ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘এত দ্রুত পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানো শেষ হবে, ভাবতেও পারিনি’

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১২, ১১ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৮:৫৫, ১১ ডিসেম্বর ২০২০
‘এত দ্রুত পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানো শেষ হবে, ভাবতেও পারিনি’

বাংলাদেশিদের আবেগ-অনুভূতির নাম পদ্মা সেতু। স্বপ্নের সেই সেতু এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান। পাঁচ বছরের চেষ্টায় স্বপ্ন হলো বাস্তব। তাই পদ্মা নদীর দুই পাড়ের লোকজনসহ সারা দেশের মানুষ খুশির জোয়ারে ভাসছেন। 

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। প্রথম স্প্যান বসানো হয়েছিল ২০১৫ সালে। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর বসানো হয়েছে সর্বশেষ (৪১তম স্প‌্যান)। দৃশ্যমান হয়েছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার লম্বা দেশের দীর্ঘতম ও সবচেয়ে ব‌্যয়বহুল সেতু।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পদ্মা সেতুর ৪১তম স্প্যান বসানো হয়। এর আগে বুধবার বিকেলে মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে স্প্যানটিকে ভাসমান ক্রেনে করে নির্ধারিত পিলারের কাছে নিয়ে রাখা হয়েছিল।

মূল সেতু নির্মাণে কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতু হলো এই পদ্মা সেতু। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও স্বপ্নের সেতু এটি। তিনি যে সাহস নিয়ে এ সেতুর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, সেটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। দেশের নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেটা প্রমাণ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রায় সাত বছর কাজ এগোয়নি। স্থান নির্ধারণের পর অর্থায়ন জটিলতায় যায় আরও পাঁচ বছর। কথিত দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। ঠিক পাঁচ বছর পর সব স্প্যান বসানোর মাধ্যমে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান।’

প্রকল্প পরিচালক জানান, পদ্মা পাড়ের মানুষ মনে করেন, সেতু চালু হলে কৃষিপণ‌্য পরিবহনে সুবিধা হবে। কৃষিপণ‌্যের সঠিক দাম পাওয়া যাবে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। পদ্মা সেতু তাদের জন্য আশীর্বাদ।

নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের বলেন, ‘মূল পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি প্রায় ৯১ শতাংশ। ২০২২ সালের জুন মাসে পদ্মা সেতু চালু হবে বলে আশা করছি। গত দুই মাসে সেতুতে আটটি স্প্যান বসিয়ে রেকর্ড গড়েছেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা।’

পদ্মা পাড়ের শিমুলিয়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর পর থেকেই দেখছি, দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। এত তাড়াতাড়ি পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানো শেষ হবে, এটা ভাবতেও পারিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর ফলে আজ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও খুশি। কারণ, এই সেতু চালু হলে এর উপকার আমরাও ভোগ করতে পারব। যাতায়াত সহজ হবে।’

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন‌্য।

দোতলা পদ্মা সেতুর নিচের অংশে রেলওয়ে স্ল্যাব ও ওপরের অংশে রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হচ্ছে। মূল পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। নদীশাসন কাজে ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়েছে ৫ হাজার ৬৭৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

১৯৯৯ সালে সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটির প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। পরে ২০০৩-০৫ সালে জাইকার মাধ্যমে পরিচালিত সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পটির মূল ডিপিপি গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি ২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের মধ্যেই বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন করা হয়। পরে মেয়াদ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নদীশাসনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম কাঙ্ক্ষিত হারে বাস্তবায়ন না হওয়ায় সময়সীমা ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কয়েক ধাপে এ প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা করা হয়েছে।

ঢাকা/হাসিবুল/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়