ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাসায় শবে বরাতের এবাদত নিয়ে যা বললেন শীর্ষ আলেমরা

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৩, ৮ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাসায় শবে বরাতের এবাদত নিয়ে যা বললেন শীর্ষ আলেমরা

পবিত্র শবে বরাত আজ। করোনাভাইরাসের কারণে মুসল্লিদের মসজিদের পরিবর্তে বাসায় এবাদত-বন্দেগি করার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

দেশের শীর্ষ আলেমরা বলছেন, পবিত্র শবে বরাতের এবাদত নফল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কবরস্থান, মাজারে সমাগম না করা এবং মসজিদের পরিবর্তে নিরাপদে বাসায় এবাদত-বন্দেগি করা এই মুহূর্তে শ্রেয়, ইসলামী শরিয়তসম্মত।

মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, আলেম, মাদ্রাসাসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন, বিশেষ করে গণমাধ্যমের প্রচার মুসল্লিদের বাসায় এবাদত-বন্দেগি নিশ্চিত করতে পারে।

পবিত্র শবে বরাতে মসজিদের পরিবর্তে মুসল্লিদের ঘরে এবাদত করার সরকারি নির্দেশনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত অভিহিত করে দেশের শীর্ষ আলেম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের চেয়ারম্যান আল্লামা মুফতি ওবায়দুল হক নঈমী বলেছেন, ‘সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন মুসিবতের সময় মসজিদের পরিবর্তে ঘরে এবাদত করা শুধু রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা নয় বরং শরিয়তের বিধানও। তাই সরকারি নির্দেশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এমন মহামারির সংক্রমণ থেকে নিজে বাঁচতে, মানুষকে বাঁচাতে নফল এবাদত, নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত সবকিছুই ঘরে করবেন। কবরস্থানে, মাজারে সমাগম করবেন না। ঘরে বসেই মা-বাবার আত্মার মাগফিরাত কামনায় ইছালে সাওয়াব করবেন। তাতেই কবুল হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও আলেম-ওলামারা। তারা মাগরিবের নামাজের পরে মসজিদে মাইকিং করে এ বিষয়ে পাড়া-মহল্লার মুসল্লিদের সতর্ক করতে পারেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ভূমিকা রাখতে পারেন। প্রশাসনকে কড়া মনিটরিং করতে হবে। তাহলে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন হবে বলে আমি মনে করি।’

মুসল্লিদের মসজিদে না গিয়ে ঘরে শবে বরাতের এবাদত করার আহ্বান জানিয়েছেন আল্লামা মুফতি ওবায়দুলক নঈমী।

শবে বরাতের এবাদত ব্যক্তিগত এবাদত, উল্লেখ করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সরকারি নির্দেশনা মেনে বাসায় শবে বরাত পালনের আহ্বান জানিয়েছেন ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ।

তিনি বলেছেন, ‘শবে বরাত আসলে মৌলিক এবাদত নয়, ব্যক্তিগত এবাদত। যেহেতু, দেশে স্বাভাবিক অবস্থা নেই, সেহেতু মহামারির ঝুঁকি এড়াতে শবে বরাতের নফল এবাদত মসজিদে না গিয়ে ঘরে করা উচিত। মুসল্লিদের ঘরে এবাদত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে মহল্লার ইমাম ও আলেমরা ভূমিকা রাখতে পারেন। কারণ, স্থানীয়রা তাদের কথা বেশি মানেন। তাদের মাধ্যমেই এ বিষয়টি ফলপ্রসূ হতে পারে।’

তিনি মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ বিষয়ে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রয়োজনে লকডাউন নয়, বরং কারফিউ জারির জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

