ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মাইম্যান থিওরিতে কমিটি আটকে থাকে বছরের পর বছর

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ১০ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৮:৪৬, ১১ নভেম্বর ২০২০
মাইম্যান থিওরিতে কমিটি আটকে থাকে বছরের পর বছর

ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটে বছরের পর বছর চলছে একই কমিটি দিয়ে। এতে নতুন নেতৃত্ব যেমন তৈরি হচ্ছে না, তেমনি সাংগঠনিক চেইনও ভেঙে পড়েছে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ‌্যে আছে ক্ষোভ, হতাশা। ছাত্রলীগের সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে রাইজিংবিডির জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এসকে রেজা পারভেজ তৈরি করেছেন পাঁচ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ পড়ুন এর দ্বিতীয় পর্ব।

এক বছর মেয়াদের শর্তে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থেকে যায় বছরের পর বছর। এতে নতুন কমিটি না হওয়ায় নতুন নেতৃত্বও উঠে আসে না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সংগঠনে। চেইন ইন কমান্ড তো ভাঙেই, সংগঠনের মধ্যে তৈরি হয় অন্তর্কোন্দল।

ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত নিজের পছন্দের লোককে নেতা বানানোর থিওরিতে বিভিন্ন উপ-ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব এবং স্থানীয় রাজনীতির নীতি-নির্ধারকরা। ছাত্রলীগের একটি জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনীতির নীতি-নির্ধারকদেরও মতামত নেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। পরে সংগঠনের জন্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

তবে বেশিরভাগ এক্ষেত্রে সেই কমিটি ঘোষণা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালীরা কয়েকভাবে ভাগ হয়ে যায় নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে শীর্ষ দুটি পদের একটিতে বসাতে। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনার নজিরও রয়েছে। শেষ পর্যন্ত কমিটি গঠনে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে না পেরে আগের কমিটিই থেকে যায় বছরের পর বছর।

বরিশাল মহানগরে প্রায় ৯ বছর ধরে ছাত্রলীগের পুরোনো কমিটি দিয়ে চলছে। একাধিকবার সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমান যারা দায়িত্বে আছেন তারা নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে সম্মান নিয়ে বিদায় নিতে চাইলেও তা হয়নি। স্থানীয় রাজনীতির কারণে নতুন কমিটি হয়নি। 

এ নিয়ে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা অনেকবার চেয়েছি নতুন নেতৃত্ব আসুক। আমরা সম্মান নিয়ে বিদায় নিতে চাই। কিন্তু স্থানীয়ভাবে গ্রুপিং এবং সমন্বয়ের অভাবে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। গ্রুপিং কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে কাজ করেছে। আমরা যেকোনো সময় সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত আছি।’

জানা গেছে, বরিশাল মহানগরের মতো বেশিরভাগ জেলায় দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ার নেপথ্যে স্থানীয় রাজনীতির অন্তর্কোন্দল আর মাইম্যান থিওরি। অনেক জায়গায় বারবার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হলেও সম্মেলন আর হয় না।

অন্যদিকে, দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় ভেঙে পড়েছে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। অনেক জায়গায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কথা মানেন না নেতাকর্মীরা। সংগঠনের মধ্যে তৈরি হচ্ছে একাধিক ধারা-উপধারা। বিভিন্ন বিশেষ দিনভিত্তিক কর্মসূচিও পালিত হয় ঢিলেঢালাভাবে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়া কাগজে কলমে না হলেও বাস্তবে ছাত্ররাজনীতির পাঠ চুকিয়ে ফেলেছেন অনেক ছাত্রলীগের নেতা। সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্বশীল অনেক নেতা বিবাহিত, সন্তানের জনকও।

এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে একই কমিটি থাকায় অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে সাংগঠনিক তৎপরতায়। এর সুযোগ নিচ্ছে অনুপ্রবেশকারী এবং সুবিধাবাদীরা। কমিটি গঠনের দীর্ঘসূত্রিতা পরগাছার মতো বিভিন্ন নেতার অনুসারী হিসেবে সহজেই প্রবেশ করেন সংগঠনে। সিলেটের এমসি কলেজে ধর্ষণের ঘটনাসহ বেশ কয়েকটি ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ছাত্রলীগের নাম চলে আসলেও পরবর্তীতে দেখা গেছে অপরাধীরা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন।

তবে সবচেয়ে বেশি বিব্রত অবস্থায় আছে যেখানে ছাত্রলীগের কমিটিই নেই দীর্ঘদিন তেমন এলাকায়। জেলা ইউনিটগুলোর মধ্যে কমিটি নেই প্রায় ১৮টির। এসব এলাকায় ছাত্রলীগের বিশৃঙ্খলা সবচেয়ে বেশি। উপ-গ্রুপের শেষ নেই এসব ইউনিটে। ঐক্যের পরিবর্তে অন্তর্কোন্দল আর সংঘর্ষের ঘটনা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন একটি জেলা সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ। দীর্ঘদিন থেকে কমিটি না থাকায় অভিভাবকহীন অবস্থায় আছে সেখানকার নেতাকর্মীরা। গুরুত্বপূর্ণ এ দুই ইউনিটের কমিটি না হওয়ায় একদিকে যেমন নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসছে না, তেমনি এ সংগঠনে বাড়ছে অনুপ্রবেশ।

কমিটি না থাকায় বিভিন্ন বলয় তৈরি করতে গিয়ে আধিপত্য নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ, দোকানপাঠ ভাঙচুর, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এতে সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতারা বিব্রতবোধ করলেও হামলা-মামলার এসব ঘটনার দায় নিচ্ছেন না কেউ।

সেখানকার ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, কমিটি না থাকায় ছাত্রদল, শিবিরও ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করছে। এতে করে একদিকে যেমন সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, এছাড়া সংগঠনের ত্যাগী কর্মীরা তাদের যথাযথ মূল্যায়ন পাচ্ছে না। আর অনুপ্রবেশের ফলে সংগঠনে অন্তর্কোন্দলও বাড়ছে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য রাইজিংবিডিকে বলেন, বিভিন্ন ইউনিটের ছাত্রলীগের কমিটি নেই। এসব ইউনিটে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। এরই মধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি।

* মেয়াদ এক বছর, চলছে ৯ বছর!

পারভেজ/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়