ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

রাজস্ব ফাঁকি রোধে ঋণ ছাড়ে ভ্যাট গোয়েন্দার নজরদারি

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৩ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
রাজস্ব ফাঁকি রোধে ঋণ ছাড়ে ভ্যাট গোয়েন্দার নজরদারি

রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে এবার বাণিজ‌্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ অনুমোদনের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বা মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

ভ্যাট গোয়েন্দার কাছে তথ্য আছে, কিছু কিছু কোম্পানি বা ব্যবসায়ী বাড়তি সুবিধা আদায় করতে ভুয়া ভ্যাট রিটার্ন ও অডিট রিপোর্ট দেখিয়ে ঋণ নিচ্ছে। সম্প্রতি ভ্যাট গোয়েন্দার তদন্তে এমন কিছু তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পর নতুন নজরদারি শুরু করেছে সংস্থাটি।

এর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি দিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। কোনো কোম্পানির ভ্যাট রিটার্ন এবং আর্থিক প্রতিবেদন বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা রিপোর্টে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ভ্যাট গোয়েন্দাকে জানাতে বলা হয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমানের সই করা ওই চিঠিতে ব্যবসায় যেকোনো ঋণ আবেদন অনুমোদনের আগে ভ্যাট রিটার্নসহ আর্থিক প্রতিবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়েছে।  

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বরাবর ওই চিঠি দেওয়া হয়। দেশের সকল তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছেও নির্দেশনা পৌঁছে দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মুসফিকুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সরকারের রাজস্ব আয়ের পথকে আরো গতিশীল ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই এ উদ্যোগ। কোনো কোনো ব্যবসায়ী অনেক সময় ব্যাংক ও এনবিআরে ভিন্ন নথিপত্র দেখিয়ে ঋণ নিয়ে থাকে। এতে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়, অন্যদিকে ঋণের টাকা ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রেও ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমাদের কাছে বেশকিছু ঘটনাও ধরা পড়েছে। এজন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

চিঠিতে বলা হয়েছে, করদাতারা তাদের প্রতি কর মেয়াদের ক্রয়-বিক্রয় ও আর্থিক লেনদেনের বিবরণ দাখিলপত্রের মাধ্যমে মূসক দপ্তরে দাখিল করে থাকেন। উক্ত দাখিলপত্রের মাধ্যমেই তার সকল কর দায়িতার বিবরণ ও কর পরিশোধের তথ্য মূসক দপ্তর তথা সরকার অবহিত হয়ে থাকে। তাই দাখিলপত্র মূসক আইনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং দাখিলপত্রে প্রদর্শিত তথ্য-উপাত্তের সাথে করদাতার বার্ষিক আর্থিক বিবরণী বা নিরীক্ষা প্রতিবেদন সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া বাঞ্ছনীয়।

কিন্তু মূসক দপ্তরসমূহ কর্তৃক বিভিন্ন করদাতাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের নিরীক্ষা পরিচালনাকালে প্রায়ই দাখিলপত্রে প্রদর্শিত বিক্রয় ‍ও টার্নওভারের সাথে বার্ষিক আর্থিক বিবরণী কিংবা অডিট রিপোর্ট প্রদর্শিত তথ্যের গরমিল দেখা গেছে। করদাতাদের এ ধরনের কার্যক্রমের ফলে ব্যবসায়ের প্রকৃত টার্নওভার অপ্রদর্শিত থেকে যাচ্ছে।  ফলে সরকার প্রকৃত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড মূসক আইনের পাশাপাশি ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন ২০১৫ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোর ঋণ অনুমোদনের আগে ১০০ শতাংশ রপ্তানিমুখী ব্যতীত মূসক রিটার্ন এবং আর্থিক প্রতিবেদন বা কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা রিপোর্টে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরকে অবহিত করা আবশ্যক। অন্যথায়, পরবর্তীতে ব্যাংকে দাখিলকৃত আর্থিক প্রতিবেদনের সাথে মূসক দপ্তরে দাখিলকৃত রিটার্নে অসঙ্গতি পাওয়া গেলে ব্যাংক কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন।

অভিযোগ রয়েছে, অনেক ব্যবসায় ভ্যাট ফাঁকি দিতে এবং বাড়তি ঋণ সুবিধা পেতে ব্যাংকগুলোকে দেওয়া নথিপত্রে প্রকৃত টার্নওভার ঘোষণা না দিয়ে স্বল্প বিক্রয় ও টার্নওভারসহ ভ্যাট অফিস ও ব্যাংকগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন আর্থিক প্রতিবেদন বা অডিট রিপোর্ট জমা দেয়। এর আগে ব্যবসায়ীদের এরকম অসঙ্গতিগুলো শনাক্ত করার পরে ভ্যাট গোয়েন্দা অফিস এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছিল।

এদিকে, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, জুম, স্কাইপে, প্রাইম, জেডইই, হইচই এবং এইচবিও’র মতো অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটগুলোর সাবস্ক্রিপশন ফি থেকে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আদায়ে পদেক্ষপ নেওয়ার জন্যও বাংলাদেশ ব্যাংককে পদক্ষেপ নিতে পৃথক আরো একটি চিঠি দিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা। অনলাইন সাইটগুলোর সাবস্ক্রিপশন ফি’র ওপর প্রযোজ্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায়ে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ওই চিঠি দেয় তারা।


ঢাকা/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়