কমিটি হয়, পূর্ণাঙ্গ হয় না
ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটে বছরের পর বছর চলছে একই কমিটি দিয়ে। এতে নতুন নেতৃত্ব যেমন তৈরি হচ্ছে না, তেমনি সাংগঠনিক চেইনও ভেঙে পড়েছে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আছে ক্ষোভ, হতাশা। ছাত্রলীগের সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এসকে রেজা পারভেজ তৈরি করেছেন পাঁচ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ পড়ুন এর তৃতীয় পর্ব।
তিন বছর আগে দিনাজপুর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি জেলার নেতৃত্ব। অথচ কমিটির মেয়াদই এক বছর! এই কমিটির আগে জেলার তিনমাস মেয়াদী আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলেছে প্রায় ৮ বছর।
দিনাজপুর জেলার মতো একই অবস্থা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগেও। গত বছর কমিটি হলেও এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি ইউনিটটি। তেমনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি গত বছর হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।
গত বছর নতুন হওয়া নড়াইল এবং কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের মেয়াদ শেষের পথে থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি সংগঠনের দায়িত্বশীলরা।
জেলা থেকে উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়েও একই অবস্থা। সেখানে এক বছর মেয়াদ শর্তে কমিটি হয়, কিন্তু মেয়াদ শেষ হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি আলোর মুখ দেখে না।
জানতে চাইলে দিনাজপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর ইসলাম রাহুল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অনেকবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে চেয়েছি, কিন্তু স্থানীয় রাজনীতির অন্তর্কোন্দলের কারণে শেষ পর্যন্ত আর দেওয়া হয়নি।’
মেয়াদ শেষ হলেও কেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল করিম রুবেল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে দেবো।’
কমিটি হওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন হয় না, প্রতিবন্ধকতা কি-এ নিয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত সংগঠনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে ইচ্ছে করেই কমিটি ঝুঁলিয়ে রাখে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে দায়িত্ব বিকেন্দ্রীকরণ হয়, এর ফলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ক্ষমতা ভাগ হয়ে যায়। আবার কমিটি না হওয়া পর্যন্ত পদপ্রত্যাশীরা শীর্ষ দুই নেতার প্রতি বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল থাকেন। অর্থাৎ যতদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হবে ততদিন পুরো ক্ষমতা ধরে রাখের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
এছাড়া আরও একটি কারণ এক বছর মেয়াদি ছাত্রলীগের কমিটি দীর্ঘমেয়াদি করা। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করার অজুহাতে বছরের পর বছর পার করেন। বলা হয়ে থাকে, যারা অনেক দিন রাজনীতি করেছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে তাদের পদায়ন না করেই সম্মেলন করলে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে। এভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়েই সম্মেলন প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলে বছরের পর বছর পার করে দেন। অন্যদিকে স্থানীয় রাজনীতির প্রভাবও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কার পছন্দের ছাত্রনেতাকে কোন পদ দেওয়া হবে, তার লিস্ট যায় জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে। বিভিন্ন জেলা কমিটির দায়িত্বশীলরা বলছেন, নেতাদের কাছে মতামত চাই গিয়ে মাসের পর মাস তাদেরকে অপেক্ষা করতে হয়। পরে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে মূল্যায়ন করতে গিয়ে সময়ক্ষেপন হয়। যে কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে দীর্ঘসূত্রিতা কাজ করে।
সোহাগ-জাকির কমিটিতে ২০১৮ সালে ঢাকা জেলা উত্তর-দক্ষিণের কমিটি হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া যায়নি। একইভাবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ২০১৮ সালে কমিটি হলেও এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগর সভাপতি সাইদুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে জটলা সৃষ্টি হয়। আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত কমিটি দেওয়া যাবে বলে আশা রাখছি।’
চট্টগ্রাম জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হোসেন চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কমিটি প্রস্তুত হয়ে গেছে। শিগগিরই কমিটি দেওয়া হবে।’
দেখা গেছে, এক বছর মেয়াদি ছাত্রলীগের ইউনিট কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগে কমিটি দিয়েছে এমন নজির খুব একটা নেই। প্রায় সব কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেন।
এ নিয়ে কি ভাবছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ, জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য রাইজিংবিডিকে বলেন, যেখানে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, সেখানে দ্রুত কমিটি হয় এজন্য আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।
কমিটি হওয়ার পর দীর্ঘদিন কমিটি ঝুলিয়ে রাখা দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন তারা।
আরও পড়ুন :
পারভেজ/সাইফ
আরো পড়ুন