ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আইসে ঝুঁকছে উচ্চবিত্তের সন্তানরা

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৩, ৭ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৭:০৮, ৮ নভেম্বর ২০২০
আইসে ঝুঁকছে উচ্চবিত্তের সন্তানরা

ফাইল ফটো

ইয়াবার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর মাদকদ্রব‌্য আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। ইতোমধ্যে অনেক উচ্চবিত্ত ব‌্যক্তির সন্তান আইসে আসক্ত হয়েছেন। দিনে দিনে আরও জনপ্রিয় হচ্ছে নতুন এ মাদক। আইসের একাধিক বিদেশি চালান জব্দ করার পাশাপাশি এ মাদক তৈরির একটি কারখানার সন্ধান পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তবে এ ল্যাবের মালিককে এখনও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মাঝামাঝি প্রথম এ দেশে আইসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সে সময় রাজধানীর শঙ্করে আইস তৈরির কারখানার সন্ধান মেলে। একটি ভবনের নিচতলায় এমনভাবে এ কারখানা করা হয়েছে যে, বাইরে থেকে তা বোঝার উপায় নেই। সেখানে অভিযান চালানোর আগেই পালিয়ে যান ল্যাবের মালিক মো. হাসিব। মালয়েশিয়ায় রসায়ন বিষয়ে পড়োশানা শেষে বাংলাদেশে আইস তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি।

আইস কারখানার সন্ধান পাওয়ার পর মূলত এ মাদক কারবারের নেটওয়ার্কের তথ‌্য বেরিয়ে আসতে থাকে। পরে রাজধানীর বনানী, খিলক্ষেত, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ীসহ আরও কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ আইস বা ক্রিস্টাল মেথ জব্দ করা হয়। সর্বশেষ গত ৫ নভেম্বর গুলশান ও ভাটারা এলাকা থেকে ৬০০ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়। এ সময় স্বর্ণ ব‌্যবসায়ী চন্দনসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করা ব‌্যক্তিদের রিমান্ডে নিয়ে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মাদক সিন্ডিকেট বাংলাদেশে আইসের ব‌্যবসা করছে। তারা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, নাইজেরিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আইস বাণিজ্য করে থাকে। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার তিন ব‌্যক্তির নাম জানতে পেরেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। মাদক কারবারিরা হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে আইসের ব্যবসা করে। তাদের মধ‌্যে অনেকেই সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করে। এ দেশের আইস কারবারিরা মোবাইল ফোনে ড্রাগ নেট অ্যাপস ব‌্যবহার করে এ ব্যবসার জন‌্য। পোশাক বা সোনার চালানের আড়ালে এ মাদক আনা-নেওয়া করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছোট্ট দানার মতো নতুন এই মাদক সেবন করছেন উচ্চবিত্ত ব‌্যক্তিদের সন্তানরা। তাদের অবস্থান অভিজাত এলাকা ও জেলা শহরে। শরীরে অধিক উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য তারা এ মাদক সেবন করেন। আইসের সঙ্গে ইয়াবা ও হেরোইনের মিল আছে। তা হলো—এ মাদকও পাইপ দিয়ে সেবন করতে হয়। তবে আইস সেবনকারীরা কাঁচের তৈরি পাইপ ব্যবহার করেন। গোপন বা নির্জন স্থানে বসে আইস সেবন করেন তারা।

আইসে আসক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মাঝেমধ্যে ইয়াবা সেবন করতাম। এক বন্ধুর মাধ্যমে আইসের সন্ধান পাই। কয়েক মাস আইস সেবন করি। করোনার কারণে আয় কমে যাওয়ায় আগের মতো খেতে পারি না।’

আইস সেবনে কেমন লাগে? এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ছাত্র বলেন, ‘শরীরে উত্তেজনা বাড়ে। তখন নিজেকে সম্রাট মনে হয়। সাধারণ কাজে তেমন সমস্যা হয় না। যৌন ক্ষমতাও বাড়ে।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, এই মাদকের দাম অনেক বেশি। এর ১০ গ্রাম কিনতে খরচ হয় ১ লাখ টাকা। ১০ গ্রাম আইস একবারেই খাওয়া যায়। আইসের ব‌্যবসায় অল্প সময়ে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এ কারণে মাদক কারবারিরা ধীরে ধীরে এ ব্যবসায় নামছেন। তারা ক্রিস্টাল মেথের কারবারের জন্য আকাশপথ বেছে নিয়েছেন। 

মাদক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইয়াবা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে এমফিটামিন ব্যবহার হয়। যা বিভিন্ন রাসায়নিকের সমন্বয়ে তৈরি হয়ে থাকে। আইস তৈরি করতে এ কাঁচামাল বেশি লাগে। আইসে শতভাগ এমফিটামিন থাকে। মাদকটি সেবনের পরমুহূর্তে পুরো শরীরে উত্তেজনা তৈরি হয়। এ মাদক সেবনে হার্ট অ্যাটাক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণসহ কিডনি ও ফুসফুসে জটিল সমস‌্যা দেখা দিতে পারে।

শনিবার (৭ নভেম্বর) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আহসান জব্বার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘নতুন এই মাদক যেন দেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য আমরা কাজ করছি। এ মাদক অনেক ভয়ঙ্কর, যা মানুষকে শেষ করে দেয়।’

ঢাকা/মাকসুদ/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়