ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মাপকাঠি হবে ‘ক্লিন ইমেজ’

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৩, ২ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাপকাঠি হবে ‘ক্লিন ইমেজ’

দলকে আরো বেশি জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী করতে দুর্নীতিবাজদের ছেটে ফেলতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছে, সেটির প্রভাব আগামী ডিসেম্বরের কাউন্সিলেও দেখা যাবে।

দুর্নীতির গন্ধ রয়েছে এমন প্রভাবশালী নেতারাও ওই কাউন্সিলে পদ হারাবেন। অন্যদিকে ক্লিন ইমেজের নেতারা চলে আসবেন ফ্রন্ট লাইনে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলে পুরো দলকে ঢেলে সাজাতে ‘ক্লিন ইমেজকে’ প্রধান মানদণ্ড করছে দলটির হাইকমান্ড।

এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা তৃণমূলে সম্মেলন করছি, সংগঠনকে নতুন করে ঢেলে সাজাচ্ছি। এখানেও একটা ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। যারা অপকর্মের সাথে জড়িত, যাদের বিরুদ্ধে জনগণের অভিযোগ আছে, সেসব লোককে আমরা দলের নেতৃত্ব পদে বসাব না। এটাও আমাদের তৃণমূলে সম্মেলন করার একটা উদ্দেশ্য।’

“নেত্রীর সঙ্গে আলাপ করে যেটা বুঝেছি-ক্লিন ইমেজ, উজ্জ্বল ভাবমূর্তি যাদের রয়েছে, তারাই নির্বাহী কমিটিতে স্থান পাবেন এবং ভালো পদে যাবেন। গুরুত্বপূর্ণ পদেও যাবেন। যাদের ক্লিন ইমেজ আছে, পারফরমেন্স ভালো তাদের অবশ্যই আপগ্রেডেশন হবেই”, বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

দলীয় সূত্র বলছে, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি’ আওয়ামী লীগের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ইশতেহারে ছিলো এবং টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনায় কম-বেশি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানেও থেকেছে দলটি। তবে টানা তিন দফায় ক্ষমতায় থাকার কারনে কিছু দুর্নীতিবাজ এর সুযোগ নিয়েছে, যার মধ্যে দলের ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীলদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশও জড়িয়ে পড়েছে।

এসব দুর্নীতি তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগকে যেমন বিব্রত করছে, তেমনি উন্নয়নের অর্জনকেও ম্লান করছে। এজন্য একপ্রকার দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের। সেজন্য এবারের যে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে, তার ব্যাপকতা থাকবে দীর্ঘমেয়াদে-এমনটাই বলছেন দলটির নীতি নির্ধারকরা।

তারা জানান, আগামী কাউন্সিলে সবচেয়ে বড় চমকের দেখা মিলবে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে অনেক প্রভাবশালী নেতার নামের পাশেই লাল দাগ পড়ে গেছে। দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের প্রামান‌্য রিপোর্ট এরই মধ্যে দলের হাইকমান্ডের নজরে এসেছে। অর্থাৎ কাউন্সিলে অনেক হেভিওয়েট নেতারা পদ হারালে, অবাক হওয়ার থাকবে না। আবার অনেক প্রতিশ্রুতিশীল নেতা উঠে আসবেন, যাদের নামের পাশে ‘ক্লিন ইমেজ’ তকমা আছে।

তৃণমূলে কাউন্সিলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন নেতারা জানিয়েছেন, দুর্নীতিবিরোধী এই অভিযানে শুধু কেন্দ্রীয় নেতারাই নয়, এর আওতায় আসছে তৃণেমূলের পর্যায়ের নেতারাও। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলনের যে নির্দেশ রয়েছে, তাতে ক্লিন ইমেজের নেতাদের তুলে আনা হবে।

জানা গেছে, স্থানীয় গোয়েন্দা রিপোর্টে নেতাদের চারিত্রিক ডাটা এখন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রয়েছে। কাউন্সিলে এসব দুর্নীতিবাজদের কোনঠাসা করে ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের শীর্ষ পদগুলোতে দায়িত্ব দেয়া হবে। এর মাধ্যমে তৃনমূল যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় যোগ্যরা মূল‌্যায়িত হবেন।

তৃণমূলের সম্মেলনের জন্য এরই মধ্যে ৮ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা মাঠে নেমে পড়েছেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সম্মেলনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘যে সব ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ, সেগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কমিটি হবে। প্রথমত যেগুলো বেশি মেয়াদ উত্তীর্ণ অর্থাৎ ২০১২ সাল এবং তার আগের, সেগুলোর কমিটি আগে হবে। আমাদের টার্গেট, ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করব তৃণমূলের সম্মেলন। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন জেলায় নেতারা সফরে যাচ্ছেন। জেলাভিত্তিক প্রতিনিধি সম্মেলন হচ্ছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন তারিখ নির্ধারণ করাটাই মূল উদ্দেশ্য।’

দলের দু’জন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, দুর্নীতির কারণে এবং এর সঙ্গে দলের কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ায় সরকারের ভাবমূর্তি খুব বিপন্ন হয়েছে। এতে সরকার যে বিস্ময়কর উন্নয়ন গত দশ বছরে করেছে, সেটিও ম্লান করে ফেলেছে তারা। এ অবস্থায় দল ও সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় আর কোনও ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকে আছেন নজরদারিতে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ উইপোকায় ধ্বংস করা থেকে রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

তিনি বলেন, ‘আমরা চলতি বাজেটে ১৭৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। দুর্নীতিবাজ উইপোকাগুলো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকালে অর্থ লুটে নিচ্ছে। দেশের উন্নয়নের জন্য জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের প্রতিটি পয়সার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য আমাদের ওইসব উইপোকাকে আটক করতে হবে।’

“আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত রাখব। এই সব অপকর্মের সাথে জড়িত থাকলে দল, পরিবার নির্বিশেষে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। আমি দেশের দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।”

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দল ও প্রশাসনে থাকা দুর্নীতি দূর করাটা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ এর সঙ্গে দলের অনেক প্রভাবশালী নেতা এবং প্রশাসনের উর্ধ্বতনরাও জড়িয়ে পড়েছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের যে নীতি নিয়ে সরকার অভিযান চালাচ্ছেন, সেটি সফলতার সঙ্গে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। কারণ এর মাধ্যমে সাধারণ জনগণের পূর্ন সমর্থন রয়েছে। এর মাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি তো বটেই, সরকারের পক্ষেও জনসমর্থনও হুহ হু করে বাড়বে।   

আওয়ামী লীগের ২১ তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। তিন বছর পর পর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হয়। ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর ২০তম সম্মেলনে দলটির সভাপতি পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা অষ্টমবারের মতো নির্বাচিত হন। আর সাধারণ সম্পাদক পদ পান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।


ঢাকা/পারভেজ/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়