ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

প্রকল্পে ভারতীয় ঋণের অর্থছাড়ের গতি বেড়েছে

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১১, ৮ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৩:১২, ৮ ডিসেম্বর ২০২০
প্রকল্পে ভারতীয় ঋণের অর্থছাড়ের গতি বেড়েছে

২০১০ সালে দেওয়া প্রথম এলওসি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি ডলার এর মধ্যে ইতোমধেই ভারত প্রকল্পের আওতায় অর্থছাড় করেছে ৬১ দশমিক ৮ কোটি ডলার। প্রথম এলওসিতে অর্থছাড় বাকি আছে মাত্র ১৮ দশমিক ২ কোটি ডলার। দ্বিতীয় ধাপে ২০০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তিসই করেছে ভারত। এর মধ্যে অর্থছাড় হয়েছে ৯ দশমিক ২ কোটি ডলার।

সাবেক ভারতীয় প্রয়াত অরুণ জেটলির সফরে তৃতীয় ধাপের লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় আরও ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তিসই হয়েছে। এর মধ্যে অর্থছাড় হয়েছে ৫ দশমিক ৪ মিরিয়ন মার্কিন ডলার। তিন ধাপে ভারতীয় ঋণের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা (এক ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে)। প্রকল্পের আওতায় এসব ঋণে ভারত অর্থছাড় বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।

ইআরডি সূত্র জানায়, প্রথম এলওসির আওতায় ১৫টি প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১২টি প্রকল্প ইতোমধেই সম্পন্ন হয়েছে। বাকি তিনটি প্রকল্প চলমান আছে। ফলে ভারতীয় ঋণে বেশি অর্থছাড় হয়েছে প্রথম এলওসির আওতায়।  দ্বিতীয় ঋণে মোট ১৫টা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুইটা প্রকল্প ইতোমধেই সম্পন্ন হয়েছে।  চলমান আছে ১৩ প্রকল্প। চলতি সময় থেকেই দ্বিতীয় ঋণে অর্থছাড় বৃদ্ধি পাচ্ছে।  এছাড়া তৃতীয় ঋণের আওতায় মোট ১৬ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।  এর মধ্যে ৫টি প্রকল্প ইতোমধেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুমোদন দিয়েছে।  সামনে ৩  প্রকল্পের টেন্ডার হবে। ফলে ২০২১ সালের মার্চ থেকে তৃতীয় ঋণে ভারত অর্থছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে বলে জানায় ইআরডি।

সূত্র জানায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে ভারতের নমনীয় ঋণের ছাড় হয়েছিল মাত্র ১ দশমিক ২৯ কোটি ডলার। বর্তমানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে অর্থছাড় বেড়ে হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৫ কোটি ডলার। ফলে ভারতীয় ঋণে অর্থছাড়ের পরিমাণ বেড়েছে কয়েকগুণ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫৩, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৩৩, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৩৯ কোটি ডলার অর্থছাড় হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৪৭, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৭ দশমিক কোটি ডলার অর্থছাড় করেছিল। এরপর থেকেই ঋণ ছাড়ের প্রবণতা বেড়ে চলেছে। ৪ দশমিক ৭ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারত অর্থছাড় করেছে ১৩ দশমিক ৭৭ কোটি ডলার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডি এশিয়া উইংয়ের যুগ্ম সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বলেন, প্রকল্পের আওতায় ভারতীয় ঋণে অর্থছাড়ের পরিমাণ বেড়েছে মূলত প্রথম এলওসির আওতায়। প্রকল্পের পরিচালকেরা প্রকল্পের ডিপিপি যত দ্রুত প্রস্তুত করবে ততই অর্থছাড় বাড়বে। 

ইআরডি সূত্র জানায়, ২০১০ সালে প্রথম এলওসির আওতায় ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি ছিল ভারতের। ১৫টি প্রকল্পের আওতায় এ অর্থ দেওয়ার কথা ছিল।  ২০১০ সালের ৭ আগস্ট ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ইআরডির ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়। পরে এই এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ থেকে ২০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেয় ভারত।  প্রথম এলওসিতে অতিরিক্ত অর্থ হিসেবে আরও ৬ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণ দেয়।

দ্বিতীয় এলওসির আওতায় ১৬টি প্রকল্পের অধীনে ভারত ২০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে। ২০১৬ সালের ৮ মার্চ এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছিল। এই অর্থ ব্যয় করবে বাংলাদেশ। প্রকল্পের ডিপিপির কাজ চূড়ান্ত হওয়ায় অর্থছাড় বেড়েছে দ্বিতীয় এলওসিতে। তৃতীয় এলওসির আওতায় প্রকল্পের কাজ শুরু হলে অর্থছাড়ের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে দাবি ইআরডির। কারণ তৃতীয় এলওসিতে ঋণেরে পরিমাণও বেশি ৪৫০ কোটি ডলার। তৃতীয় এলওসির অর্থে বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৬টি প্রকল্প বাছাই করা হয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ অন্য স্থানে নেওয়ার অবকাঠামো উন্নয়ন, পায়রাবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত দ্বৈতগেজ রেলপথ নির্মাণ, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নত করা, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা, মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট থেকে রামগড় পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করা, মিরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর হয়ে সরাইল পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে এক লাখ এলইডি বাল্ব সরবরাহ প্রকল্প এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

হাসিবুল/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়