ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

প্রবাসীদের ৪ বন্ডে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে রোড শো’র উদ‌্যোগ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৪, ২৫ অক্টোবর ২০২০  
প্রবাসীদের ৪ বন্ডে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে রোড শো’র উদ‌্যোগ

অনাবাসী বাংলাদেশি (এনআরবি) ও প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে চারটি বন্ড জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন দেশে রোড শো করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

সম্প্রতি সরকারের নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিডিএমসি) বৈঠকে যেসব দেশে বেশি সংখ্যক অনাবাসী বাংলাদেশি ও কর্মী আছে, সেসব দেশে রোড শো করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় প্রবাসীদের ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়ার বন্ড, ইউএস ডলার এবং ডলার বিনিয়োগ বন্ড কিনতে উৎসাহী করার জন্য মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং ইতালিতে রোড শো করার সিদ্ধান্ত হয়। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এসব রোড শো প্রবাসীদের বন্ডে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করবে।

সরকার তিনটি ডলারের বন্ডকে ডলার, পাউন্ড এবং ইউরো বন্ডে রূপান্তর করবে, যাতে আরও বেশি সংখ্যক এনআরবি এবং প্রবাসী কর্মী বন্ড কিনতে উৎসাহী হন।

অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুবিধা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে সাধারণ জনগণের তেমন ধারনা নেই। তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য রোড শো করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বন্ডগুলোতে বিনিয়োগে সাড়া পাওয়া যাবে।’

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার যদি প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বন্ডে আকৃষ্ট করতে চায়, তাহলে বন্ডের সঙ্গে ২ শতাংশ নগদ সহায়তা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের অনাগ্রহের বেশকিছু কারণ থাকতে পারে। বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে কর্মরত। তাদের বেশিরভাগই দক্ষ নন। ফলে তাদের পারিশ্রমিক অনেক কম। তাই কর্মীর সংখ্যার অনুপাতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন হওয়ার কথা তা সম্ভব হচ্ছে না। সভায় বিদেশগামীদের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। 

বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা সাধারণত তাদের উপার্জনের সিংহভাগ পরিবারের ভরণপোষণের জন্য পাঠিয়ে থাকেন। অনেকে বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়-স্বজন বা মহাজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুদে ঋণ নিয়ে বিদেশ যান। সুদাসল পরিশোধেও বড় একটি অংশ ব্যয় হয়। বিপুল সংখ্যক প্রবাসী কর্মীর নতুন বাড়ি তৈরি বা জমি কেনার প্রবণতা আছে। কেউ কেউ দেশে ফিরে দোকান বা অন্য কোনো ছোট ব্যবসা শুরু করার জন্য অর্থ সঞ্চয় করেন।

ইউএস ডলার বন্ডের প্রতি অনীহার আরেকটি কারণ—বেশিরভাগ এনআরবি এবং বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিক এ ডলার বন্ড সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এ কারণে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরকে এনআরবি এবং বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীদের বিদেশি বন্ডে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য দেশ-বিদেশে প্রচার চালাতে নির্দেশনা দিয়েছিল।

সরকারের এ উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। ওয়েজ আর্নার্স ডলার বন্ড (ডব্লিউডিবি) ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জকারীদের জন্য অন্য দুটি ফরেক্স বন্ডও বার্ষিক ৬.৫ থেকে ৭.৫ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণে যথেষ্ট নয়। কিছু বন্ডে বেশি বিনিয়োগ করে কম আয় হচ্ছে। ফলে বেশি দামের বন্ড এনআরবি এবং প্রবাসী কর্মীদের কাছে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। এছাড়া, সরকার ঘোষিত নগদ ভর্তুকি বা ২ শতাংশ প্রণোদনা ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, মার্কিন ডলার বিনিয়োগ বন্ড এবং মার্কিন ডলার প্রিমিয়াম বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রোড শোয়ের আগে এসব সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে কাজ হচ্ছে। যে চারটি বন্ডে প্রবাসীদের বিনিয়োগে আগ্রহী করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে কী কী সমস্যা আছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুব শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়