ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নূরানী ডাইংয়ের আর্থিক প্রতিবেদনে নানা অসঙ্গতি

নাজমুল ইসলাম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ২২ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ২১:১১, ২২ অক্টোবর ২০২০
নূরানী ডাইংয়ের আর্থিক প্রতিবেদনে নানা অসঙ্গতি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার লিমিটেডের বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরিতে আন্তর্জাতিক হিসাব মান লঙ্ঘন করা হয়েছে। কোম্পানির ২০১৯ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাবে নানা অসঙ্গতি দেখা গেছে।

আর্থিক হিসাবে নানা ভুল এবং দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা মান অনুসরণ করা হয়। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানির বিলম্বিত কর, সম্পদ, দায় এবং আয়করে নানা ধরনের অসঙ্গতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নজরে এসেছে। এসব বিষয়ে কোম্পানিটি আন্তর্জাতিক হিসাব মান অনুসরণ করেনি। একই সঙ্গে এসব বিষয়ে সঠিক হিসাব উপস্থাপন না করায় কোম্পানির আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে বলে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ফলে কোম্পানির কাছে আলোচ্য বিষয়গুলোতে ব্যাখ্যা চেয়েছে ডিএসই।

এ সম্পর্কে নূরানী ডাইংয়ের কোম্পানি সচিব (চলতি দায়িত্ব) সারোয়ার আহমেদসহ একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কোম্পানির বিজয়নগর অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, অফিস পরিবর্তন করা হয়েছে।

জানা গেছে, কোম্পানিটি ২০১৯ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত হিসাবে বিলম্বিত কর সম্পদ/দায় সঠিকভাবে নিরুপণ করেনি। এছাড়া, সহযোগী কোনো প্রতিষ্ঠানে কোম্পানির বিনিয়োগ আছে কি না, তাও স্বচ্ছভাবে হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি। কোম্পানির আয়করের হিসাবও আন্তর্জাতিক হিসাব মান অনুযায়ী করা হয়নি। এদিকে, নগদ অর্থের প্রবাহের যে হিসাব বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তার বিপরীতে কোনো নোট দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে কমপ্লায়েন্স পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে নূরানী ডাইং।

আন্তর্জাতিক হিসাব মানের প্যারাগ্রাফ ৩৯-এ বিলম্বিত কর, দায়, সহযোগী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের বিষয়ে বলা হয়েছে। এছাড়া, প্যারাগ্রাফ ২৪-এ আয়কর নিরুপণ সম্পর্কে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী কোম্পানিটি আয়কর হিসাব করেনি। এসব কারণে কোম্পানির লেনদেন এবং আয়ের হিসাবে অতিরঞ্জিত দেখানো বা আয় কমার আশঙ্কা রয়েছে।

ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো কমপ্লায়েন্স পরিপালন করে কি না, তা দেখার দায়িত্ব রেগুলেটরদের। প্রাইমারি রেগুলেটর হিসেবে ডিএসই সেগুলো নিয়ে কাজ করে। একই সঙ্গে কোনো কোম্পানির অসঙ্গতি পেলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) তা অবহিত করে। কমিশন পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়।’

এ সম্পর্কে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে জানান, এসব বিষয়ে রুটিন মাফিক কাজ করছে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে কোনো ধরনের অসঙ্গতি পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

কর, সম্পদ এবং দায় সঠিকভাবে নিরুপণের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবসার সুনাম বাড়ায়। এছাড়া, কর, সম্পদ, দায় এবং লেনদেনের যেকোনো হিসাব ব্যবসার মুনাফায় ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এসব হিসাবের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। কোনো কোম্পানি আর্থিক প্রতিবেদনে সঠিক হিসাব উপস্থাপন না করলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া আশঙ্কা থাকে। তাই প্রত্যেক তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসাব মান ঠিক রেখে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করে স্টক এক্সচেঞ্জ ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

ঢাকা/এনএফ/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়