ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

করোনা: পুঁজিবাজারে ঝুঁকিতে পোশাক খাতের কোম্পানিগুলো

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১০, ৪ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনা: পুঁজিবাজারে ঝুঁকিতে পোশাক খাতের কোম্পানিগুলো

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেরি অর্থনীতিতেও পড়েছে করোনার প্রভাব। যার প্রভাব পড়েছে শেয়ার বাজারেও। এই পরিস্থিতিতে করোনার প্রভাব কাটিয়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো মুনাফার ধারাবাহিকতা কিভাবে বজায় রাখবে, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর দেশের রফতানি খাতের সিংহভাগর পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। তাই এর প্রভাবও পুরো রফতানি বাণিজ্যের ওপর পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, করোনায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে তৈরি পোশাক খাতের কোম্পানিগুলো।

বাজার-বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালিসহ অধিকাংশ দেশ একের পর এক লকডাউন ঘোষণা করছে। দেশেও পোশাকের ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে ভোক্তাচাহিদার ওপর।

বাজার চাহিদার এই পরিস্থিতিতে নতুন  অর্ডার (ক্রয় আদেশ) দিচ্ছেন না ক্রেতারা। আবারও বাতিল-স্থগিতও করছেন আগের দেওয়া ক্রয় আদেশ। এ কারণেই পোশাক খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মুনাফা অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়বে। কমে যেতে পারে কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশও। এতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেষ প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন, ২০২০) মুনাফা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, করোনা দীর্ঘদিন থাকলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন হবে, সে বিষয়টি বাজার-সংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তুলছে। ইতোমধ্যে সরকার সাধারণ ছুটির মেয়াদ একদফা বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে। ফলে করোনার প্রভাবে ধারাবাহিক দরপতনের মুখে যেসব বিনিয়োগকারী ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা শেষ পুঁজিটুকু ফিরে পাবেন কি না, তা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন।

রোববার (৪ এপ্রিল) সকাল ১০টা পর্যন্ত দেশের তৈরি পোশাক খাতের ১ হাজার ৯৯টি কারখানার ৯৪ কোটি ৫০ লাখ পোশাক পণ্যের রফতানি আদেশ বাতিল ও স্থগিত করা হয়েছে। যার পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায়  ২৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা (বিনিময় হার ৮৫ টাকা ধরে)। রফতানির আদেশ বাতিল হওয়া এসব কারখানায় ২১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন।

জানা গেছে, করোনার প্রভাবে পোশাক খাতে কাঁচামাল সরবরাহ সংকটে পড়তে হচ্ছে। কারণ দেশের পোশাক খাতের ওভেন পণ্য তৈরির প্রায় ৬০ শতাংশ কাপড় ও নিট পণ্য তৈরির প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করা হয় চীন থেকে। করোনার প্রভাবে দেশটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে এখন পোশাক খাত চাহিদা সংকটে পড়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শ্রমিকের বেতন পরিশোধে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শেয়ারবাজারে পোশাক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৫৬টি। গত ২৫ মার্চ পর্যন্ত লেনদেন হওয়া এই খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফেস ভ্যালু বা ইস্যু মূল্যের (১০ টাকা)নিচে শেয়ার রয়েছে ২৪টির। ফেস ভ্যালু ছুঁই ছুঁই অবস্থায় শেয়ার রয়েছে ৮টির। আর ফেস ভ্যালুর চেয়ে দ্বিগুণ দরের বেশি বা তার কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে ২৪টি কোম্পানির শেয়ার।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইয়িং ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ মঈন  বলেন, ‘করোনার প্রভাবে পোশাক সেক্টরে সর্বোচ্চ বিপর্যয় দেখা দেবে। আরও দুই মাস রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়বে।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘করোনার প্রভাবে সামনের দিনে কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ মুনাফার প্রত্যাশা করেছিল, তা অর্জন করা সম্ভব হবে না। আর ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের কোম্পানিগুলো দ্বিতীয় প্রান্তিকে এবং জুন ক্লোজিংয়ের কোম্পানিগুলো শেষ প্রান্তিকের (এপ্রিল থেকে জুন) ব্যবসায়  লোকসানের  আশঙ্কা রয়েছে।’

এদিকে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘করোনার প্রভাবে সব কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর প্রভাব কতদিন স্থায়ী হবে, তা কেউই সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না। এতে রফতানিনির্ভর পোশাক খাতের ওপর বেশি প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।’

শেয়ার বাজার বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারী সালাহ্ উদ্দীন আইয়ুবী বলেন, ‘করোনার প্রভাবে শেয়ার বাজারসহ দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের পোশাকশিল্প আমদানিনির্ভর। অধিকাংশ মেশিনের সুতা আমদানি করা হয় চীন থেকে। চীন থেকে আমদানিও বন্ধ।’ এ কারণে এই খাতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা বেশি বলেও তিনি মনে করেন।


ঢাকা/এনটি/এনই

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়