ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

তিন কোম্পানির ব্যাংক হিসাব জব্দ বহাল রাখতে চায় বিএসইসি

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৭, ২৯ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৮:৪৭, ২৯ নভেম্বর ২০২০
তিন কোম্পানির ব্যাংক হিসাব জব্দ বহাল রাখতে চায় বিএসইসি

বিভিন্ন অনিয়মের কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, তুং হাই নিটিং ও সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদের সব ব্যাংক হিসাব আরও কিছু দিন জব্দ রাখতে চায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই তিন কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়েছে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায়  চলতি বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে কোম্পানি তিনটির চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি দেয় বিএসইসি।

বিএসইসি জানিয়েছে, গাজীপুরের কোনাবাড়ির বাইমাইলে ‘সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামে কোনো রেজিস্টার্ড অফিস খুঁজে পায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফলে কোম্পানির তহবিল তছরুপের আশঙ্কা আছে।

সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ও তুং হাই নিটিংয়ের পরিচালকরা ঘোষণা ছাড়াই শেয়ার বিক্রি করেছেন। পাশাপাশি মাসিক ভিত্তিতে দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানি দুটি শেয়ারহোল্ডিং প্রতিবেদন দাখিল করছে না। ফলে কোম্পানি দুটি বিএসইসির  আইন লঙ্ঘন করছে।

সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর হওয়া পর্ষদ সভায় ওই বছরের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ। ওই বছরে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ১৫তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদন দেয় শেয়ারহোল্ডাররা। ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি লভ্যাংশ বিতরণ করা হবে, এমন তথ্য নিশ্চিত করে বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসইকে চিঠি দেয় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তবে শেয়ারহোল্ডারা বিএসইসিতে অভিযোগ করেন যে, তারা সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের কোনো লভ্যাংশ পাননি।

শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ নিয়ে প্রতারণার বিষয়টি সুরাহার জন্য সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদসহ রেজিস্টার্ড আফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে বিএসইসি। সেখানে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাউকেই পায়নি এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গাজীপুরের কোনাবাড়ির বাইমাইলে ‘সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামে কোনো রেজিস্টার্ড অফিস খুঁজে পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে কোম্পানির তহবিল তছরুপের আশঙ্কা আছে বলে মনে করছে বিএসইসি।

বর্তমানে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের নামে সাতটি ব্যাংক হিসাব আছে। এর মধ্যে আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকে দুটি, সিটি ব্যাংকে তিনটি এবং প্রাইম ও এনআরবি ব্যাংকে একটি করে ব্যাংক হিসাব আছে। এছাড়া, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালকদের মোট ১০টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। কোম্পানির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসানের নামে ইস্টার্ন ব্যাংকে চারটি, পরিচালক হাসান মোহাম্মদ তানভিরের নামে আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকে দুটি, ইউরো দেশ কনজুমার নামে (পরিচালক এনামুল কবির ও মো. নুরুদ্দিন দ্বারা পরিচালিত) আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকে তিনটি এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস নামে (শহীদুল ইসলাম পরিচালিত) একটি ব্যাংক হিসাব আছে।

এর আগে চলতি বছরের ২১ জুলাই সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান, দুই পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখতে বিএসইসির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। পাশাপাশি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষা করার পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) কোম্পানির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় কমিশন।

আরও জানা গেছে, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ তিন পরিচালক আইন না মেনে শেয়ার বিক্রি করেছেন। এছাড়া, কোম্পানি দুটি নিয়ম অনুযায়ী কমিশন ও স্টক এক্সচেঞ্জে প্রতিবেদন দাখিল করেনি। ফলে চলতি বছরের ২৯ জুলাই বিএসইসির ৭৩৩তম কমিশন সভায় কোম্পানি দুটির পরিচালকদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ফলে সার্বিক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোম্পানি দুটির জব্দ করা ব্যাংক হিসাব পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি।

এ বিষয়ে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গত ২১ জুলাই থেকে সুহৃদের ব্যাংক হিসাব জব্দ রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি প্রতি মাসে রিভিউ করা হচ্ছে। লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়টি উচ্চ আদালত থেকে সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব জব্দ থাকবে।’

এদিকে, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ও তুং হাই নিটিং কর্তৃপক্ষর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদের টেলিফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বিএসইসি কোম্পানিগুলোর পর্ষদের ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখার সিদ্ধান্ত ইতোপূর্বে নিয়েছে। তবে ব্যংক হিসাব জব্দের মেয়াদ আরও বাড়ানো হয়েছে কি না, তা বলতে পারছি না। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

ঢাকা/এনটি/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়