ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কোরবানির পশুর অর্ধেক চামড়া নষ্ট হওয়ার শঙ্কা

শাহ আলম খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২৪ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
কোরবানির পশুর অর্ধেক চামড়া নষ্ট হওয়ার শঙ্কা

কোরবানির ঈদের আর মাত্র ৭ দিন।  কিন্তু এখনো পশুর চামড়া সংগ্রহ-সংরক্ষণে নীতি-নির্ধারণ করা হয়নি।  ব্যাংক, ট্যানারি মালিক, চামড়া বেপারি, ফড়িয়া, মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ—কারও মধ‌্যেই চামড়া সংরক্ষণে প্রস্তুতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে অর্ধেকের বেশি চামড়াই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

ট্যানারি মালিক ও আড়ৎদাররা বলছেন, চামড়া খাতে নগদ অর্থের সংকট তৈরি হয়েছে।  আবার আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার মূল্য ও চাহিদারও পতন ঘটেছে।  এই দুই কারণে চামড়ার মূল্য ঠিক করা সম্ভব হয়নি।  দ্রুত বিষয়গুলোর সুরাহা না হলে চামড়া কিনে সময়মতো সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চামড়া ব্যবসায়ী মো. রবিউল আলম বলেন, ‘শুধু ট্যানারি মালিক ও আড়ৎদারদের দিয়ে কোরবানির চামড়া রক্ষা করা যাবে না।  এজন্য সারাদেশের মৌসুমি ব্যবসায়ী, পাড়া-মহল্লার সংঘবদ্ধ তরুণ দল ও মাদ্রাসাগুলোকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে হবে। ’  

রবিউল আলম আরও বলেন, ‘২১ বর্গফুট চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ৪০০ টাকা ধরলে পরিবহন, লেবার, গুদামভাড়া, বিদ্যুৎ খরচ ও লবণজাত করা পর্যন্ত আরও ২৫০ টাকা খরচ পড়বে।  যদি লবণজাত চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ৬৫০ টাকা হয়, আর ট্যানারি মালিকরা তার মুল্য ৫০০ টাকা ধরেন, তাহলে কেউ চামড়া কিনতে আসবেন না।  এই কারণেই মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসাগুলোর তৎপরতা কম। ’

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর কোরবানির আগে সরকারি উদ্যোগে পশুর চামড়া ছাড়ানোর নিয়ম, চামড়ায় লবণের পরিমাণ দেওয়ার নিয়ম বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।  এবার করোনায় সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া  সম্ভব হয়নি।  ফলে মাঠপর্যায়ে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

এদিকে, কোরবানির চামড়া কেনায় ব্যাংকগুলো এবার কী পরিমাণ ঋণ দেবে, কতজন ট্যানারি মালিক এই ঋণ নিতে পারবেন, তারও সুরাহা হয়নি।  এর ফলে নগদ অর্থের অভাবে ট্যানারি মালিকরা সারাদেশে ফড়িয়াদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ পৌঁছাতে পারেননি।   

এই প্রসঙ্গে  জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ‘দুই-একদিনের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে বৈঠকে বসবো।  তখনই আলোচনার মাধ‌্যমে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তবে, টাকার সংকট না কাটলে চামড়া রক্ষার ইস্যুটি এবার ঝুঁকির মধ্যেই থেকে যাবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস ফুটওয়্যার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, ‘এবার চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা না করা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে।  তবে, ঈদের দুই-তিন দিন আগেই সব কিছু পরিষ্কার হবে। মূল্য নির্ধারণ হলে কাঁচাচামড়া ও লবণজাত চামড়ার প্রতিবর্গফুট কত হবে, তা চামড়াসংশ্লিষ্টরা জানতে পারবেন।  মাঠপর্যায়ে সেই দামে সবাইকে চামড়া কিনতে হবে। যারা কিনবেন, তারা লাভ-ক্ষতির ধারণা নিয়েই মাঠে নামবেন।’

মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন আরও বলেন, ‘লবণ মেশানো চামড়ার প্রক্রিয়াজাতকরণে ৬ মাস দেরি হলেও সমস্যা নেই। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কাঁচাচামড়া সংগ্রহ-সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায়। এক্ষেত্রে প্রস্তুতির ঘাটতি থাকলেও দ্রুত লবণ মেশাতে পারলে ক্ষতির আশঙ্কা নেই।’ এ জন্য চামড়া খাতসংশ্লিষ্টদের ঈদের দিনের মাত্র কয়েক ঘণ্টার সতর্কতা জরুরি বলেও তিনি মন্তব‌্য করেন।

শাহ আলম খান/এনই

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়