ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘মাহফুজাকে খুন করে বোরকা পরে পালায় দুই গৃহকর্মী’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ৩ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৩:০৩, ১০ অক্টোবর ২০২০
‘মাহফুজাকে খুন করে বোরকা পরে পালায় দুই গৃহকর্মী’

মাহফুজা চৌধুরী পারভীন (ফাইল ফটো)

ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীনকে রাজধানীর এলিফ‌্যান্ট রোডের বাসায় খুন করে দুই গৃহকর্মী। পর তারা বোরকা পরে বাসা থেকে বের হয়ে পালিয়ে যায়।

মাহফুজা চৌধুরী হত্যা মামলায় দেওয়া চার্জশিটে এ তথ‌্য উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউ মার্কেট থানার এসআই আলমগীর হোসেন মজুমদার।

আগামীকাল রোববার (৪ অক্টোবর) মামলাটির রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য রয়েছে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান রায় ঘোষণা করবেন।

চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এটি নির্মম, নিষ্ঠুর, নৃশংস , জঘন্য, পৈশাচিক, বর্র্বরোচিত, চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড। মাহফুজা চৌধুরী ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে ধানমন্ডির সুকন্যা টাওয়ারের ডুপ্লেক্স বাসায় থাকতেন। ডুপ্লেক্স বাসার ১৫/সি নম্বর ফ্ল্যাটে রান্না হতো এবং গৃহকর্মীরা থাকত। গত বছরের ১১ জানুয়ারি রাশিদা বেগম ওই বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে যোগ দেয়। এর আগে ৪ জানুয়ারি ওই বাসায় কাজে যোগ দেয় রুমা ওরফে রেশমা। রিতা আক্তার ওরফে স্বপ্না প্রকৃত ঠিকানা গোপন করে ২ ফেব্রুয়ারি গৃহকর্মী হিসেবে যোগ দেয়। ৯ ফেব্রুয়ারি মাহফুজা চৌধুরীর স্বামী ইসমত কাদির গামা ব্যবসার কাজে বাসার বাইরে যান। এ সময় মাহফুজা চৌধুরীকে হত্যা করে টাকা চুরির পরিকল্পনা করে রুমা ও রিতা।

চার্জশিটে আরও বলা হয়, ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় ইসমত কাদির গামা প্রতিদিনের মতো ব্যবসার কাজে বাসার বাইরে যান। দুপুরে রান্না শেষে ১৬/সি ফ্ল্যাটে মাহফুজা চৌধুরীকে খাবার দেয় রুমা। খাওয়া শেষে মাহফুজা চৌধুরী তার কক্ষে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রুমা, রিতা, রাশিদা বেগম গোসল শেষে খাওয়া-দাওয়া করে। রাশিদা পানি গরম করার জন্য চুলায় পাতিল বসিয়ে দেয়। তখন রুমা ও রিতা রাশিদাকে বলে, তুমি ঘুমাও। রাশিদা গৃহকর্মীদের কক্ষে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সেই সুযোগে রুমা ১৬/ সি ফ্ল্যাটের মূল ফটকের লক ও ছিটকিনি ভেতর থেকে লাগিয়ে দেয়। রুমা ও রিতা বিকেল ৪টার দিকে মাহফুজা চৌধুরীর রুমে যায়। রিতা মাহফুজা চৌধুরীর হাত-পা চেপে ধরে। রুমা মাহফুজা চৌধুরীর গলায় থাকা ওড়না দিয়ে নাক-মুখ পেঁচিয়ে বালিশচাপা দেয়। মাহফুজা চৌধুরী বাঁচার জন‌্য প্রতিরোধ করতে চাইলে তার কোমর থেকে পা পর্যন্ত খাটের নিচে ঝুলে পড়ে। ঠোঁটে আঘাত লেগে রক্ত বের হয়। ৫-৭ মিনিট পর তার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে আসামিরা তার মৃত্যু নিশ্চিত করে।

মাহফুজা চৌধুরীর বালিশের নিচ থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খোলে রুমা। তারা টাকা, মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য মালামাল চুরি করে কয়েকটি জুয়েলারির পার্স ও ব্যাগ মাহফুজা চৌধুরীর শয়নকক্ষ ও মেঝেতে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ফেলে রেখে বোরকা পড়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। বাসার নিরাপত্তাকর্মী জিজ্ঞেস করলে, রুমা ও রিতা জানায়, তারা ১৬/সি ফ্ল্যাটে আর্মির (মাহফুজা চৌধুরীর ছেলে) বাসায় কাজ করে। টেইলার্সে যাওয়ার কথা বলে তারা বের হয়ে যায়। তারপর প্রিয়াঙ্গন মার্কেটের সামনে থেকে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে গাবতলীতে যায় রুমা ও রিতা। রিতা বাসযোগে তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার মদন থানাধীন ফতেহপুর গ্রামে এবং রুমা রাজধানীর কাফরুলের পূর্ব বাইটেকিতে মায়ের ভাড়া বাসায় চলে যায়। পরে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারের পর আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। বর্তমানে তারা কারাগারে আছে।

মাহফুজা চৌধুরীর স্বামী ইসমত কাদির গামা আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত‌্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আশা করছি, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।’

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী মতিউর রহমান বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আশা করছি, তারা খালাস পাবেন।’

উল্লেখ‌্য, মাহফুজা চৌধুরী পারভীন ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।

ঢাকা/মামুন/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়