ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা: মানছে না স্বাস্থ্যবিধি, বাড়ছে করোনার ঝুঁকি

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ১২ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ঈদের কেনাকাটা: মানছে না স্বাস্থ্যবিধি, বাড়ছে করোনার ঝুঁকি

বদলে গেছে রাজধানীর চিত্র। শুরু হয়েছে ঈদ উৎসবের আমেজ। খুলে দেওয়া মার্কেটগুলোতে বিরাজ করছে কোলাহলমুখর পরিবেশ। গায়ে গা মিশিয়ে, পায়ে পা লাগিয়ে অবিরাম চলছেন সবাই। সবার লক্ষ্য ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা করা। অন্যান্য বছরের মতো না হলেও মোটামুটি দুই দিনের ব্যবধানেই সেজেছে দোকানগুলো। এসব দেখে কারো মনে হওয়ার উপায় নেই যে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলছে।

মঙ্গলবার (১২ মে)  রাজধানীর শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, খিলগাঁও তালতলা মার্কেট ও মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

যেন করোনার আতঙ্ক মিলিয়ে গেছে। জমে উঠেছে বেচাকেনা। বিক্রেতাদের হাসিমুখই দিচ্ছে তার প্রমাণ। পোশাক এবং মোবাইল ফোনের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বেশি।

এদিকে, এসব মার্কেটের অনেক জায়গায় মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। যদিও মার্কেটের প্রবেশপথে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও। তবে মানুষের তুলনায় এ ব্যবস্থা অপ্রতুল। করোনার সংক্রমণ রোধে তিন ফিট দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হলেও কোনো দোকানি বা ক্রেতা তা মানছে না।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা পেটের দায়েই দোকান খুলেছেন। দীর্ঘদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করায় সেই ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা হলেও কমিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

শনির আখড়া আয়শা মোশাররফ মার্কেটের নিউ ক্লাসিক ফেব্রিকস দোকানের সামনে জনসমাগম দেখা যায়। কোনো ধরনের সামাজিক দূরত্ব মানা হয়নি সেখানে। জানতে চাইলে দোকানের কর্মচারী আরিফ জানান, কাস্টমারদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বলা হয়। কিন্তু তারা সেটা মানেন না।

আয়শা মোশাররফ মার্কেটের পাশেই অবস্থিত আরএস শপিং কমপ্লেক্স। সেখানে ঢোকার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, তাপমাত্রা মাপা ও জীবাণুনাশক স্প্রে করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাইকে ক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখারও অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু মার্কেটে ঢোকার পর ক্রেতারা সামাজিক দূরত্ব মানছেন না।

আরএস শপিং কমপ্লেক্সের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত কর্মচারী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হাত ধোয়া, তাপমাত্রা মাপা, স্প্রে করা ছাড়া আমরা কাউকে ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছি না। সামজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাইকিং করছি। ক্রেতাদেরও তো সচেতন হতে হবে।’

আয়শা মোশাররফ সুপার মার্কেট কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কোথাও কি সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে? তারপরও এখানে ভালোই মানা হচ্ছে। হাত ধোয়া, স্প্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর যারা কেনাকাটা করতে আছেন তাদেরও সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত।’

যাত্রাবাড়ী তাজ সুপার মার্কেটে হোসনেয়ারা এন্টারপ্রাইজের কর্মচারী ফারহান জানান, এই মার্কেটে মাস্ক, গ্লাভস ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। তাপমাত্রাও মাপা হচ্ছে। মার্কেটে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বেচাকেনা চলছে।

প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘কোভিড-১৯ প্রতিরোধের যে কয়েকটি ধাপ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ধাপ হলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। সরকার করোনার প্রার্দুভাব ঠেকাতে সাধারণ ছুটি বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে, গার্মেন্টস-মার্কেট খুলে দিচ্ছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে মানুষ কনফিউজড। আইন প্রয়োগ ছাড়া মানুষকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব না।’

তিনি বলেন, ‘যে পরিমাণ করোনা পরীক্ষা করা দরকার তার ভগ্নাংশ আমরা করছি। কাজেই আমরা ভয়ঙ্কর একটা সময়ের দিকে যাচ্ছি। আইনও মানব, আবার বাইরেও বের হবো—এভাবে দুই নৌকায় পা দেওয়া যায় না। ১০ থেকে ১৫ ভাগ মানুষ আইন মেনে চলে, আর ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ মানে না। আইন প্রয়োগ করেই আমাদের এ সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে দুঃসহ সময় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।’

 

ঢাকা/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়