ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আশ্বাসেই থমকে আছে দুগ্ধজাত খামারিদের সংকট

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫২, ৬ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আশ্বাসেই থমকে আছে দুগ্ধজাত খামারিদের সংকট

ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসের কারণে চরম সংকটে পড়েছেন দেশের দুগ্ধজাত খামারিরা।  সংকট উত্তরণে এরইমধ্যে সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনসহ খামার সংশ্লিষ্টরা।  কিন্তু সরকারের বিভিন্ন খাদ্য বিতরণে দুগ্ধজাত পণ্যের অন্তর্ভুক্তি চেয়েও এখন পর্যন্ত আশ্বাস ছাড়া বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

খামারিদের দাবি- দুগ্ধজাত পণ্য যেমন গুঁড়াদুধ সরকারি ও সামাজিক সংগঠনগুলোর খাবার বিতরণের সঙ্গে যোগ করা হয় তাহলে একদিকে যেমন মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে, অন্যদিকে খামারিদের উৎপাদন করা দুধের ব্যবহার নিশ্চিত হবে।

খামারিদের দাবির সঙ্গে একই মত পোষণ করেছে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড মিল্কভিটাসহ অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ এপ্রিল মিল্কভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (যুগ্মসচিব) অমর চান বণিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি দিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রাজধানীসহ সারা দেশের অধিকাংশ মানুষই এখন বাধ্যতামূলকভাবে যার যার ঘরে অবস্থান করছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিপাকে পড়েছেন দুস্থ, অসহায় ও কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষেরা। এমন দুঃসময়ে প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশে ঐসব মানুষদের পাশে এসে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছেন সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।  ত্রাণকার্যে মিল্কভিটা উৎপাদিত গুঁড়োদুধ জি-টু-জি পদ্ধতিতে জেলা প্রশাসকরা সরাসরি ক্রয় করে ছিন্নমূল, অসহায় ও দুস্থ ও কর্মহীন মানুষের মধ্যে বিতরণ করলে দেশের সর্ববৃহৎ সমবায় প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার মাধ্যমে প্রান্তিক সমবায়ীরা উপকৃত হবেন’।

যদিও এখন পর্যন্ত সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনো আশ্বাস মেলেনি।  আর এ বিষয়ে মিল্কভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (যুগ্মসচিব) অমর চান বণিকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও জবাব পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি হতাশাজনক উল্লেখ করে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. এমরান হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, মন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে আমরা এই বিষয়ে দাবি জানিয়ে আসছি। মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত হলেও এখন পর্যন্ত সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ এখনো দেখছি না।  যতদ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে সমাধান দরকার।

বিভিন্ন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ দুগ্ধ খামার রয়েছে, যেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় সোয়া কোটি মানুষ।  যদিও বাস্তবে সংখ্যা আরো বেশি।  বর্তমানে দেশে বার্ষিক প্রায় ৯৯ লাখ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হচ্ছে, যা মোট চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ।  দেশের এ পরিস্থিতিতে দুধের বড় একটি অংশ অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। তাই সরকার ও দেশের দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতের কোম্পানিগুলোর সহযোগিতা না পেলে অচিরেই প্রায় ৫০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, মিষ্টিজাতীয় দোকানগুলো বন্ধ  ও বাজারে আগের মতো দুধের চাহিদা না থাকার কারণে দুধের প্রকৃত দাম পাচ্ছে না খামারিরা।  ফলে উভয় সংকটে পড়েছেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ খামারি।  চাহিদা না থাকায় ৫০ টাকা লিটারের দুধ বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়।  আবার গরুর বিভিন্ন খাদ্য যেমন- খৈল,ভুষি ইত্যাদির দাম কেজিতে বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি। বড় খামারিরা কয়েক মাস চালিয়ে নিতে সক্ষম হলেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খামারিরা পথে বসতে যাচ্ছেন। গো-খাদ্যের যোগান দিতে না পারায় এরই মধ্যে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা গরু বিক্রি করতে শুরু করেছেন।

তরল দুধ পাউডার দুধে রূপান্তরিত করে আপাতত সমাধান করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এমরান হোসেন বলেন, আমাদের দেশে মূলত তরল দুধ থেকে পাউডার দুধ উৎপাদন করে মিল্কভিটা, ব্রাক ও প্রাণের মতো কোম্পানি।  সমস্যা হচ্ছে তাদের পর্যাপ্ত উৎপাদন ক্ষমতা ও পাউডার দুধ রাখার মতো গোডাউন নেই। পাউডার মিল্ক চাইলে তৈরি করে যেকোনো গোডাউনে সংরক্ষণ করা যায় না। আবার এ মুহূর্তে বিশেষ ধরনের এ গোডাউনের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। তাই গুঁড়াদুধ যদি খাবার হিসেবে বিতরণ করা সম্ভব হয় তাহলেই কেবল আপাতত সমাধান সম্ভব।


ঢাকা/এম এ রহমান/জেডআর

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়