গবেষণায় আগ্রহ নেই ঢাবির, শিক্ষকরা ব্যস্ত বাড়তি উপার্জনে
আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম
দিনে দিনে কমে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) গবেষণা কাজ। আর শিক্ষকরা ঝুঁকে পড়ছেন সান্ধ্যকালীন কোর্সের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষকরা ‘জ্ঞানচর্চা-বিতরণের চেয়ে বাড়তি অর্থ উপার্জন’কে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গবেষণা কমে যাওয়ার পেছনে তারা এই খাতের বাজেট-স্বল্পতাকেও দায়ী করেন।
জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. একরামুল কবির বলেন, ‘শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। আর পেশা ও চাকরি দুটি এক জিনিস নয়। এখন অনেকেই শিক্ষকতাকে শুধু চাকরি হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ’
ড. একরামুল কবির আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছে অনেক বেশি টাকা নিয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স পরিচালনা করা হচ্ছে। শিক্ষকরা সেখানে এক ঘণ্টা সময় দিয়ে প্রচুর পরিমাণে আয় করছেন। একারণে তারা গবেষণায় বেশি সময় দিচ্ছেন না।’
ঢাবির গবেষণা খাতে বাজেট কম বলে মন্তব্য করেছেন ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘গবেষণার জন্য ইনস্টিটিউট-গবেষণাগুলো যেন বিজ্ঞপ্তি দেয়, সেখানে অনেক শিক্ষক আবেদন করেন। কিন্তু তাদের জন্য যে বরাদ্দ রাখা হয়, তার পরিমাণ খুবই কম। ’
ঢাবির লোক প্রশাসন বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাজনীন ইসলাম বলেন, ‘গবেষণার জন্য বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে সুযোগ-সুবিধা দেয়, সেগুলো অবশ্যই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেওয়া হয় না। এই কারণে অনেকেই গবেষণার প্রতি আগ্রহ দেখান না। ’
ঢাবিতে গবেষণা কমে যাওয়ার জন্য যেকোনো কাজের যথাযথ মূল্যায়ন না বলে অভিযোগ করেন লোক প্রশাসন বিভাগের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ফেরদৌস আরফিনা ওসমান। তিনি বলেন, ‘একদিকে একজন নিম্নমানের গবেষণা করে অধ্যাপক হচ্ছেন, অন্যদিকে আরেকজনকে অধ্যাপক হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা করতে হচ্ছে। এই কারণে উচ্চপর্যায়ের গবেষণার প্রতি অনেকের আগ্রহ কম। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষকদের গবেষণার প্রতি উৎসাহিত করার কোনো উদ্যোগও দেখা যায় না।’
প্রায় একই অভিমত জানালেন ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম। সঙ্গে এ-ও যোগ করেন, ‘গবেষণার সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় অনেক মেধাবী এগিয়ে আসে না।’
জানতে চাইলে ঢাবির সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষক ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গবেষণা ছাড়া যদি পদায়ন হয়, তাহলে গবেষণা করবেন কেন?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, ‘শিক্ষা ও গবেষণা একটি অন্যটির পরিপূরক। বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় যে গবেষণা করে, সেখানে বড় বড় কোম্পানি, সংস্থা ইনভেস্ট করে। আমাদের দেশে এখনো সে সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। এজন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘এই জন্য দায়ী অপ্রয়োজনীয় বিভাগ খুলে খরচ বাড়ানোসহ সান্ধ্য কোর্সের নামে শিক্ষকদের অল্প পরিশ্রমে বেশি আয়ের প্রবণতা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, ‘গবেষণা খাতের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয় না। সরকারের বরাদ্দ বাড়ালে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’
তবে, গবেষণা কমে যাওয়ার বিষয় মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে চাহিদাভিত্তিক কোনো বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে চাইলে আমরা তাদের উৎসাহিত করি। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্দ দেই। ’
ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন আরও বলেন, ‘গবেষণার পরিমাণ বাড়াতে হবে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি নীতিমালা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি বড় ইন্ডাস্ট্রিগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।’ এই খাতে বরাদ্দ দিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ইয়ামিন/এনই
রাইজিং বিডি
আরো পড়ুন