্ত্রিক লন্ড্রি, সিনেমা হল ও সিকিউরিটি সার্ভিস।

মূলত আগে যারা ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) ব্যবহার করতেন তাদের ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক।


ঢাকা/এম এ রহমান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়