ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

ছুরিকাঘাতে হত‌্যা: দিশেহারা নয়নের পরিবার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০  
ছুরিকাঘাতে হত‌্যা: দিশেহারা নয়নের পরিবার

নয়ন আহম্মেদ নাদিম (ফাইল ফটো)

নয়ন আহম্মেদ নাদিম। ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণের কাঁধে ছিল দায়িত্বের বোঝা। বাবা মারা গেছেন। বড় ভাই অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। তাই ব্যবসা দেখাশোনা ও সংসার দেখভালের দায়িত্ব ছিল নয়নের ওপর। কাজপাগল নয়ন ভালোভাবেই সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু গত ৩০ সেপ্টেম্বর আশুরার দিনে দুপুরে পুরান ঢাকায় হোসেনি দালান ইমামবাড়া এলাকায় এক দুর্বৃত্ত প্রকাশ‌্যে ছুরিকাঘাতে হত‌্যা করে নয়নকে। নয়নের মৃত‌্যুতে দিশেহারা তার পরিবার।

নয়ন হ‌ত‌্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বোন ময়না বেগম রাজধানীর চকবাজার মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করছেন চকবাজার থানার এসআই (নিরস্ত্র) নুর উদ্দিন।

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে নুর উদ্দিন বলেন, ‘এ মামলায় তদন্ত চলছে। মূল আসামি রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পূর্বশত্রুতার জের ধরে নয়নকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সে। জবানবন্দিতে সে যেটা বলেছে, খুনের মোটিভের সঙ্গে তা মিলছে না। সে বলেছে, নয়ন ২৫ আগস্ট হোসেনি দালানে যায়। সেখানে তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। তখন সে নয়নকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। আশুরার দিন সুযোগ পেয়ে তাকে খুন করে রানা।’

তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরাটি এখনও উদ্ধার করা যায়নি। সেটা উদ্ধারের চেষ্টা করছি। পোস্টমর্টেমের রিপোর্টও পাওয়া যায়নি। তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। অন্য কেউ জড়িত আছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নয়ন হত‌্যায় যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। নিরপরাধ কাউকে অযথা হয়রানি করা হবে না। যত দ্রুত সম্ভব মামলাটির তদন্ত শেষ করা হবে।’

ময়না বেগম বলেন, ‘নয়নকে দিনে-দুপুরে এভাবে খুন করা হলো। কেন তাকে মারা হলো? কী অপরাধ ছিল তার? তার যদি কোনো অপরাধ থাকত, তাহলে আমাদের জানাতো পারত। নয়ন যদি অপরাধ করেও থাকে তাহলে কি তাকে এভাবে খুন করতে হবে?’

তিনি বলেন, ‘মূল আসামি ধরা পড়েছে। আমরা জানতে চাই, কেন তাকে খুন করা হলো? বাবা নাই, ভাই অসুস্থ। সংসারের অনেক দায়িত্ব ছিল নয়নের ওপর। সাজানো সংসারটাকে এলোমেলো করে দিলো। নয়নের খুনিরা যদি পার পেয়ে যায় তাহলে আরও ২/৪ জন মায়ের বুক খালি করতে ওদের একটু আকটাবে না। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের ফাঁসি হওয়া উচিত। কারণ, একটা জীবনের সাথে অনেকগুলো জীবন জড়িত থাকে।’

নয়নকে হত‌্যার সময় সেখানে ছিলেন তার বন্ধু সোহান। তিনি বলেন, ‘নয়ন সারাক্ষণ কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকত। আমার জানা মতে, কারো সঙ্গে ওর বিরোধ ছিল না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হুট করে এসে প্রকাশ্য দিবালোকে ছুরিকাঘাত করে ছেলেটাকে মেরে ফেললো।’

হোসেনি দালানে রানার সঙ্গে নয়নের বাকবিতণ্ডার বিষয়ে সোহান বলেন, ‘আমার জানা মতে, ২৫ আগস্ট নয়ন সেখানে যায়নি। সে সব সময় কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকত।’ এ বিষয়ে তদন্ত করতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের দাবি জানান সোহান।

গত ৩০ আগস্ট দুপুর ১টার দিকে বকশীবাজারের উমেশ দত্ত রোডে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন নয়ন ও সোহান। সে সময় ওই রাস্তা দিয়ে ১০-১৫ জন যুবকের একটি দল তাজিয়া মিছিলের মতো করে হোসেনি দালান ইমামবাড়ার দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ রানা অতর্কিতভাবে নয়নের বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। সোহান নয়নকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় রানাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ৩ সেপ্টেম্বর আদালত তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ড শেষে ৭ সেপ্টেম্বর রানা আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। বর্তমানে সে কারাগারে আছে।

ঢাকা/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়