ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সংগঠনে ঢুকে পড়ছে অনুপ্রবেশকারী

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ১২ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১০:৪৩, ১২ নভেম্বর ২০২০
সংগঠনে ঢুকে পড়ছে অনুপ্রবেশকারী

ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটে বছরের পর বছর চলছে একই কমিটি দিয়ে। এতে নতুন নেতৃত্ব যেমন তৈরি হচ্ছে না, তেমনি সাংগঠনিক চেইনও ভেঙে পড়েছে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ‌্যে আছে ক্ষোভ, হতাশা। ছাত্রলীগের সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে রাইজিংবিডির জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এসকে রেজা পারভেজ তৈরি করেছেন পাঁচ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ পড়ুন এর চতুর্থ পর্ব।

কেন্দ্রের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের রাজনীতির দূরত্ব, যথাযথ সাংগঠনিক কমান্ডের অনুপস্থিতি আর গতিশীল রাজনীতির অনুপস্থিতি তৃণমূল ছাত্রলীগকে করে দিয়েছে স্থবির।  ভেঙে পড়েছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। এই সুযোগে সংগঠনে ঢুকে পড়ছে অনুপ্রবেশকারী। এতে ঐতিহ্য হারানোর সঙ্গে নতুন নেতৃত্ব তৈরিতেও ব্যর্থ হচ্ছে প্রাচীন এই ছাত্র সংগঠন।

জানা গেছে, ছাত্রলীগের জেলা ইউনিটগুলো কমিটি গঠনে বছরের পর বছর চলে যাওয়ার রীতি উপজেলা পর্যায়ে আরও ব্যাপক এবং বিস্তৃত। জেলা কমিটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গতিশীল না হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে উপজেলা ইউনিটগুলোতে। মাঠ পর্যায়ের মতো ঢাকার থানা ও ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটিগুলোরও একই অবস্থা। কোনো কোনো উপজেলার ছাত্রলীগের কমিটি ১৫-১৬ বছর পার করছে, কিন্তু নতুন কমিটি হয়নি। 

উপজেলার ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকে ছাত্র রাজনীতির পাঠ চুকিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। বিয়ে করেছেন, সন্তান আছে। অনেকে আবার ছাত্রলীগের পদে থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগেও নাম লিখিয়েছেন, হয়েছেন জনপ্রতিনিধি, কিন্তু ছাত্রলীগের শীর্ষ পদও ধরে রেখেছেন। 

পাবনার চাটমোহর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির বয়স ১২বছর। কমিটি শীর্ষ দুই পদের একজন বিয়ে করেছেন অনেক আগে। আছে সন্তানও। মাদারীপুর রাজৈর উপজেলায় কমিটি হয় না ১৫ বছর।  বগুড়ার ধুপচাচিয়া উপজেলার কমিটি নেই ৬ বছর। রাজশাহীর বাঘমারা এবং গাইবান্ধার কোনো উপজেলাতেই নেই ছাত্রলীগের কমিটি। চট্টগ্রামের বেশিরভাগ উপজেলায় কমিটি নেই। বগুরার ৪টি উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে ৪ বছর আগে। সেখানে বারবার সম্মেলন দেওয়ার কথা বলা হলেও কেন্দ্রের নির্দেশ আমলে নেওয়া হয়নি। উপজেলার চেয়ে আরও এগিয়ে জেলা ছাত্রলীগ। এক বছর মেয়াদী বগুড়ার জেলা কমিটি চলছে পাঁচ বছর। জেলা কমিটি মেয়াদই ফুরিয়েছে চার বছর আগে। পাবনার ভাঙুরা উপজেলা এবং ফদিপুরের বিভিন্ন উপজেলায় ৮ বছর কমিটি নেই। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কমিটি হয়েছিল ২০১২ সালে। লোহাগড়া পৌর কমিটির বয়সও হয়েছে ৮ বছর।

জানতে চাইলে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস রাইজিংবিডিকে জানান, তারা কমিটি করার অনেকবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের বিভাজনের কারণে বার বার ব‌্যর্থ হয়েছেন। আগামী শুক্রবার জেলা ছাত্রলীগের নেতারা উপজেলার নেতাদের নিয়ে বসবেন। সেখানে উপজেলাগুলোর কমিটি দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক কিছু হবে বলে প্রত‌্যাশা করেন তিনি।

পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শিবলী সাদিক এক বছর আগে ছাত্রলীগের পদ থেকে রিজাইন দিয়েছেন। তিনি বর্তমানে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। জেলা উপজেলা ছাত্রলীগের করুন পরিস্থিতির কথা জানিয়ে রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘সম্মেলন করতে যে কতবার চেষ্টা করেছি, তা গুনে শেষ করা যাবে না। বারবার দলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভক্তি দেখা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আর হয়নি। তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়াই পাইনি। উপজেলা ছাত্রলীগের পরিস্থিতি খুবই খারাপ।’

শিবলী সাদিক বলেন, ‘আটঘড়িয়া উপজেলা ৯ বছর কমিটি নেই। স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুেপর কারণে ৯ বছর ধরে চলছে আহ্বায়ক কমিটি। নতুন কমিটির উদ‌্য‌্যোগ নেওয়া হলেও বাধা আসে। আহ্বায়ক কমিটির কেউ এখন যুবলীগ করে, কেউ অন‌্য সংগঠন। আবার অনেকে ঢাকায় থাকেন, কোনো যোগাযোগ নেই। সম্মেলনের উদ‌্যোগ নেওয়া হলে স্থানীয় নেতারা বাধা দেয়।’

রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম ৭ বছর ধরে জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এখন তিনি আর এই পদে থাকতে চান না। এ নিয়ে কেন্দ্রে (শোভন-রব্বানীর কমিটির সময়ে) দরখাস্তও দিয়েছেন যাতে দ্রুত সম্মেলন দিয়ে বিদায় নিতে পারেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন।

রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘জেলা ছা্ত্রলীগের দীর্ঘদিন কমিটি হয় না। এটা আমি চাই না। অনেকে খারাপ বলে এতদিন পদে আঁকড়ে আছি। কিন্তু আমি তো থাকতে চাই না।’

জেলার ৯টি উপজেলা ছাত্রলীগের একটিরও কমিটি নেই জানিয়ে মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গোদাবাড়ি উপজেলার ১৪ বছর আগে কমিটি হয়েছে। এখনও চলছে। বারবার উদ‌্যোগ নিয়েছি কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা কোনো সহযোগিতা করেনি। বাঘমারা উপজেলা সম্মেলন করতে গেছে সংসদ সদস‌্যের কাছ থেকে বাধা এসেছে। শুধু রাজশাহী নয় সাড়া দেশের জেলা পর্যায়ে একই অবস্থা।’

তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, বর্তমানে দক্ষ, যোগ্য এবং মেধাবী নেতৃত্বের বদলে উঠে আসে অদক্ষ, সংগঠনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ নয় এবং স্বার্থপর নেতৃত্ব। এজন্য যেখানেই কমিটি হয় তা নিয়েই ঝামেলা তৈরি হয়। যোগ্য, জনপ্রিয় এবং সাংগঠনিক দক্ষ নেতৃত্বে আসলে এই সাংগঠনিক সমস্যা তৈরি হতো না। তাদের মতে, জেলার ছাত্র রাজনীতি গতিশীল হলে উপজেলার রাজনীতিও গতিশীল হতো। 

উপজেলা চেয়ে আরও ভয়াবহ ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে। ছাত্রলীগের এসব ইউনিটে কবে কমিটি হয়েছে তা ভুলেই গেছেন অনেক এলাকার নেতাকর্মীরা। কমিটি গঠনের এই দীর্ঘসূত্রিতা ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িতদের হতাশ করছে প্রতিনিয়ত। 

এ সম্পর্কে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য রাইজিংবিডিকে বলেন, জেলা কমিটিগুলো দ্রুত করে উপজেলায় হাত দেওয়ার চিন্তা রয়েছে।

আরও পড়ুন
কমিটি হয়, পূর্ণাঙ্গ হয় না

মাইম্যান থিওরিতে কমিটি আটকে থাকে বছরের পর বছর

মেয়াদ এক বছর, চলছে ৯ বছর!

পারভেজ/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়