‘ভালো কাজে খাবার মেলে’
কেউ অন্ধকে রাস্তা পার করছেন, কেউ ওষুধের দোকান কিংবা রাস্তায় ময়লা পরিষ্কার করেছেন। যারা এসব ভালো কাজ করছেন তাদের জন্য প্রতিদিন রাতে বিশেষ খাবারের পেয়ে থাকেন। মূলত এ খাবারের আশায় তারা এসব ভালো কাজ করছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
সোমবার (৭ ডিসেম্বর) রাত ৮টায় কমলাপুর পুরনো বাজার সংলগ্ন ফুটপাতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সারিবদ্ধভাবে ছিন্নমূল, ভাসমান মানুষেরা লাইন ধরে বসে আছেন। হাতে বিশেষভাবে তৈরি খাবারের প্যাকেট। অনেকেই খাবার খাচ্ছেন। ‘ভালো কাজের হোটেল’ নামে বেসরকারি সংগঠনের ভলান্টিয়াররা তাদের খাবার ও পানি দিচ্ছেন।
কথা হয় কমলাপুরের ফুটপাতে থাকা রায়হানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই হোটেলে ভালো খাবার দেয়। এজন্যই ভালো কাজ করি। যার জন্য আমি এক অন্ধকে রাস্তা পার করেছি।’
নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘প্রায় দিনই রাতে এসে এখানে রাতের খাবার খাই। এজন্য সারাদিন চিন্তায় থাকি কিভাবে একটা ভালো কাজ করা যায়। আজও শাজাহানপুর সংলগ্ন একটি ওষুধের দোকান পরিষ্কার করেছি। ’
এছাড়া রাতে খাওয়ার জন্য অনেকেই কাউকে সারাদিনে ভিক্ষা বা বোঝা ট্রেনে যা পান, সেই টাকা দিয়ে কাউকে উপকার করেন। কেউ আবার কমলাপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় কিছু হারিয়ে গেলে তা খুঁজে থানা কিংবা ওই ব্যক্তিকে দিয়ে দেন।
উদ্যোক্তারা জানান, রাতের খাবারের টাকার জোগাড় করতে মাদক বিক্রি কিংবা ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ করত ভাসমান মানুষগুলো। তবে রাতের খাবারের নিশ্চয়তা পেয়ে তারা এসব অপরাধ থেকে অনেকাংশে ফিরে এসেছেন।
‘ভালো কাজের জন্য আহার বিনিময়’- এই শ্লোগানকে সামনে রেখে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সিনিয়র ভলেন্টিয়ার রুবেল আহমেদ হিমেল। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে খাবারের প্রধান শর্তই হচ্ছে সারাদিনে যেকোনো একটি ভালো কাজ করা। ’
তিনি আরও বলেন, করোনার প্রথম থেকেই বিশেষ এই খাবারের ব্যবস্থা করেছি। বিশেষ করে রাতে যেন তারা এক বেলা পেট ভরে খেতে পারে সে প্রচেষ্টা হচ্ছে। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা ৪৬০ জন তরুণ স্বেচ্ছায় এ কাজ করছেন। প্রতিদিন এজন্য ১০ টাকা করে চাঁদা দেয়। চাঁদার টাকা দিয়ে নিজেরা রান্না করে প্রতিদিন প্যাকেটে খাবার সরবরাহ করে। কমলাপুর ছাড়াও প্রতি বুধবার গুলিস্তান, বিমানবন্দর স্টেশন, রবীন্দ্রসরোবরে রাতের বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
রুবেল আহমেদ হিমেল বলেন, এসব মানুষ ভালো কাজ করবে এমনটি আমরা কখনোই ভাবতে পারিনি। তারা এখন শুধু ভালো কাজ করছে না, খাবারের নিশ্চয়তা পেয়ে অপরাধও ছেড়ে দিয়েছে।
জানা গেছে, সংগঠনের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা প্রতিদিন কমলাপুরে ছিন্নমূল, অসহায়, ভাসমান মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করায় স্টেশন এলাকায় চুরি, ছিনতাই কিংবা মাদকাসক্তের আনাগোনা অনেকাংশে কমে গেছে। প্রতি রাতে খিচুড়ির সঙ্গে একটি করে ডিম দেওয়া হয়। এছাড়া অন্যান্য দিনে তেহারি মুরগির মাংসসহ নানা ধরনের মাছের খাবার সরবরাহ করা হয়।
মাকসুদ/সাইফ
আরো পড়ুন