ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মার্চের বেতন পাননি বেশিরভাগ শ্রমিক

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫০, ১৪ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মার্চের বেতন পাননি বেশিরভাগ শ্রমিক

করোনাভাইরাসে সংক্রমণ যতই বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তৈরি পোশাকখাতের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ সংক্রান্ত জটিলতা। এপ্রিলে ১৪ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বেতন পাননি অর্ধেকের বেশি শ্রমিক।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে প্রায় ৪৫ লাখ শ্রমিক তৈরি পোশাক খাতে কাজ করেন। যদিও শ্রমিক সংগঠনগুলো দাবি, প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক গার্মেন্টসে কাজ করেন। যার মধ্যে আবার ৬০ শতাংশ নারী।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে ১৬ এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের কড়া নির্দেশনা রয়েছে। এমনকি বিজিএমই ও বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকেও একই নির্দেশনা রয়েছে।

যদিও শুরু থেকেই ১৬ এপ্রিলের ওই নির্দেশনা মানতে নারাজ শ্রমিক সংগঠনগুলো। সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার রাইজিংবিডির কাছে শ্রম আইন অনুযায়ী সাত কর্মদিবসের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, শ্রম আইনে আছে সাত কর্মদিবসের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে। বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক নিজেও ঘোষণা দিয়েছেন, সাত কর্মদিবসের মধ্যে বেতন দিবেন। তাহলে কেন একবার ১৪, একবার ১৬ এপ্রিলের সিদ্ধান্ত।

অন্যদিকে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি তৌহিদুর রহমান রাইজিংবিডিকে প্রায় একই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, অনেক কারখানাই এখন পর্যন্ত বেতন দিচ্ছে না।  যে কারণে ইতোমধ্যে সাভার, উত্তরা গাজীপুর ও মালিবাগসহ বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ হয়েছে। ঘটনা হচ্ছে, মালিকপক্ষ ১৬ তারিখের দিকে চেয়ে আছে।  অথচ গত ৭ এপ্রিল থেকেই ব্যাংক তিন ঘণ্টা করে খোলা ছিল।  মালিকপক্ষ যখন বেতন দেবেনই তখন ১৬ এপ্রিল দিতে হবে, এমন কোন কথা নেই। 

তৌহিদুর রহমান বলেন, যেহেতু ব্যাংক খোলা, তাই তারা চাইলে আগেই শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে পারেন। এখন পর্যন্ত ৪৮ থেকে ৫২ শতাংশ শ্রমিক বেতন পরিশোধ করা হয়নি। কেন মালিকপক্ষ সরকারের প্রণোদনার দিকে চেয়ে আছে। কেননা প্রণোদনা ব্যাংকিং চ্যানেলে পেতে পেতে এপ্রিল শেষ হয়ে যাবে।

অন্যদিকে গত ১৩ এপ্রিল এক বিবৃতিতে শ্রমিকদের মার্চের বেতন ১৬ এপ্রিলের মধ্যে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। বেতন দিতে ব্যর্থ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

এ বিষয়ে গার্মেন্টস মালিক ও বিজিএমইএ‘র পরিচালক রেজওয়ান সেলিম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমাদের দেশে মার্চ মাসে খুব কম শিপমেন্ট হয়েছে। আর এপ্রিল ও মে মাসে কোনো সিপমেন্ট হবে না। গত দেড় মাসে বাংলাদেশ থেকে কোনো রপ্তানি হচ্ছে না। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো সময় মতো বেতন কীভাবে দেবে?’

বিজিএমই’র সর্বশেষ হিসাবে দেশের ২২৭৪ তৈরি পোশাক শিল্প-কারখানার মধ্যে ৯১৭টির মালিকরা তাদের সাড়ে ১৬ লাখ শ্রমিকের মার্চ মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছেন। তাদের হিসাবেই এখনো ১৩৫৭ কারখানার শ্রমিক বেতন-ভাতা পাননি।

সংগঠনটির বলছে, ২২৭৪ কারখানার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ১২৪ কারখানা, গাজীপুরের ৩৫৯ কারখানা, নারায়ণগঞ্জ এলাকার ৮২, সাভার ২০৭, চিটাগাং ১১৪ এবং প্রত্যন্ত এলাকার ৪২ গার্মেন্টসের মধ্যে ৯১৭টি গার্মেন্টসের মালিকরা মোট ১৬ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করেছেন। সোমবার পর্যন্ত ১৩৫৭টি কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারেনি মালিকরা।

তবে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক ১৬ এপ্রিলের মধ্যে সব কারখানা মালিক তাদের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।


ঢাকা/এম এ রহমান/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়