ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

প্রকল্প সংশোধন না করতে পরিকল্পনা কমিশনে বেতার প্রকৌশলীদের চিঠি

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ২৩:০৩, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রকল্প সংশোধন না করতে পরিকল্পনা কমিশনে বেতার প্রকৌশলীদের চিঠি

বাংলাদেশ বেতার, সিলেট কেন্দ্রের সম্প্রচার আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে উচ্চ কারিগরি মান সম্পন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয় তথ্য মন্ত্রণালয়।

এ লক্ষে ‘বাংলাদেশ বেতার, সিলেট কেন্দ্র আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল সম্প্রচার যন্ত্রপাতি স্থাপন’ প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০১৮ থেকে চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পটি এ বছর শেষ করার কথা থাকলেও চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সাড়ে ২১ কোটি টাকা আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩৮ শতাংশ।

প্রকল্প পরিচালক ও উপ-প্রকল্প পরিচালক ঢাকায় থাকা এবং বিভিন্ন কেনাকাটায় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার কারণে প্রকল্পটির অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক হয়নি বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ বেতারের প্রকৌশলীরা।

সূত্র জানায়, গত মাসে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে।  সভার আগে এ প্রকল্পের পিডি ও ডিপিডির দুর্নীতির বিষয়ে বাংলাদেশ বেতার থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকৌশলীরা আর্থ-সামাজিক বিভাগের সদস্যের কাছে একটি চিঠি দেন।

পিইসি সভায় চিঠিটি আমলে নিয়ে উপস্থাপন করা হয়।  সদস্যের কাছে অনুরোধ করে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ বেতারের প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতি ঠেকানোর জন্য কাছে বিনীত অনুরোধ করছি। আপনাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ বেতারের বিভিন্ন কেন্দ্রের উন্নতির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু কিছু কর্মকর্তা তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বেতারের সুনামকে কলঙ্কিত করছে।  সরকারের দেওয়া অর্থে বিভিন্ন প্রকল্পে যেসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে, বিশেষ করে ট্রান্সমিটার সংক্রান্ত যন্ত্রপাতিগুলো কোনটিই যথাযথভাবে কাজ করছে না। হয় পরিত্যক্ত অথবা নিম্নমানের অথবা যে গতিতে কাজ করার কথা, কেনার পর থেকেই তা হচ্ছে না। আপনি খোঁজ নিলে অবশ্যই জানতে পারবেন ঢাকাসহ যেসব কেন্দ্রে ট্রান্সমিটার বসানো হয়েছে-তা কত কিলোওয়াট, এর জায়গায় কত কিলোওয়াট পাচ্ছে।  এরকম প্রশ্ন করা হলে তারা বলবেন, অনেকদিন হয়ে গেছে, টেকনোলজির পরিবর্তন হয়েছে, পার্টস পাওয়া যায় না ইত্যাদি।  কিন্তু চালুর পর কী অবস্থা ছিল, তা কখনই বলতে পারবে না।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে বেতারের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্প হচ্ছে সিলেট বেতার প্রকল্প।  দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পটি চালু থাকলেও কিছু কেনাকাটা ছাড়া কোনো কাজ হয়নি। তাও আবার পিডি ও ডিপিপির সুবিধামত কেনাকাটা হয়েছে।

এই প্রকল্পে ১২ কোটি টাকা খরচ করে একটি ডিএসএনজি ভ্যান কেনার আদেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ একই ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক মাস আগে ৮ কোটি টাকায় জাতীয় বেতার ভবন প্রকল্পে একই ভ্যান কেনা হয়েছে।  প্রকল্পের যন্ত্রপাতির দাম বাড়িয়ে একই ব্যক্তিকে আরও কাজ দিতে চাইছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

যন্ত্রপাতি কেনার সঙ্গে প্রকল্পের বাইরের  অনেক যন্ত্রপাতি যোগ করে টেন্ডার করা হয়।  কিন্তু টেন্ডার না পড়ায় সেগুলোকে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে দাম বাড়ানোর মাধ্যমে সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। বিটিভির ৪০০ ফিট টাওয়ার থাকলেও সমন্বয় না করে বেতারের জন্য আলাদা টাওয়ার করে অর্থের অপচয় করতে চাইছে পিডি ও ডিপিডি।

পিইসি সভায় বলা হয়, এ প্রকল্পের বিষয়ে একটি বেনামি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগপত্রটি বেনামি হলেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় পরিকল্পনা কমিশন অভিযোগটি আমলে নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়কে যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

এ বিষয়ে প্রকল্পের ডিপিপি জিল্লুর রহমান বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলা নিষেধ আছে। মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে সরকারের নির্দেশনা আছে।  ডিজি স্যারের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারব না।

প্রকল্প পরিচালক মুজিবর রহমান বলেন, এ অভিযোগটি সত্য নয়। আমাদের বরাদ্দ কম থাকায় প্রকল্পটি শেষ বছরে এসেও বাস্তব অগ্রগতি কম হয়েছে।

হাসিবুল/সাইফ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়