ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অনিশ্চিত হজযাত্রা, সিদ্ধান্ত ১৫ জুনের পর

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ৪ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
অনিশ্চিত হজযাত্রা, সিদ্ধান্ত ১৫ জুনের পর

ফাইল ফটো

হজের আর দুই মাসও বাকী নেই। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩০ জুলাই (৯ জিলহজ্ব) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। হাতে একেবারে কম সময়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে হজ আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কিনা এখনো জানেন না কেউ। করোনার কারণে গত মার্চ মাস থেকে বন্ধ রয়েছে হজের সব কার্যক্রম।

বর্তমান পরিস্থিতিতে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে কিনা এ সিদ্ধান্তের জন্য সৌদি আরব সরকারের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে হজের চূড়ান্ত নিবন্ধনও শেষ করে রেখেছে সরকার। বাকী রয়েছে সৌদি অংশের হোটেল, ট্রান্সপোর্ট ইত্যাদি কার্যক্রম।

ধর্মমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার হজ অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা জানা যাবে ১৫ জুন কিংবা তার পরে। এসময়ে সৌদি সরকার হ্যাঁ- না যে কোনো একটা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। আর সৌদি সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে বাংলাদেশ সরকার দেশের করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী কার্যক্রম চালু করবে বাংলাদেশ।

হজ আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কিনা- কবে জানা যাবে সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে বুধবার রাতে ধর্মমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ রাইজিংবিডিকে জানান, আশা করছি ১৫ জুনের দিকে হজের বিষয়ে সৌদি সরকারের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আমরা সৌদি সরকারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। যেই সিদ্ধান্তই আসুক না কেন আমরা প্রস্তুত। তাদের সিদ্ধান্ত আসার পরে আমরা আলোচনা করবো। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী হজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সৌদি আরবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে যাওয়ায় লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। পবিত্র বায়তুল্লাহ শরীফ বন্ধ রেখে পবিত্র মসজিদে নববীসহ সেদেশের সব মসজিদ দীর্ঘ ৭৭দিন পর খুলে দিয়েছে সৌদি সরকার। গত ৩১ মে থেকে সৌদি আরবের সব মসজিদে শুরু হয়েছে জামাতে নামাজ আদায়। মুসল্লিদের স্বাস্থ্যবিধিসহ বেশ কিছু শর্ত মেনে নামাজ আদায় করতে হচেছ। এরমধ্য দিয়ে সীমিত পরিসরে হলেও হজের দুয়ার খুলতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হজ অনুষ্ঠানের সুরক্ষার জন্যই আপাতত পবিত্র বায়তুল্লাহ শরীফ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যাতে সবধরনের ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখা যায়।

সূত্রমতে, সৌদি সরকার ১৫ জুন কিংবা পরে যে কোনো দিন হজ কার্যক্রম চালু করবে কিনা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। যদি হজ চালুর সিদ্ধান্ত আসে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী যাবে কিনা তা করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। দিন যতই বাড়ছে ততই বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এমতাবস্থায় ঝুঁকি এড়িয়ে সম্পূর্ণ সুরক্ষায় বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী সৌদি আরবে আদৌ যেতে পারবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। তাছাড়া হজের সঙ্গে সরকারের বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কর্মযজ্ঞ জড়িত। করোনার এ সময়ে তারা কতটুকু প্রস্তুত সেটাও দেখার বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে হজের বিষয় পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা নেওয়া হবে। সবকিছু বিবেচনা করেই হজের সিদ্ধান্ত নেবে ধর্মমন্ত্রণালয়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে হজযাত্রা হবে কিনা জানতে চাইলে ধর্মসচিব নুরুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে জানান, আমরা জেনেছি, প্রথম কিংবা দ্বিতীয় সপ্তাহে এ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে যেই সিদ্ধান্তই আসুক না কেন ধর্মমন্ত্রণালয় একক কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। পরিস্থিতি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনার পর এ বিষয়ে বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, হজের কার্যক্রমের সঙ্গে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত। বিমানের কাজ রয়েছে। তাদের ক্লিয়ারেন্স লাগবে। এখন যে পরিস্থিতি তাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স লাগবে। সবকিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান সচিব।

এদিকে এবার হজ পালনের জন্য বাংলাদেশের ৬৫ হাজার ৫১২ হজযাত্রী চূড়ান্ত নিবন্ধন করে পবিত্র হজ পালনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। সৌদি সরকার হজ চালু করলে এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের হজযাত্রীরা হজে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

তবে এ পরিস্থিতিতেও যাত্রীরা হজের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ হজযাত্রী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের।

তিনি বলেন, সৌদি আরবে করোনা সংক্রমণ কমে এসেছে। পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। এসময়ে যদি হজ কার্যক্রম চালু করা হয় তাহলে আমাদের যাত্রীরা যেতে পারবেন। কারণ বাংলাদেশ অংশের কাজ শেষ, সৌদি আরবের অংশে হোটেল চুক্তি, ট্রান্সপোর্ট, মিনা মোযাদালিফায় তাবুতে থাকাসহ বাকী কাজ করতে লাগবে মাত্র ৫থেকে ১০দিন। সরকার চাইলে হজযাত্রীদের পাঠানো সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।

হজের সর্বশেষ প্রস্তুতি জানতে চাইলে হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন ‘হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদত হোসাইন তসলিম বলেন, আমাদের ৬৫ হাজার ৫১২ নিবন্ধনকারী হজযাত্রী হজের জন্য প্রস্তুত। এখন সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। পরের সপ্তাহে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আশা করছি, প্রতিবছরের মতো এবারও হজ অনুষ্ঠিত হবে। এখন সেটা সীমিত পরিসরে, না ঘটা করে, তা সৌদি সিদ্ধান্ত ও দেশের করোনা পরিস্থিতিরে ওপর নির্ভর করছে।

সৌদি সরকারের সঙ্গে ২০২০ সালের হজ চুক্তি অনুযায়ী এবার হজে যেতে পারবেন এক লাখ ৩৭ হাজার বাংলাদেশি। এর মধ্যে ১৭ হাজার ১৯৮ জন যাবেন সরকারি ব্যবস্থাপনায়, বাকি ১ লাখ ১০ হাজার হজযাত্রী বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এবার সরকারি- বেসরকারি মিলিয়ে হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন করেছেন ৬৫ হাজার ৫১২জন হজযাত্রী।

করোনা পরিস্থিতিতে সৌদি সিদ্ধান্ত এবং বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে নিবন্ধনকারী সবাই আদৌ হজে যেতে পারবেন কিনা? গেলে কতজন হজযাত্রী হজে যাবেন। কারণ করোনার কারণে সীমিত আকারে হজ অনুষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী কমে যাবে।



নঈমুদ্দীন/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়