ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বুয়েট ক্যাম্পাসে মাদকের ছড়াছড়ি!

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ২৩ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বুয়েট ক্যাম্পাসে মাদকের ছড়াছড়ি!

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবাধে চলছে মাদক সেবন ও অশ্লীল কর্মকাণ্ড। স্থানগুলোতে ফেনসিডিল, মদ ও বিয়ারের খালি বোতলের স্তুপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

ক্যাম্পাসজুড়ে নিরাপত্তা প্রহরী থাকলেও মাদকসেবীদের ভয়ে অসহায় তারা। মাদকসেবীরা ক‌্যাম্পাসেরই শিক্ষার্থী। তবে ক‌্যাম্পাসের সিনিয়ররাও (পাশ করে বেরিয়ে গেছেন) এসব আসরে মাঝে মাঝে যোগ দেন বলে জানা গেছে। তাদের নামে শুধু মাদক সেবনই নয়, নারী ঘটিত অশ্লীল কর্মকাণ্ডের অভিযোগও আছে।

অভিযোগ রয়েছে, ক‌্যাম্পাসের বেশ কয়েকটি স্থানে অবাধে মাদকের আস্তানা গড়ে তোলা হয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে বুয়েট প্রশাসন দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ক্যাম্পাসজুড়ে সিসিটিভি থাকলেও প্রশাসন মাদকসেবীদের সনাক্ত করণে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি।

সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, বুয়েট ক্যাম্পাসের মূল অডিটরিয়ামের পেছনে, মূল ক্যাফেটেরিয়া চত্বরের সামনে, স্থাপত্যকলা বিভাগসহ বিভিন্ন স্থানে ফেনসিডিল, বিয়ারসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব্যের খালি বোতল পড়ে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্ধ্যার পর থেকেই ক‌্যাম্পাসের নির্দিষ্ট স্থানগুলিতে আড্ডা বসে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে আড্ডা। সেই আড্ডাতেই চলে মাদক সেবন। এই পরিবেশের সাথে মাদকসেবীরা এতটাই অভ‌্যস্ত যে, সেবনের পর মাদকের পরিশিষ্ট বা বোতলগুলি সরানোর প্রয়োজনও মনে করেন না তারা। সেজন‌্য বিভিন্ন স্থানে মাদকসেবনের বর্জ্য স্তুপ হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

বুয়েটের ক্যাম্পাসে প্রায় দেড়শ’ নিরাপত্তা প্রহরী দায়িত্বে নিয়োজিত। মাদকসেবনের বিষয়ে বিস্তারিত জানলেও ভয়ে বাধা দেন না তারা। এর আগে বাধা দিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন অনেকেই। মারধর ও লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে এখন তারা কিছুই বলেন না।

একাধিক নিরাপত্তা কর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতরে মাদকসেবীদের আড্ডা জমে উঠেছে। তারা সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন করেন। শুধু মাদকসেবনই নয়, নানা অশ্লীল কার্যক্রমও চলে। তারা বিষয়টি কয়েকবার প্রশাসনকে জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে অবিযোগ তাদের।

নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, সম্প্রতি আবরার হত্যাকাণ্ডের পর মাদক সেবন ও অশ্লীলতা বন্ধে বুয়েট প্রশাসনকে তারা লিখিত সুপারিশ করেছেন। সেই সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- রাত ১০টার পর কোনো ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না; ১২টার পর সব ফটকে তালার ব্যবস্থা করতে হবে; স্থাপত্যকলা বিভাগে সন্ধ্যার পর কেউ উপস্থিত থাকতে পারবে না; শুধুমাত্র ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় একজন শিক্ষকের উপস্থিতিতে রাত ৯টা পর্যন্ত থাকতে পারবে। বিভিন্ন বিভাগের সামনে রাজনৈতিক কর্নারগুলো ভেঙ্গে ফেলতে হবে এবং আবাসিক হলের চারপাশে অস্থায়ী দোকান বসানো যাবে না। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থাপত্যকলা বিভাগের ১৬তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী জানান, বুয়েটের সিনিয়র ছেলে-মেয়েরা সন্ধ্যার পর আড্ডা জমান। তাদের কেউ কেউ মাদকসেবন করে আনাচে কানাচে বোতল ফেলে রাখেন।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মাঝে মাঝে সাবেক শিক্ষার্থীদেরও মাদকসেবন করতে দেখা যায়। বুয়েট প্রশাসনও এ বিষয়ে অবগত। এটা নিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যেও আলোচনা হয়। এসবের ফলে বুয়েটের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে এসব বন্ধ করে ক‌্যাম্পাসে সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) অধ্যাপক মিজানুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘যেসব জায়গায় এসব হচ্ছে আমরা সেসব জায়গায় পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা করব। পাশাপাশি স্থাপত্যকলাসহ যেসব ভবনে বহিরাগতদের অনৈতিক কাজ চলার অভিযোগ আছে, সেসব নিয়ে ভিসি এবং রেজিস্ট্রারের সাথে আলোচনা করা হবে। আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে কোনো নিয়ম কানুন করা যায় কি না সেসব বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে। এ বিষয়ে দায়িত্বে আছেন রেজিস্ট্রার। আপনি তার সাথে কথা বলতে পারেন।’

জানতে চাইলে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এ এস এম মাহবুবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। বহিরাগতরা মাদক সেবন করে এখানে মাদকের খালি বোতল ফেলে যায়। এসব কাজে আমাদের শিক্ষার্থীরা জড়িত কি না তা সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে নিরাপত্তা প্রহরীকে এ ব্যাপারে আরো নজরদারী বাড়াতে নির্দেশ দেয়া হবে।’

সম্প্রতি ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটের নানাদিক আলোচনায় আসে। জানা যায়, আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কেউ কেউ মদ্যপ ছিলেন। সংশ্লিষ্টরা চান শিগগিরই এসব অপকর্ম বন্ধ হোক।

মাদক সেবনের বিষয়টি নিয়ে বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে এ প্রতিবেদককে সময় দেননি তিনি।




ঢাকা/ইয়ামিন/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়