ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পরিচালকদের শেয়ার ধারণের দায়বদ্ধতাই বিনিয়োগকারীদের আস্থা

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩০, ৫ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পরিচালকদের শেয়ার ধারণের দায়বদ্ধতাই বিনিয়োগকারীদের আস্থা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের দায়বদ্ধতা নির্ভর করে তাদের শেয়ার ধারণের ওপর। যেসব কোম্পানিতে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ বেশি, সেসব কোম্পানির ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের ওপর তাদের নজরদারি ও দায়-দায়িত্ব অনেক বেশি থাকে। ফলে তারা নিজেদের স্বার্থে এবং দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিয়ে থাকেন। আর এ বিষয়টি বিনিয়োগের আস্থা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টরা।

তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমন অনেক কোম্পানি রয়েছে, যাদের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশও শেয়ার নেই। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষা এবং দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ওই উদ্যোক্তা ও পরিচালকদেরকে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে বাধ্য করা জরুরি বলে মনে করেন তারা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩২১টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ১৮টি কোম্পানি রয়েছে যাদের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের স্ব স্ব কোম্পানিতে ৭০ শতাংশের অধিক শেয়ার ধারণ রয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে বহুজাতিক ও দেশীয় কোম্পানি আছে। উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বড় অংকের শেয়ার ধারণ করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বার্জার পেইন্টস ৯৫ শতাংশ, ইউনাইটেড পাওয়ার ৯০ শতাংশ, গ্রামীণফোন- ৯০ শতাংশ, পাওয়ার গ্রিড ৮৪.৬৪ শতাংশ, রেকিট বেনকিজার ৮২.৯৬ শতাংশ, গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ৮১.৯৮ শতাংশ, জেএমআই সিরিঞ্জ ৭৯.৬৫ শতাংশ, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৭৭.০৮ শতাংশ, কেডিএস এক্সেসরিজ ৭৬.১৫ শতাংশ, অ্যামবি ফার্মা ৭৫.২৫ শতাংশ, বিএটিবিসি ৭২.৯১ শতাংশ, আমান কটন ৭২.২০ শতাংশ, আরএকে সিরামিকস ৭২.০৬ শতাংশ, এমজেএল বিডি ৭১.৫৩ শতাংশ, রহিম টেক্স ৭০.৯৪ শতাংশ, বসুন্ধরা পেপার ৭০.৮৬ শতাংশ, বিএসআরএম স্টিলস ৭০.৫৩ শতাংশ এবং বাটা সু ৭০ শতাংশ।

এছাড়া, উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার ধারণ ৭০ থেকে ৫০ শতাংশ রয়েছে এমন বেশকিছু কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। ওই কোম্পানিগুলোও ধারাবাহিকভাবে লভ্যাংশ দিচ্ছে এবং শেয়ার দর ভালো অবস্থানে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বড় শেয়ার ধারণ থাকা কোম্পানিগুলো প্রাতিষ্ঠানিক সুশান মেনে চলে। এতে কোম্পানিগুলোতে অনিয়মের সম্ভাবনা কম থাকে। বর্তমানে ওই কোম্পানিগুলোর উৎপাদন ভালো অবস্থায় রয়েছে। ফলে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ কারণেই ওই কোম্পানিগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক ও বৈদেশিক বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে। পাশাপাশি, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো পরিমাণ নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ দিচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্যাপিটাল গেইনের পাশাপাশি ডিভিডেন্ড গেইনও করছেন। তবে উদ্যোক্তাদের হাতে বড় পরিমাণ শেয়ার থাকলেও আমান কটন ও বসুন্ধরা পেপারের ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটেছে। এ দুটি কোম্পানি থেকে বিনিয়োগকারী ক্যাপিটাল লস হয়েছে।

এছাড়া, উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বড় শেয়ার ধারণের কারণে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে প্রতিষ্ঠানিক ও বৈদেশিক বিনিয়োগ ভালো পরিমাণে রয়েছে। ফলে সার্বিক দিক বিবেচনায় কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের তালিকায় রয়েছে।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ারহোল্ডিং না থাকলে দায়বদ্ধতা থাকে না। দায়বদ্ধতার না থাকার কারণে কোম্পানিগুলো শেয়ারহোল্ডারদের ভালো লভ্যাংশ নেয় না। এ জন্য কোম্পানিগুলোতে বড় শেয়ার ধারণ রয়েছে এমন  প্রথম ১০ জন শেয়ারহোল্ডারদের নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা উচিত। এতে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের দায়বদ্ধতা বাড়বে। আমাদের পুঁজিবাজারে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বড় শেয়ার ধারণ করা কোম্পানির সংখ্যা কম রয়েছে। তবে ওই কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারহোল্ডিং স্ট্রাকচার নির্ধারণ করা খুবই প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বড় হোল্ডিং কোম্পানি কোম্পানিগুলো ভালো নগদ লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। তাদের সুশাসন ভালো। এ ক্রান্তিকালেও দু-একটি কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে। কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ প্রদানের এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আরো বাড়বে। এতে অন্যান্য কোম্পানিগুলোও অনুপ্রাণিত হবে।’

 

ঢাকা/এনটি/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়