১৫ তালিকাচ্যুত কোম্পানিতে আটকে আছে আইসিবি’র ৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ
নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম
অনিয়ম, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কারণে পুঁজিবাজার থেকে বেশ কিছু কোম্পানি তালিকাচ্যুত হয়েছে। আর এমন ১৫টি কোম্পানির শেয়ারে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি)। সুনির্দিষ্ট কোনো আইন বা নীতিমালা না থাকায় ওই কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চিতা দেখা দিয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হয়েছে ৩৮টি কোম্পানি। এর মধ্যে ১৫টি কোম্পানিতে আইসিবির বিনিয়োগ রয়েছে ৩ কোটি ৩ কোটি ২২ লাখ ৯ হাজার ২৪৮ টাকা। দীর্ঘ দিন ধরে ওই বিনিয়োগ থেকে কোনো রিটার্ন পাচ্ছে না রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি লোকসান গুনছে আইসিবি।
এ পরিস্থিতিতে আটকে থাকা বিনিয়োগ ফেরত পেতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সহাযোগিতা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
আইসিবির বিনিয়োগ করা তালিকাচ্যুত কোম্পানিগুলো হলো- করিম পাইপ মিলস, এবি বিস্কিট কোম্পানি, অ্যারোমা টি কোম্পানি, ঢাকা ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ, ফ্রগলেস এক্সপোর্ট, মেঘনা ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ, জেম নিটওয়্যার ফেব্রিক্স, ইসলাম জুট মিলস, মার্ক বিডি শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, কাশেম টিম্বার, পেপার কনভার্টিং, প্রগ্রেসিভ প্লাস্টিক, মিলন ট্যানারি, প্যারাগন লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার এবং পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস। এসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে কেবল পিপলস লিজিং তালিকাচ্যুত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাকিগুলো আগেই পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তালিকাচ্যুত কোম্পানি থেকে বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পেতে কোনো আইন বা নীতিমালা না থাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এতে বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না। তাই বিএসইসির এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা উচিত। যাতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হয়।
আইসিবি সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আইসিবি করিম পাইপ মিলসের ৫০টি শেয়ারে বিপরীতে বিনিয়োগ রয়েছে ৩ হাজার ৩২৫ টাকা, এবি বিস্কিট কোম্পানির ৪ হাজার শেয়ারে বিপরীতে বিনিয়োগ রয়েছে ৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, অ্যারোমা টি কোম্পানির ১৫ হাজার শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগ রয়েছে ১৭ লাখ ১ হাজার ৩৬৫ টাকা, ঢাকা ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের ৪৮৫টি শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগ রয়েছে ৫৯ হাজার ৪৪৭ টাকা, ফ্রগলেজ এক্সপোটের ৭০০টি শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগ রয়েছে ১১ হাজার ৫০ টাকা, মেঘনা ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের ২ হাজার ৯১৫ শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগ রয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩০০ টাকা, জেম নিটওয়্যার ফেব্রিক্সের ৬৫০টি শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগ রয়েছে ১৮ হাজার ৬২ টাকা, ইসলাম জুট মিলসের ৩১০টি শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগ রয়েছে ৪৭ হাজার ৭২৬ টাকা।
এছাড়া মার্ক বিডি শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৬ হাজার ৬৮৫টি শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগ রয়েছে ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা, কাশেম টিম্বারের ১০ হাজার শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগ রয়েছে ১ লাখ টাকা, পেপার কনভার্টিংয়ের ১৯ হাজার ৭২৪ শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগ রয়েছে ১৯ লাখ ৭২ হাজার ৪০০ টাকা, প্রগ্রেসিভ প্লাস্টিকের ১ হাজার ৬৫ শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগ রয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৬৬৯ টাকা, মিলন ট্যানারির ২ হাজার শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগ রয়েছে ২ লাখ টাকা, প্যারাগন লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যারের ১ লাখ ২০ হাজার ২৫৪ শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগ রয়েছে ৮৮ লাখ ১ হাজার ৪৯৩ টাকা এবং পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ৭ লাখ ৫০ হাজার ৮৫ শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগ রয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ১১ হাজার ৯০৮ টাকা।
সে হিসেবে আইসিবির সর্বোমোট ৯ লাখ ৪৩ হাজার ১৮৭ শেয়ারের বিপরীতে ৩ কোটি ২২ লাখ ৯ হাজার ২৪৮ টাকার বিনিয়োগ আটকে রয়েছে।
এ বিষয়ে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশনের অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবুল হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় আটকে থাকা বিনিয়োগ ফেরত পেতে উদ্যোগ নিয়েছে আইসিবি। এরই ধারাবাহিকতায় তালিকাচ্যুত কোম্পানিগুলো থেকে বিনিয়োগ ফেরত পেতে বিএসইসির কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। বিএসইসি এ বিষয়ে আইন বা নীতিমালা তৈরি করলে, প্রাতিষ্ঠানিকসহ সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও উপকৃত হবেন।’
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে বলেন, আইসিবি যদি চিঠি দিয়ে থাকে তাহলে, আইনগত দিক বিবেচনা করে বিএসইসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
ঢাকা/এনটি/আমিনুল
আরো পড়ুন