ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনাকালে বন্যা: ত্রাণ বিতরণ ও পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় গুরুত্ব

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ১৪ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনাকালে বন্যা: ত্রাণ বিতরণ ও পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় গুরুত্ব

করোনা দুর্যোগের মধ্যেই বন‌্যাকবলিত হয়েছে ১৭টি জেলা। ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৭৪টি পরিবারের ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৭ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যাদুর্গত এলাকায় সাইক্লোন শেল্টার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ ও পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন পরিকল্পনা করেছে সরকার।

মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, সুনামগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ ১৭ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) থেকে জানানো হয়েছে, দেশের ১০টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যাদুর্গত এলাকায় অনেক ঘর-বাড়িতে পানি উঠেছে, রাস্তা ডুবে গেছে, যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নে সারডোব গ্রামের বাসিন্দা ফোরকান হোসেন জানিয়েছেন, ধরলা নদীর ভাঙনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অর্ধেকের বেশি নদীতে বিলীন হয়েছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে নদী তীরবর্তী ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আরো দুর্ভোগে পড়বেন। স্থানীয়রা ঘরবাড়ি ছেড়ে গবাদি পশুসহ বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যায় শাক-সবজিসহ নানা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে, অনেক জায়গায় পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েডের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে সরকার।   

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার ৫৬ ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। জেলা প্রশাসন থেকে ১৬০ মেট্রিক টন চাল, ৮ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। আরো ১০০ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে ৮ হাজার ২১০ টন চাল, ২ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৭৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, গোখাদ্য কেনার জন্য ৪৮ লাখ টাকা এবং শিশুখাদ্য কেনার জন্য ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বন্যাদুর্গত মানুষদের সহায়তা করতে ১০ জুলাই সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্যায় ফসল, মাছের ঘেরসহ বিভিন্ন ফসলের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নির্ধারণ করে তালিকা পাঠাতে কৃষি কর্মকর্তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে ৫০ হাজার করে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি জেলায় ২ হাজার লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন ৩টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল‌্যান্ট পাঠানো হয়েছে। নলকূপ মেরামতের প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা হয়েছে। সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও ব্লিচিং পাউডার পাঠানো হয়েছে। বন্যাকবলিত প্রতি জেলায় ২০০টি নতুন নলকূপ স্থাপনের জন্য মালামাল পাঠানো হয়েছে। ২০০টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। ১ হাজার নলকূপ জীবাণুমুক্তকরণের মালামাল পাঠানো হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, ‘বন্যায় সরকার জনগণের পাশে আছে। জেলা প্রশাসকদের চাহিদা অনুযায়ী সারা দেশে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তাসহ নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে।’


ঢাকা/আসাদ/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়