ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

আবরার হত্যা: করোনার কারণে বিচারে বিলম্ব

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫২, ৬ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ২১:৫৬, ৬ অক্টোবর ২০২০
আবরার হত্যা: করোনার কারণে বিচারে বিলম্ব

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ‌্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ছিলেন আবরার ফাহাদ রাব্বী। একই বিশ্ববিদ‌্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হামলায় নিহত হয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর দ্রুতই চলছিল বিচারকাজ। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কিছুদিন আদালত বন্ধ থাকায় আবরার হত‌্যা মামলার বিচার বিলম্বিত হয়েছে।

গত বছরের ৬ অক্টোবর ‘ছাত্রশিবিরের কর্মী’ অভিযোগ তুলে শেরেবাংলা হলে পিটিয়ে হত্যা করা হয় আবরারকে। পরের দিন নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করেন। ৩৭ দিনে মালাটির তদন্ত শেষ করে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এরপর অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ পাঠানো হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আদালত বন্ধ থাকায় মামলাটির বিচারকাজ বিলম্বিত হয়েছে। আদালতের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হওয়ার পর মামলাটির চার্জ গঠন করা হয়। এখন মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ হবে বলে আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।

মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে আছে।

সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা বলেছেন, ‘মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আমাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। আমরাও সেভাবে শুরু করেছিলাম। মাঝে করোনাভাইরাসের কারণে আদালত বন্ধ ছিল। এখন আবার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মামলাটির চার্জ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করা হয়েছে। ৬০ জন সাক্ষী, আসামিও অনেক। একটু সময় তো লাগবেই। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, যেন মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ হয়। ভিকটিমের পরিবার যেন ন্যায়বিচার পায়।’

বুয়েটের নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী এহেসানুল হক সমাজী বলেছেন, ‘করোনার কারণে বিচারকাজ কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। বিলম্ব হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। আশা করছি, এখন ধারাবাহিকভাবেই বিচারকাজ চলবে। ট্রাইব্যুনাল ৫ থেকে ২৭ অক্টোবর তারিখ ধার্য করেছেন। আমাদের হাতে ৮ আসামির দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আছে। এতে এ হত্যাকাণ্ডে সব আসামির সম্পৃক্ততা প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়া, ভিডিও ফুটেজ এবং অন‌্যান‌্য ডকুমেন্ট আছে। যা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ার ব্যাপারে যৌক্তিক কারণ হিসেবে কাজ করবে।’ 

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘মনে হয়, মামলাটি নিয়ে একটু তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে। ৫ থেকে ২৭ অক্টোবর ১৭টি ধার্য তারিখ সাক্ষ্যের জন্য রাখা হয়েছে। বিচার দ্রুত হোক, তা আমরাও চাই। তবে এত দ্রুত নয়, যার কারণে আসামিরা প্রস্তুতির অভাবে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন।’

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের ইলেকট্রিক‌্যাল ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবার দায়ের করা মামলাটি চকবাজার থানা পুলিশের পর তদন্তভার ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়। ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান মাত্র ৩৭ দিনে অর্থাৎ গত বছর ১৩ নভেম্বর বহুল আলোচিত এ মামলায় এজাহারভুক্ত ১৯ জনসহ বুয়েটের ২৫ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিট দাখিলের সময় ২৫ আসামির মধ্যে চারজন পলাতক ছিলেন। চার্জশিট দাখিলের পর প্রথমে সিএমএম আদালত ওই আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং পরবর্তীতে সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন। পরে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারের বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ওই বছরের ১৮ নভেম্বর থেকে চলতি বছর ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব প্রক্রিয়া চলার মধ্যে ১২ জানুয়ারি বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র মোর্শেদ অমর্ত‌্য ইসলাম সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর অপর তিন আসামি পলাতক থাকা অবস্থায় চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি মামলার নথি সিএমএম আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজের বিচারিক আদালতে যায়। সেখানে ৫ দিন পর অর্থাৎ ২১ জানুয়ারি মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট আমলে নিয়ে চলতি বছর ৩০ জানুয়ারি চার্জ গঠনের শুনানির দিন ঠিক করেন। কিন্তু ওই ধার্য তারিখে জানানো হয়, মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাবে, তাই চার্জ গঠনের কার্যক্রম স্থগিত রাখেন। কিন্তু তারপর প্রজ্ঞাপন জারি করতে বিলম্ব হওয়ায় চলতি বছরের ১৮ মার্চ পর্যন্ত মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে থাকে। প্রজ্ঞাপন হলে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ চলতি বছর ৬ এপ্রিল চার্জ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করে বদলির আদেশ দেন মহানগর দায়রা জজ আদালত।

কিন্তু ৬ এপ্রিলের আগেই করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবে দেশের সব আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে এ মামলার কার্যক্রমও বন্ধ হয়। গত আগস্ট মাসে সরকার আদালত খুলে দেয়। গত ২ ও ৯ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল এ মামলায় চার্জ গঠনের শুনানির পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ২২ আসামির অব্যাহতির আবেদন নাকচ করেন এবং পলাতক ৩ আসামিসহ ২৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মধ‌্যে দিয়ে বিচারকাজ শুরু করেন। ওই দিন ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত ১০টি তারিখ সাক্ষ্য গ্রহণের জন‌্য ধার্য করেন। কিন্তু সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম ধার্য তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর বাদী বরকত উল্লাহ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হলেও তিনি অসুস্থতার জন্য সাক্ষ্য দিতে পারবেন না জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। পরে ৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত একটানা সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন তারিখ ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

আবরার হত‌্যা মামলার আসামিরা হলেন—বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার ওরফে অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, ছাত্রলীগের কর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মো. মুজাহিদুর রহমান, মো. মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমর্ত‌্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ। আসামিদের মধ্যে প্রথম ২২ জন কারাগারে আছেন। শেষের তিনজন পলাতক। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ৮ জন।

ঢাকা/মামুন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়