জীবন বাঁচানো ফরজ, এ কথা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেছেন, ‘পবিত্র শবে বরাতে মসজিদের পরিবর্তে ঘরে এবাদত করার সরকারি নির্দেশনা সবারই মানা উচিত। করোনার সংক্রমণ এড়াতে যেখানে মসজিদে জুমা, জামাতে মুসল্লিদের যেতে না করা হয়েছে সেখানে শবে বরাতের মতো নফল এবাদত ঘরে করাই উত্তম। কারণ, জীবন বাঁচানো এখন ফরজ। নফল কাজ করতে গিয়ে নিজে বিপদে পড়বেন, অন্যকেও বিপদে ফেলবেন। ঘরে পড়ার ধর্মীয় বিধানও আছে। আল্লাহ পাক বলেছেন, তোমরা নিজেরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না। আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা আগুন থেকে নিজেরা বাঁচো, পরিবারকে বাঁচাও। করোনার মতো মহামুসিবত থেকে বাঁচতে হলে নিরাপদে ঘরে অবস্থান করে এবাদত করতে হবে। কারণ, পবিত্র মক্কা ও মদিনার মতো জায়গায় লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের বুঝতে হবে, সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।’

তিনি এ বিষয়ে ইমাম, আলেম-ওলামা ও প্রশাসনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

করোনাভাইরাস থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষায় মুসল্লিদের বাসায় নিরাপদে শবে বরাতের এবাদত করার আহ্বান জানিয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নির্বাহী মহাসচিব ও গবেষক আল্লামা মুফতি মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, ‘শবে বরাত নফল এবাদত। এই এবাদত নিয়ে আমাদের আবেগ আছে। কিন্তু প্রাণঘাতী এই মহামারি থেকে যেখানে বাঁচা ফরজ, সেখানে মসজিদে না যাওয়াই শ্রেয়। তবে কোনোভাবেই বল প্রয়োগ করা ঠিক হবে না, বরং কাউন্সেলিং করতে হবে। মুসল্লিদের মসজিদের পরিবর্তে ঘরমুখী করতে হলে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন ইমাম- মুয়াজ্জিনরা। তারা মহল্লায় এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করবেন। স্থানীয় আলেম-ওলামা, শিক্ষক, সমাজের গণমান্য ব্যক্তিবর্গ, গণমাধ্যমকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করলে শবে বরাতে ঘরে নামাজসহ এবাদত করার সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বিশেষ করে, ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ পেপার-পত্রিকায় দেশের শীর্ষ আলেমদের মতামত নিয়ে প্রচার করা হলে অনেক বেশি কাজ দেবে।’

এ বিষয়ে টিভিসহ গণমাধ্যমে আহলে সুন্নাতের উদ্যোগে কয়েকদিন ধরে সচেতনামূলক প্রচার চলছে বলেও জানান মুফতি আবুল কাসেম।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পবিত্র শবে বরাতের এবাদত ঘরে করতে সরকার নির্দেশনা দিয়েছে। দেশের শীর্ষ প্রায় সব আলেম-ওলামার অভিমত নিয়ে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটা মানা আমাদের সবার উচিত। নফল এবাদত করতে গিয়ে মানুষকে কোভাবেই ঝুঁকিতে ফেলা ঠিক হবে না। নিজ নিজ অবস্থান থেকে এ বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করতে হবে, করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। বেশি করে মানুষকে বোঝাতে হবে। তাহলে তারা বুঝতে পারবেন। পাড়া-মহল্লার মসজিদের খতিব, ইমাম ও আলেম-ওলামা যদি আন্তরিকভাবে কাজ করেন, তাহলে এ বিষয়টি বাস্তবায়ন সম্ভব।’

তিনিও সবাইকে শবে বরাতের এবাদত ঘরে করার আহ্বান জানিয়েছেন।

পবিত্র শবে বরাতের এবাদত-বন্দেগি ঘরে করার সরকারি নির্দেশনা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে ইমাম, মুয়াজ্জিন, আলেম-ওলামা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসনসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে তাদের সবাইকে এ বিষয়ে কাজ করতে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশা করি, সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন।’

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজে বাঁচতে হবে, অন্যকে বাঁচাতে হবে। এজন্য আপাতত মসজিদের পরিবর্তে ঘরে এবাদত-বন্দেগি করতে হবে।’


ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়